যে ৩ ব্যক্তির জন্য জিম্মাদার বিশ্বনবি
জান্নাত ও নেয়ামত মুমিনের জন্য সেরা উপহার। দুনিয়ায় মানুষের ছোট ছোট কিছু আমলের বিনিময়ে নেয়ামত ও জান্নাতের জামিনদার হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি। মুমিনদের আমল অনুযায়ী জান্নাতের নেয়ামত লাভের বর্ণনা দিয়েছেন। জানিয়েছেন তারা কারা আর কী তাদের সেই গুণাবলী?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৩ শ্রেণির মানুষের জন্য জান্নাতের সুবিশাল ঘরের জামিনদার হবেন বলেছেন। যে গুণের কারণে তারা এ পুরস্কার লাভ করবেন, হাদিসের বর্ণনায় তা এভাবে ওঠে এসেছে-
হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
- ‘যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত (বিষয়) হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর
- যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর
- যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ (আবু দাউদ)
উল্লেখিত হাদিসে তিন শ্রেণির ব্যক্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আবার তাদের মর্যাদাও আলাদা। জান্নাতের নেয়ামত লাভের ক্ষেত্রেও রয়েছে ব্যবধান। হাদিসে উল্লেখিত গুণ ও প্রাপ্তিগুলো হলো-
- ঝগড়া পরিহার করা
এ আমলের বিনিময়ে জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার হবেন বিশ্বনবি। এসব মুমিন কারণ থাকা সত্ত্বেও ঝগড়া না করে ধৈর্য ধারণ করেছেন এবং সভ্য ব্যবহার করেছেন। তাদের জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার দরবারে অসভ্য ব্যক্তির স্থান নেই। অসভ্য ব্যক্তিও জান্নাতে যাবে না বলেও হাদিসে ঘোষণা এসেছে-
হজরত হারিসাহ ইবনু ওয়াহ্ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জাওয়ায ও জাযারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি বলেন, জাওয়ায হলো ‘অসভ্য (ব্যক্তি)।’ (আবু দাউদ)
- মিথ্যা পরিহার করা
তামাশার ছলেও মিথ্যা বলেন না। এমন মিথ্যা পরিহারকারী ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মাঝখানে এক ঘরের দামিনদার হবে বিশ্বনবি। এমনিতেই তারা মিথ্যা বলেন না। এমনকি হাসি-রস তথা তামাশা করেও মিথ্যা বলে না। কারণ বিশ্বনবি বলেছেন, ‘মিথ্যা হচ্ছে সব পাপের জননী।’
- উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া
ভালো চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে ঘর পাওয়ার জামিনদার হয়েছেন বিশ্বনবি। কেননা উত্তম চরিত্রের মানুষ অনেক মর্যাদার অধিকারী। হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- ‘নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনের) রোজা পালনকারী ও (রাতের) তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ব্যক্তির সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে।’ (আবু দাউদ)
হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মিজানের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছুই নেই।’ (আবু দাউদ)
সুতরাং হাদিসের বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, যারা সব সময় সচ্চরিত্রের অধিকারী, হাসি-রস বা তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না এবং যথাযথ কারণ থাকার পরও ঝগড়া করে না। তাদের জন্য জান্নাত ও জান্নাতি নেয়ামত অবধারিত। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন মুসলমানের জন্যই এ ঘোষণা দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত তিনটি গুণের অধিকারী হওয়ার মাধ্যমে হাদিসে ঘোষিত মর্যাদা সম্পন্ন জান্নাত ও নেয়ামত লাভের তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ