হালাল উপার্জনের প্রয়োজনীয়তা
অর্থ-সম্পদের প্রতি ভালোবাসা মানুষের স্বভাবজাত প্রবণতা। প্রত্যেক মানুষ চায় সম্পদ জমা করতে। যার মাধ্যমে দুনিয়ায় বিশাল অট্টালিকার মালিক হবে। প্রকৃত পক্ষেই দুনিয়াতে জীবন-যাপনে অর্থ-সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, অন্যায় ও অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়তে হবে। সম্পদ পুঞ্জিভুত করতে হেন অন্যায় অপকর্ম করে বেড়াতে হবে। হ্যাঁ, জীবিকা অর্জনের জন্য মানুষকে হালাল উপার্জন করতে হবে। যার নির্দেশনা কুরআন এবং হাদিসে সবিস্তার আলোচনা রয়েছে। তার কিছু তুলে ধরা হলো-
সম্পদ অর্জনের ভালোবাসা সম্পর্কে কুরআনে সুস্পষ্ট ভাষায় ইরশাদ হচ্ছে- ‘এবং তোমরা ধন-সম্পদকে প্রাণভরে ভালোবাস।’ (সুরা ফজর : আয়াত ২০) সম্পদের প্রয়োজন যেহেতু রয়েছে, তাই আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় সম্পদ অর্জন প্রশংসনীয় কাজ। হালাল উপায়ে সম্পদ অর্জনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ করো। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না, নিঃসন্দেহে শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৬৮)
অপরদিকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিজ হাতের উপার্জিত খাবারই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট। আল্লাহর নবি হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতের অর্জিত রিজিক গ্রহণ করতেন।’ (বুখারি)
অন্যায় ও অবৈধ পন্থায় উপার্জনকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল হারাম বা নিষিদ্ধ করেছেন। কেননা অন্যায়ভাবে উপার্জিত সম্পদ ভক্ষণে মানুষের সারা জীবনের ভালো কাজগুলো বরবাদ হয়ে যায়। আল্লাহর রহমত, রবকত ও মাগফিরাত থেকে হতে হয় বঞ্চিত। আখিরাতের জীবন হয় ধ্বংস। এমনকি হারাম উপার্জন ভক্ষণে মানুষের কোনো আমল-ইবাদাতও কবুল হবে না।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে সাদ! পবিত্র খাবার গ্রহণ করো, তবে তোমার দোয়া কবুল হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ। বান্দা যখন তার মুখে হারাম উপায়ে কোনো খাবার গ্রহণ করে, আল্লাহ ৪০ দিন তার কোনো আমল কবুল করেন না। আর যে ব্যক্তি বেড়ে ওঠে অবৈধ সম্পদ আর হারাম উপার্জিত অর্থে, তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উত্তম।’
অবৈধ জীবিকা দ্বারা যেমন ইবাদাত কবুল হবে না, তেমনি অবৈধ সম্পদ তথা সুদ, ঘুষ, চুরি, হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যাবতীয় অন্যায় পথে উপার্জিত সম্পদের দান-অনুদানও আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া নামাজ আর চুরি ও আত্মসাতের সম্পদের সদকা কবুল হয় না।’ (মুসলিম)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন, ‘একজন মানুষ লম্বা পথ সফর করে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। এরপর সে না ঘুমিয়ে রাত জেগে নামাজ পড়ে এবং আল্লাহর জিকির করে দোয়া করে, হে আল্লাহ! তুমি আমার গোনাহ মাফ করে দাও। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, কাপড়-চোপড় হারাম। তার সবকিছুই হারাম। সুতরাং ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত শরীরে, না ঘুমিয়ে সে যত মনোযোগ সহকারেই দোয়া করুক না কেন, আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে না।’ (মিশকাত)
সুতরাং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর উচিত- আয়-ইনকাম তথা উপার্জনের ক্ষেত্রে আমাদের সাবধান হওয়া। যদি আমরা একনিষ্ঠ মনে হালাল উপার্জন করতে চাই তবে আল্লাহ তাআলা ওপর অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, মহান প্রভু আমাদের উত্তম জীবিকা দান করবেন। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পৃথিবীর কোনো প্রাণীই তার রিজিক শেষ হওয়ার পূর্বে মারা যাবে না। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে সৎ পথ অবলম্বন করো। তাকদিরে লেখা রিজিক আসতে বিলম্ব হলেও অসৎ পথে উপার্জন করো না। আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই আল্লাহর কাছ থেকে হালাল জীবিকা পাওয়া সম্ভব। (মিশকাত) আল্লাহ তাআলা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে হালাল রিজিক উপার্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে ই-মেইল করুন : [email protected]
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/আরআইপি