কঠিন গোনাহ থেকে সহজে ক্ষমা লাভের উপায়
আল্লাহর রহমতের কাছে কোনো গোনাহই বড় নয়। বান্দা যদি কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে কোনো বড় গোনাহের কাজ করেই ফেলে তবে কি তাতে সে হতাশ হয়ে যাবে? সঠিকভাবে ফিরে আসতে হাল ছেড়ে দেবে? তাহলে কঠিন বা বড় গোনাহকে মুছে দিতে কী করবে বান্দাহ?
‘না’, বান্দা কোনো অবস্থায়ই হতাশ হবে না; গোনাহ যত বড় ও কঠিন হোক না কেন আল্লাহর রহমতের কাছে তা একেবারেই তুচ্ছ। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মারাত্মক গোনাহ করে তবে তার উচিত আল্লাহর হুকুম পালন করা এবং বেশি বেশি তাঁর রহমতের আশা করা।
বান্দাহ তার কঠিন বা বড় গোনাহ থেকে মুক্তি লাভে মহান আল্লাহর অন্যতম হুকুম পালনে নিজেকে নিয়োজিত করবে। মানুষ যত বড় গোনাহ করবে, তত বেশি ও বড় ইবাদতে আত্মনিয়োগ করলেই আল্লাহ ওই বান্দার গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। আর তাহলো নামাজ।
আল্লাহর হুকুমের মধ্যে নামাজ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ হুকুম। মানুষ যত বড় গোনাহ-ই করুন না কেন, যদি সে একনিষ্ঠ মনে গোনাহ মুক্তির আশায় নামাজে আত্মনিয়োগ করে তবে আল্লাহর অফুরন্ত রহমত ও ক্ষমা লাভ ওই বান্দার জন্য একেবারেই সহজ। আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। হাদিসের বর্ণনায় তা প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে,
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি এক নারীকে চুম্বন করে বসে। পরে সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বিষয়টি (তার কৃতকর্মের কথা) জানায়।
তখন আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেন, ‘দিনের দু’প্রান্তে সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের প্রথম অংশে নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। নিশ্চয় ভালো কাজ পাপাচারকে মিটিয়ে দেয়।’ (তখন) লোকটি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি কি শুধু আমার বেলায় প্রযোজ্য? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতের জন্যই।’ (বুখারি)
নামাজসহ সব ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষের গোনাহ দূরীভূত হওয়ার প্রমাণে অন্য হাদিসে এসেছে-
হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন একদিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমাদের কে ফেতনা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য স্মরণ রেখেছ? হজরত হুজাইফা বললেন, ‘তিনি (প্রিয়নবি) যেমন বলেছিলেন, হুবহু তেমনভাবে আমি তা স্মরণ রেখেছি। হজরত ওমর বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী স্মরণ রাখার ব্যাপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছ। আমি বললাম-
‘(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন) মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশিদের ব্যাপারে যে ফেতনায় (গোনাহে) পতিত হয়, নামাজ, রোজা, দান-সাদকা, (ন্যয়ের) আদেশ, (অন্যায়ের) নিষেধ তা (গোনাহ বা ফেতনা) থেকে দূরভীত করে দেয়।’ (বুখারি)
সুতরাং যখনই কোনো গোনাহ বা খারাপ কাজ সংঘটিত হয়ে যায়, তখনই নামাজ পড়ার মাধ্যমে তার কাফফারা আদায় করা উত্তম। কেননা রোজা রাখা, দান-সাদকা করাসহ অন্যান্য আদেশ ও নিষেধ থেকে নামাজ পড়া অনেক সহজ।
সুতরাং হতাশা নয়-
মুমিন মুসলমান যখনই কোনো বড় গোনাহ বা অন্যায় কাজে জড়িয়ে যাবে। আর বোঝার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, মহান আল্লাহ বান্দার সব বড় বড় গোনাহকে ক্ষমা করে দেবেন। পাপাচার থেকে হেফাজত করবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গোনাহ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায় করে তা থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার সব গোনাহ থেকে হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। গোনাহমুক্ত জীবন-যাপন করে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ