পুলসিরাত কী? কারা এটি পার হবেন?
পুলসিরাত; জান্নাতে পৌঁছানোর একমাত্র পথ। এটি ভিন্ন দুইটি ভাষার দুইটি শব্দ একসঙ্গে পরকালের একটি অবস্থার বর্ণনার মাধ্যমে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ একটি শব্দে পরিণত হয়েছে। পুলসিরাত কী? কী ঘটনার সঙ্গে এটি সম্পর্কিত?
পুলসিরাতের পরিচয়
‘পুল’ শব্দটি ফারসি। এর অর্থ সেতু। ‘সিরাত’ আরবি শব্দ। এর অর্থ রাস্তা বা পথ। জাহান্নামের উপর নির্মিত সেতুকে পুলসিরাত বোঝানো হয়েছে। হাশরের ময়দানে জান্নাত ও জাহান্নাম হাজির করা হবে। জাহান্নামের ওপর স্থাপন করা হবে পুলসিরাত। এর শেষ প্রান্তে থাকবে জান্নাত। এটি হাশরের ময়দান থেকে জান্নাত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন পুলসিরাত সম্পর্কে আল্লাহর দিদার ও সিরাতের বর্ণানায় এসেছে- ‘অতপর পুলসিরাতকে এনে জাহান্নামের উপরে রাখা হবে। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! পুলসিরাত কি? তিনি বললেন, (পুলসিরাত) বড় পিচ্ছিল হবে; তার উপর আঁকশি ও আঁকড়া থাকবে। আরো থাকবে প্রশস্ত কাঁটালো যার কাঁটাগুলো হবে বাঁকানো। এ ধরণের গাছ নাজদ এলাকায় হয় যাকে ‘সাদান’ তথা কাঁটাদার গাছ বলা হয়। মুমিন তার (পুলসিরাতের) উপর দিয়ে চোখের পলকে, বিদ্যুতের ন্যায়, বাতাসের মত ও উন্নত মানের দ্রুততগামী ঘোড়ার মতো দৌড়ে পার হয়ে যাবে। কিছু নিরাপদে নাজাতপ্রাপ্ত হবে আবার কেউ আঁচড় খেয়ে নাজাত পাবে। আর কেউ খামচি খেয়ে জান্নামে পতিত হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ইমাম গাজালি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘পুলসিরাত হলো জাহান্নামের ওপর প্রলম্বিত সেতু, যা তলোয়ারের চেয়ে ধারালো হবে এবং চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম হবে। কাফির ও পাপাচারীরা সেখানে পদস্খলিত হয়ে নিচে পতিত হবে। সেখানে জাহান্নাম অবস্থিত থাকবে। আর মহান আল্লাহ ঈমানদারদের পা সুদৃঢ় রাখবেন। ফলে তারা চিরস্থায়ী নিবাসে পৌঁছে যাবে।’ (কাওয়াইদুল আকায়িদ)
ইমাম আশআরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘পুলসিরাত হলো জাহান্নামের ওপর স্থাপন করা দীর্ঘ সেতু। মানুষ তার আমল অনুযায়ী তা পার হবে। মানুষের আমলভেদে পুলসিরাত পার হওয়ার সময় চলার গতির ক্ষেত্রেও তারতম্য হবে।’ (রিসালাতুন ইলা আহলিস সাগার)
কারা পুলসিরাত পার হতে পারবে
শুধু মুমিনগণই একমাত্র পুলসিরাত পার হতে পারবেন। আর কাফের ও মুশরেকদের প্রত্যেকটি দল দুনিয়ায় যে সব মূর্তি ও শয়তান ইত্যাদি বাতিল উপাস্যের আনুগত্য ও ইবাদত করত, সে সব উপাস্য ও নেতাদের সঙ্গে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। এ সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তথায় পৌঁছবে না। এটা আপনার রবের সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত। অতপর আমি পরহেজগারদের মুক্তি দেব আর জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেব।’ (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৭১-৭২)
আয়াতের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, প্রত্যেক মানুষকেই জান্নাতে যাওয়ার জন্য এ অন্ধকারাচ্ছন্ন ভয়াবহ পথ (পুলসিরাত) অতিক্রম করতে হবে। কারণ সেটাই হবে জান্নাতে পৌঁছানোর একমাত্র পথ। প্রত্যেক মানুষকেই এ পুল অতিক্রম করার পরীক্ষায় সম্মুখীন হবেন।
যারা বিনা বাঁধায় তা অতিক্রম করতে পারবে তারাই সফল। কেননা পুলসিরাতের পরও জান্নাতের অবস্থান। আল্লাহ তাআলা পুলসিরাত অতিক্রমে মুত্তাকিদের মুক্তি দেবেন। আর যারা সীমা লঙ্ঘনকারী অত্যাচারী তাদের অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবেন।
অতপর বাকি থাকবে যারা প্রকাশ্যভাবে আল্লাহর ইবাদত করত। চাই তাতে তারা সত্য হোক বা মুনাফেক (কপট) হোক। এদের জন্যে জাহান্নামের উপর পুলসিরাত রাখা হবে। আর মুনাফেকদের সেজদা করা ও মুমিনদের নূর থেকে বঞ্চিত করে মুমিনগণ থেকে আলাদা করা হবে।
মনে রাখতে হবে
সব মানুষকেই পুলসিরাতের সম্মুখীন হতে হবে। মুমিনরাই সম্মানের সঙ্গে দ্রুতগতিতে তা পার হতে পারবে। তারপর পর্যাক্রমে কর্ম অনুযায়ী পুলসিরাত পার হবে। আর যারা অবাধ্য অবিশ্বাসী তারা পুলসিরাত পার হতে পারবে না। তারাই হবে জান্নাত থেকে বঞ্চিত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পুলসিরাত পার হওয়ার তাওফিক দান করুন। মুত্তাকি বান্দা হিসেবে নিজেকে তৈরির তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ