বিশ্বনবি যেভাবে মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতেন
ইসলামের সর্বোত্তম কাজ হচ্ছে দ্বীনের পথে দাওয়াত। আর আহ্বানকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তারাও শ্রেষ্ঠ যারা মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে। বিশ্বনবি নিজে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করতেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত দেয়ার এ পদ্ধতিও ঘোষিত হয়েছে কুরআনে। মানুষের উদ্দেশ্যে দাওয়াতের এ পদ্ধতি জানিয়ে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। তিনি কীভাবে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করতেন?
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার দাওয়াতি কর্মনীতি ও পদ্ধতি জানিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন-
قُلْ هَٰذِهِۦ سَبِيلِىٓ أَدْعُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا۠ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِىۖ وَسُبْحَٰنَ ٱللَّهِ وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ
‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন- এটা (ইসলাম) আমার পথ। আমি জেনে-বুঝেই আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও (আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়)। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (সুরা ইউসুফ : আয়াত ১০৮)
দুনিয়াতে তারাই শ্রেষ্ঠ; যারা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে। ন্যয়ের পথে ডাকবে আর অন্যায়ের বাধা দেবে। সে ঘোষণাও এসেছে কুরআনের একাধিক বর্ণনায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
তোমরাই হলে সর্বোত্তম জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে। আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলজনক হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১০)
কীভাবে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করতে হবে। সে পদ্ধতি ও নীতির কথাও ওঠে এসেছে কুরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
আপন পালনকর্তার (দিকে) পথের প্রতি আহ্বান করুন; জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে আর তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন উত্তম পন্থায়। নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। আর তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১২৫)
তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতে ছিল না কোনো উগ্রতা। তিনি কারও প্রতি জোর-জবরদস্তি করতেন না। এটা ঠিক যে, তিনি নিজের বিশ্বাস সম্পর্কে অন্যের কাছে ছিলেন সুস্পষ্টভাষী। আর নিজের বিশ্বাসের সুস্পষ্ট ঘোষণাসহ তিনি অন্যদের আল্লাহর দিকে আহ্বান করতেন। হাদিসে পাকে এভাবেই দাওয়াতি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি।
তিনি তাঁর উম্মতকে দাওয়াতের বিধিনিষেধ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। দাওয়াতি কাজ না করলে আল্লাহর আজাব আসতে পারে মর্মে সতর্ক করেছেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে নিষেধ করবে নতুবা তোমাদের ওপর শিগগিরই আল্লাহর গজব নাজিল হবে। এরপর তোমরা দোয়া করতে থাকবে ঠিকই কিন্তু তোমাদের দোয়া কবুল করা হবে না।’ (তিরমিজি)
আল্লাহর দিকে ডাকা হচ্ছে সবচেয়ে বড় নবুয়তি কাজ। এ কাজের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবি। আবার যারা এ কাজ থেকে বিরত থাকতে তাদের ওপর আসমানি আজাব আসবে বলেও সতর্ক করেছেন বিশ্বনবি। সে সময় মানুষের কোনো দোয়াও কবুল হবে না।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা। সত্য ও ন্যয়ের ওপর থেকে অন্যকে সত্যের দিকে আহ্বান করা এবং পাপ ও অন্যায় থেকে বিরত থেকে অন্যকে তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর আজাব থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস