গজব থেকে রক্ষা পেতে কুরআনের নির্দেশনা
বিশ্ব আজ আতঙ্কগ্রস্ত। বিশ্বের শক্তিধর সব রাষ্ট্রও ভীতসন্ত্রস্ত। আসমানি গজব ও শাস্তি বৃষ্টির ফোটার মতো বর্ষিত হচ্ছে। প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। বলা যায় সবাই আজ মহাবিপদের সম্মুখীন। একের পর এক বালা-মুসিবত কেন ধেয়ে আসছে? এসব নিয়ে কি কখনও ভেবে দেখেছি?
এসব অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠার কারণ পার্থিব নয় বরং আসমানি নিয়তি এর পেছনে কার্যকর। এসবের মূল কারণ হলো- পবিত্র কুরআনের অমিয় বাণী বিশ্ব জগতের কাছে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তো দুনিয়ার ওপর আল্লাহ তাআলা এসব বালা-মুসিবত চাপিয়ে দিয়েছেন।
এসব বিপদ-মুসিবত থেকে একমাত্র তিনিই আমাদের রক্ষা করতে পারেন; যিনি আমাদের কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে তার রুদ্ররূপ বিশ্বের ওপর কিছুটা প্রকাশ করেছেন।
আজ বিশ্বমানবতা আল্লাহপাকের স্মরণ থেকে দূরে চলে গেছে এবং আল্লাহ তাআলাকে ভুলতে বসেছে। অনেকে তো আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বই অস্বীকার করে। অন্যদিকে যারা এতে বিশ্বাস রাখে তারাও ধর্মের নামে ধর্ম প্রবর্তকদের আনীত সত্যিকার শিক্ষামালা বিকৃত করে এমন সব মনগড়া ব্যাখ্যা করছে, যা সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে আলো-বাতাসকে পর্যন্ত বিষাক্ত করে ফেলছে।
আমাদের অন্যায় কৃতকর্মের মাত্রা আজ এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে, শরীরের পুরো অঙ্গ যেন পাপে ভরপুর। ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি যা-ই করছি না কেন সব কিছুতেই যেন অন্যায়কেই প্রাধান্য দিচ্ছি। এমনকি মুখে যা বলছি তাও মিথ্যা বলছি।
আল্লাহর ভয়ে যখন দুই রাকাআত নামাজ আদায় করছি সেখানেও দুনিয়ার চিন্তায় মগ্ন, কখন নামাজ শেষ করব আর বাহ্যিকতার পূজায় মত্ত হবো। এই যে একের পর এক মহামারি ও বালা-মুসিবতের সম্মুখীন হচ্ছি এর মূল কারণ- আমার কৃতকর্ম। আমার কৃতকর্মই এসব মহামারিকে আহ্বান জানাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও জলে বিশৃঙ্খলা ছেয়ে গেছে। এর পরিণামে তিনি তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তির স্বাদ তাদের ভোগ করাবেন, যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।’ (সুরা আর-রূম : আয়াত ৪১)
যেহেতু আমাদের পাপ সর্বত্র ছেয়ে গেছে, তাই বিভিন্ন প্রাকৃতিক আজাব তথা করোনা ভাইরাসের আক্রমণ বলুন বা ঘূর্ণিঝর সিডর, বুলবুল বা ভূমিকম্প যা-ই বলুন; সবই মূলত আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মানবগ্রহের জন্য সতর্ক সংকেত।
সে কারণেই আল্লাহ তাআলা আমাদের সতর্ক করেছেন যে, হে আমার বান্দারা! তোমরা সতর্ক হও, তোমরা অসৎ পথ পরিত্যাগ করে সৎপথে চল। তোমরা সহজ সরল পথ অবলম্বন কর। বিষয়টিকে এভাবেও বলা যায়, সমাজ ও দেশের বেশির ভাগ মানুষ যখন পাপ, ব্যভিচার, অন্যায় এবং নিজ প্রভুকে ভুলতে বসেছে তখনই আল্লাহ তাআলা তার পক্ষ থেকে কোপাগ্রস্ত হয়ে তার রুদ্ররূপ প্রকাশ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আর তোমাদের কৃতকর্মের কারণেই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে। অথচ তিনি অনেক কিছুই উপেক্ষা করেন।’ (সুরা আশ-সুরা : আয়াত ৩০)
মানব প্রকৃতি বিকৃত হচ্ছে। আমাদের কৃতকর্মের কারণে আল্লাহর রুদ্ররূপ বারবার প্রকাশিত হচ্ছে। বালা-মুসিবত যখন ঐশী হয় তখন তা থেকে রক্ষা করার মালিকও তিনিই। আজ আমরা কেউ বলতে পারবো না যে, আমরা নিরাপদ। কেবল সেই বলতে পারে যার হৃদয় পবিত্র, যিনি ধন, মন, প্রাণ সব কিছুই আল্লাহর জন্য বিলিয়ে দেয় এবং প্রতিটি নিঃশ্বাসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার গুণগানে নিয়োজিত থাকে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের বার বার সতর্ক করছেন এরপরও যদি আমাদের হুশ না হয় তাহলে আমরাও কি আদ ও সামুদ জাতিসহ অন্য জাতিকে যেভাবে তাদের অপকর্মের জন্য তিনি ধ্বংস করেছেন, তারই আহ্বান করছি না তো?
তিনি যেহেতু রহমানুর রাহিম; তিনি চান না যে, তার বান্দারা যেন কোনোভাবে কষ্টে নিপতিত হয়। তাই তিনি বারবার সতর্ক করছেন; তার বান্দারা যেন সঠিক পথে পরিচালিত হয়। সব ধরণের বালা-মুসিবত থেকে রক্ষার এখন একটিই মাত্র রাস্তা খোলা আছে আর তাহলো-
- দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দায় পরিণত হওয়া;
- আল্লাহর অধিকার এবং বান্দার অধিকার যথাযথ আদায় করা;
- নিজেকে সংশোধন করা এবং
- নিজ আত্মাকে ধুয়ে মুছে পবিত্র করা।
আমরা যারা নিজেদের কৃতকর্মের কথা স্মরণ করে যন্ত্রণায় ভুগছি আমাদের জন্য আশার বাণী হচ্ছে যে, ‘দয়াময় প্রভু আমাদের নিরাশ হতে বারণ করেছেন। তিনি আমাদের সুপথে ফিরে আসার জন্য ক্ষমার সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন-
‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সব গোনাহ মাফ করবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৫৩)
বিশ্ব যেখানে আতঙ্কগ্রস্ত এরপরও যদি আমার হৃদয় আল্লাহর ভয়ে কেঁপে না ওঠে; আল্লাহর রহমতের আশা না করে; তবে কবে নাগাদ আমার চেতনা জাগ্রত হবে? আর কবেই বা আল্লাহ তাআলা এসব বালা-মুসিবত দূর করবেন?
একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন কখন কোন আলোকে এসব বালা-মুসিবত দূর করবেন। সে মহান রবের কাছেই ক্ষমা চাই। বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রার্থনা করি। কুরআনের দিকনির্দেশনা মেনে চলি।
হে দয়াময় প্রভু! আমরা যদি আপনার নির্দেশের অমান্যকারী হই; তবে হয়তো আপনি নতুন মানবগ্রহ সৃষ্টি করবেন, যা করতে আপনি সক্ষম। যারা আপনার নির্দেশাবলি মেনে চলবে। কেননা আপনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
সুতরাং আপনি আমাদের আপনার ক্ষমার চাদরে আবৃত করুন। আমাদের কুরআনের নির্দেশাবলি বোঝার ও মানার তাওফিক দিন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস