ফিতরা আদায় ইবাদতের অংশ
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় আর ক’দিন পরই আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করবো, ইনশাল্লাহ। বিশ্বময় মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সেভাবে হয়তো ঈদ উদযাপন করা সম্ভব হবে না; যেভাবে মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর ঈদ উদযাপন করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা যেভাবে চাইবেন সেভাবেই আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করব। আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রার্থনা করব এবং ঈদের আগেই ফিতরা আদায় করব।
ঈদুল ফিতর উদযাপনের আগে আমাদের সবাইকে অবশ্যই ফিতরা আদায় করতে হবে। আমাদের ফিতরা যদি এখনই আদায় করি তাহলে তা ঈদের আগেই সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের ক্ষেত্রে সহজতর হবে এবং গরীবদের ঈদ আনন্দে তা কাজে লাগবে।
কেননা ঈদুল ফিতরের ফিতরা প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব এমন কি ঈদের দিন সূর্য উদয়ের আগে ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্যও ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। এ ফিতরা ঈদের নামাজের আগেই আদায় করা উচিত। কেননা গরীব রোজাদার যেন ফিতরার অর্থ দিয়ে ঈদের খুশিতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
ফিতরা দেওয়া কোনো অনুগ্রহ নয়। করং এটা আমাদের ইবাদতের অংশ। এমনকি যে ব্যক্তিকে ফিতরার সাহায্য দেয়া হয়, তার নিজের পক্ষ থেকেও ফিতরা দেয়া কর্তব্য। সকলের অংশগ্রহণের ফলে সদকাতুল ফিতরের ফাণ্ডটি একটি সাধারণ ফাণ্ডে পরিণত হয়। যার ফলে এ থেকে যারা উপকৃত হয় তাদের মনে হীনমন্যতার ভাব সৃষ্টি হয় না। সাদকাতুল ফিতর সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো- এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সামর্থ্যবান সবার ওপরই এটা আবশ্যক।’ (বুখারি)
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা পালনকারীর জন্য সাদকাতুল ফিতর আদায় অপরিহার্য করে দিয়েছেন। যা রোজা পালনকারীর অনর্থক, অশ্লীল কথা ও কাজ পরিশুদ্ধকারী এবং অভাবী মানুষের জন্য আহারের ব্যবস্থা। যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করবে, তা সাদকাতুল ফিতর হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। আর যে ঈদের নামাজের পর আদায় করবে তা অপরাপর (নফল) সাদকা হিসেবে গৃহীত হবে।’ (আবু দাউদ)
ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের গরীব ভাই-বোনদের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারি এবং তাদেরকেও ঈদের আনন্দে অন্তর্ভূক্ত করি। যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ধন-সম্পদ দিয়েছেন তারা আল্লাহর রাস্তায় এবং গরীব অসহায়দের প্রতি যতই দান করুক না কেন এতে কিন্তু তার ধন-সম্পদে কমতি দেখা দিবে না বরং বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
আমরা সবাই জানি, ইসলামে দান-খয়রাতের এবং গরীব অসহায়দের সাহায্যের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহর রাস্তায় দানের গুরুত্ব যে কত বেশি তা পবিত্র কুরআনের দিকনির্দেশা থেকেই বুঝা যায়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের একাধিক স্থানে উল্লেখ করেছেন-
‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় আল্লাহর পথে খরচ করে, যারা ক্রোধ দমন করে এবং মানুষকে মার্জনা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালবাসেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৪)
এই আয়াতে একটি বিষয় আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট করেছেন যে, শুধু সুখে থাকলেই যে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে হবে তা কিন্তু নয়, বরং সচ্ছল-অসচ্ছল সব অবস্থাতেই আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে হবে। সব অবস্থায় যদি আমরা খরচ করি তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ভালবাসবেন।
আল্লাহ তাআলা বারবার আমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, আমরা যেন তার পথে খরচ করি, কিন্তু দেখা যায় আমরা দুনিয়ার অপ্রয়োজনীয় কাজে ঠিকই অর্থ সম্পদ ব্যয় করছি অথচ আল্লাহর রাস্তায় দেয়ার ক্ষেত্রে যেন একেবারই অপারগ। তাতে বেশ অনিহা প্রকাশ পায়। এর কারণ হলো- শয়তান মানুষের মনে কুমন্ত্রণা যোগায় যে, তুমি যদি আল্লাহর রাস্তায় দান করো তাহলে তোমার ধন-সম্পদ ফুরিয়ে যাবে আর তুমি দরিদ্র হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দান করলে সম্পদ কমে না।’ (মুসলিম)
তাই একথা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে কেউ গরীব হবে না বরং আল্লাহ তাকে অনেক গুণ বৃদ্ধি করে তা ফেরৎ দেবেন।
সুতরাং আমরা যদি আল্লাহর জান্নাত পেতে চাই এবং তার শান্তির ছায়ায় আশ্রয় নিতে চাই তাহলে আমাদেরকে তার পথে খরচ করতে হবে। গরীব অসহাদেরকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের কষ্ট-অভাব দূর করতে হবে।
বিশেষ করে বর্তমান মহামারি করোনার কারণে খেঁটে খাওয়া এবং দরিদ্ররা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, আমাদের উচিত হবে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ফিতরা আদায়ের তাওফিক দান করুন। গরিব-দুঃখীর সহযোগিতায় তাদের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস