জীবনে সুখ ও আনন্দ পেতে মুমিনের করণীয়
সুখ-শান্তি ও আনন্দময় জীবনের জন্য ইসলামি জীবনাদর্শ মেনে চলার বিকল্প নেই। দুনিয়া ও পরকালীন জীবনে সুখ-শান্তি ও আনন্দময় করতে কুরআন সুন্নায় অনেক উপদেশ রয়েছে। এসব উপদেশ পালনের মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সুখ ও শান্তি।
সুখী জীবন লাভে করণীয়
- ইসলামি জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা। কেননা ইলম ছাড়া আমল অনেক সময় মানুষকে গোমরাহ করে দেয়।
- ঈমানের আলোয় নিজেকে আলোকিত করা। কেননা সঠিক ঈমানই মুমিনের মুক্তির উপায়।
- সব সময় তাওবাহ-ইসতেগফারের মধ্যে সময় অতিবাহিত করা। দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণে তাওবাহ-ইসতেগফারের বিকল্প নেই।
- সব সময় আল্লাহর স্মরণ ও সাহায্য লাভে প্রয়োজনীয় দোয়া ও জিকির অব্যাহত রাখা। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার প্রতি রাগ হন।
- সামর্থ অনুযায়ী মানুষের উপকার করা এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করা। কেননা যে ব্যক্তি অন্যের উপকার করে সেই ব্যক্তিই সেরা।
- বিপদাপদ ও সঙ্কটে মনে সাহস বজায় রাখা। আর আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
- বিপদাপদ ও সঙ্কটে ধৈর্য ধারণ করা। ধৈর্য মানুষকে সফলতার পথ দেখায়। মনে রাখতে হবে, কোনো কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্ত ব্যতিত সংঘটিত হয় না।
- দুনিয়ার সব পাপাচার থেকে নিজেকে দূরে রাখা। পাপাচার মানুষের সব ভালো কাজকে ধ্বংস করে দেয়।
- হিংসা, বিদ্বেষ ও প্রতিশোধ নেয়ার মনোভাব পরিহার করা। হিংসা-বিদ্বেষ ও আক্রমণাত্মক সব ধরনের কাজ থেকে নিজের মনকে পরিচ্ছন্ন রাখা ঈমানের একান্ত দাবি।
- হতাশামুক্ত জীবন যাপন করা। জীবন ক্ষণস্থায়ী। সুতরাং এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে বেদনা, কষ্ট, হতাশায় না থেকে আনন্দঘন পরিবেশে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। আর জীবনকে আনন্দময় করতে সব বিষয়ে তার ওপর আস্থা রাখা। আল্লাহ তাআলাই বান্দার প্রতি রহমত দান করে জীবনকে আনন্দময় করে দেন।
- সব সময় বেশি কথা, বেশি ঘুম, বেশি খাওয়া পরিহার করা। যে কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করা। বিশেষ মনের স্বাধীনতায় নিজেকে ছেড়ে না দিয়ে কথা ও কাজে নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি। এ কথা মনে রাখা যে, সব সময় মধ্যম পন্থা অবলম্বন শরীর ও মন উভয়ের জন্য উপকারী।
- অতিলোভ না করা। কেননা লোভ মানুষের দুঃশ্চিন্তাকে বাড়িয়ে দেয়। তাই নিজেকে অল্পে সন্তুষ্ট রাখার পাশাপাশি পরিমিত বা মিতব্যয়ী জীবনযাপনে তৈরি করা।
- বৈধ পন্থায় আনন্দ-বিনোদন করা। নিজ স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের পর্যাপ্ত সময় দেয়া। তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হওয়া। মনে রাখতে হবে, হারাম পন্থায় সাময়িক সুখ অনুভূত হলেও তাতে প্রকৃত সুখ নেই। তাতে নেই মহান আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি। এ কারণেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি জীবনকে বিষাদময় করে দেয়।
- সব সময় সৎলোকদের সঙ্গে চলাফেরা করা। সৎলোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করা। অসৎ লোকের সঙ্গ ত্যাগ করা।
- সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা। সুগন্ধি ব্যবহার করা।
- সুস্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখা। বিশেষ করে শারীরিক প্রশান্তির জন্য ভারসাম্যপূর্ণ মেদহীন শীরর গঠণে সচেষ্ট থাকা। জীবনকে সুখী ও আনন্দময় করতে এসবের বিকল্প নেই।
বিশেষ করে
- নিজের জন্য যে কাজটি উপযুক্ত ও নিরাপদ সেটি আন্তরিকতার সঙ্গে করা। অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকা। কর্ম ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে সম্পন্ন করা। কাজগুলো যেন হয় সুশৃঙ্খল, সাজানো-গোছানো।
- কোনোভাবেই আজকের কাজ পরের দিনের জন্য রেখে না দেয়া। যথা সময়ে যথাযথ কাজ করার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সুখ-শান্তি ও আনন্দ। এর বিপরীত হলেই তা হয়ে ওঠে মানুষের হতাশা ও দুঃশিন্তার কারণ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জীবনকে সহজ করতে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারলেই হাহাকার থাকবে না। সুখী জীবন-যাপনে বেশি বেশি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা পোষণ করো তবে আমি তোমাদেরকে আরও দেব। পক্ষান্তরে তোমরা যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে জেনে রাখ, আমার শাস্তি কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)
হে আল্লাহ! তুমি সবাইকে এ কাজগুলো করার শক্তি দাও, সব সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দাও। সব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই মানুষের আশ্রয়স্থল।
এমএমএস/জিকেএস