ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

সুন্দর পোশাক পরতে বিশ্বনবি যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:৩৭ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

নিজ নিজ সামথ্য ও মর্যাদা অনুযায়ী মানানসই সুন্দর ও মার্জিত পোশাক পরা ইসলামের নির্দেশ। তবে পোশাক পরার ক্ষেত্রে এমনটি করা যাবে না, যাতে অহংকার কিংবা দাম্ভিকতা প্রকাশ পায়। আবার ক্ষমতা বা মর্যাদার চেয়ে বেশি উচ্চ মূল্যের পোশাক পরার মাধ্যমে অতিরিক্ত সম্পদ ব্যয়ের পাপ থেকে বিরত থাকাও জরুরি।

তবে এমনটি যেন না হয় যে, সামর্থ্য বা মর্যাদার তুলনায় খুব নিকৃষ্ট ও নিম্ন মানের পোশাক পরে সহায়-সম্বলহীন মানুষের মতো চলাফেরা করা। অন্যের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হওয়া। বরং সব সময় নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী রুচিপূর্ণ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর কাপড় পরা।

মর্যাদা অনুযায়ী সুন্দর পোশাক পরার ব্যাপারে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। যুগে যুগে ইসলামিক স্কলাররাও এ বিষয়টির প্রতি বিশেষ সতর্ক ছিলেন। হাদিসের বর্ণনা ও ইসলামের ইতিহাসই এ বিষয়ের সাক্ষী। তাহলো-

- হজরত আবু আহওয়াছ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাবা তার নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করেন যে, আমি একবার প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে খুব নিম্নমানের কাপড় পরে উপস্থিত হলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন-
তোমার কী কোনো ধন-সম্পদ আছে?
আমি বললাম- জ্বী, আছে।
তিনি (আবার) জিজ্ঞাসা করলেন- কী ধরনের ধন-সম্পদ আছে
আমি বললাম- আল্লাহ তাআলা আমাকে উট, গরু, বকরি, ঘোড়া, গোলাম ইত্যাদি সব ধরনের ধন-সম্পদই দান করেছেন।
(তখন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘আল্লাহ তাআলা যখন তোমাকে সব ধরনের ধন-সম্পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন তখন তোমার শরীরেও তাঁর দান ও অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ থাকা উচিত।’ (মিশকাত)
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যখন বান্দাকে সব ধরনের নেয়ামত দ্বারা প্রাচুর্য দান করেছেন, তখন নিঃস্ব ভিক্ষুকদের বেশ ধারণ করার যৌক্তিকতা কোথায়? এটা মহান আল্লাহর নেয়ামতের নাশোকরী ছাড়া কিছুই নয়।

- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মনোরম ও উত্তম কাপড় পরা কি গৌরব ও অহংকার হবে? তিনি বললেন, ‘না’, এটা তো সৌন্দর্য আর আল্লাহ তাআলা সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন।’ (ইবনে মাজাহ)

- অন্য বর্ণনায় তিনি আরও বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নামাজ আদায়ের জন্য উত্তম কাপড় পরবে (পরিপূর্ণ পোশাক পরে সেজে-গুজে যাবে)। ওই ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি যোগ্য যে, মানুষ তাঁর দরবারে উপস্থিতির সময় (নামাজের সময়) ভালোভাবে সেজে-গুজে যাবে।’ (মিশকাত)

- হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য) আমাদের বাড়িতে এলেন। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন যে, সে ধূলাবালিতে মিশ্রিত এবং তার মাথার চুলগুলো এলোমেলোভাবে বিক্ষিপ্ত। তিনি বললেন- ‘তার কাছে চিরুনিও নেই যে, যা দ্বারা সে তার মাথার চুলগুলো ঠিক করে নিতে পারে?
অন্য এক ব্যক্তিকে দেখলেন, যে সে ময়লা কাপড় পরে আছে। তিনি বললেন, তার কাছে কি এমন কোনো জিনিস (সাবান, সোডা ইত্যাদি) নেই, যার দ্বারা সে কাপড়গুলো ধুয়ে পরিস্কার করে নিতে পারে?’ (মিশকাত)

সুন্দর পোশাক পরায় কি অহংকার প্রকাশ পায়?
সাধারণ সুন্দর পোশাক পরায় অহংকার বা দাম্ভিকতা প্রকাশ পায় না। মর্যাদার অতিরিক্ত পোশাক পরায় ইসলাম দিকনির্দেশনা দেয় না বরং মর্যাদা অনুযায়ী সুন্দর ও মানানসই পোশাক পরার নির্দেশনা দেয়। হাদিসের একটি বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’

এক সাহাবি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! প্রত্যেক ব্যক্তিই তো এটা চায় যে, তার কাপড় সুন্দর হোক, তার জুতা জোড়া উত্তম হোক। (এটাও কি অহংকারের অন্তর্ভূক্ত?)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘আল্লাহ স্বয়ং সুন্দরকে ভালোবাসেন। (অর্থাৎ উত্তম পোশাক পরা অহংকারের অন্তর্ভূক্ত নয় বরং তা সৌন্দর্যের অন্তর্ভূক্ত।) প্রকৃতপক্ষে অহংকার হলো সত্যের পরোয়া না করা আর অন্যকে হীন ও নিকৃষ্ট-অধম মনে করা।’ (মুসলিম)

সুতরাং তাকওয়ার নামে পুরাতন ছেঁড়া বা তালি দেয়া কাপড় পরা ইসলামের শান ও মান নয়। আর সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরাও তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির খেলাপ নয়। এমন ধারণা মারাত্মক ভুল।

সুফি সাধকদের মতে উত্তম পোশাক
প্রায় ৮৪২ বছর আগে মরক্কোর ইসলামিক স্কলার ও বিখ্যাত সুফি সাধক ইমাম আবুল হাসান আলি ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল জাব্বার আল হাসানি ওয়াল হুসাইনি আশ-শাজুলি ‘শাজুলিয়া তরিকা’র প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল উচ্চ মানের। তিনি অত্যন্ত উত্তম মানের পোশাক পরতেন। দুনিয়া ত্যাগী এক সুফি তাঁকে উত্তম পোশাক পরা দেখে প্রতিবাদ করে বসলেন। বললেন যে- আল্লাহওয়ালাদের এতো মূল্যবান জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরিধান করার কী প্রয়োজন?

হজরত আবুল হাসান আলি শাজুলি বললেন- উত্তম, ভাই! এটা হলো মহান প্রতাপশালী, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। আর তোমার এ সহায়-সম্বলহীনতা হলো ভিক্ষুকের ছবি। তুমি নির্বাক অবস্থার দ্বারা মানুষের কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করছ। প্রকৃতপক্ষে ছেঁড়া-ফাটা, পুরাতন, তালি দেয়া নিম্নমানের কাপড় পরার মধ্যে তাকওয়া বা পরহেজগারি সীমাবদ্ধ নয়। আবার অত্যন্ত মূল্যবান গৌরবময় কাপড় পরার মধ্যেও নয়।
সত্য কথা হলো-

মানুষ তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের ক্ষমতা ও মর্যাদা অনুযায়ী মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে সমতা রক্ষা করে চলবে। সহায়-সম্বলহীনতার বেশ ধারণ করে নিজের আত্মাকে অহংকারী হওয়ার সুযোগ দেবে না। আর চমক লাগানো মূল্যবান পোশাক পরে গৌরব ও অহংকার দেখাবে না।

হাদিসের বর্ণনা ও যুগে যুগে প্রকৃত সুফিসাধকদের জীবনাচারে সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরার ব্যাপারে রয়েছে সুন্দর ও উত্তম দিকনির্দেশনা। যাতে পোশাক পরার ব্যাপারে নেই কোনো কৃপনতা। আবার অহংকার করারও কোনো সুযোগ নেই।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরা। ইসলামের দিকনির্দেশনা মেনে চলা। সামর্থে্যর বাইরে উচ্চ মূল্যের পোশাক না পরা আবার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নিম্ন মানের পোশাকও না পরা। বরং সর্বাবস্থায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্দর পোশাক পরার ক্ষেত্রে হাদিসের দিকেনির্দেশনার ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ

আরও পড়ুন