মুহাম্মাদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে অনলাইনে সমালোচনার ঝড়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বিশ্বনবির মর্যাদা, সম্মান ও আলোচনাকে সবার উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ বিষয়গুলো ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
- وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
‘আর আমি আপনার আলোচনাকে সুউচ্চ করেছি।’ (সুরা আলাম নাশরাহ : আয়াত ৪)
- وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭)
- وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
‘আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা জানে না।’ (সুরা সাবা : আয়াত ২৮)
ফ্রান্সসহ বিশ্বের যেসব দেশ ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে এসব ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছে, এতে তাদের দীনতা, অজ্ঞতা ও অসহায়ত্বই প্রকাশ পায়। আর মুসলিমদের কাছে এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় যে, বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত-সুন্নাহ তথা সুন্দর ও অতুলনীয় আদর্শগুলো তুলে ধরা। যার প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী মানুষ জানতে পারবে বিশ্বমানবতার জন্য কেমন ছিলেন বিশ্বনবি।
পশ্চিমা বিশ্ব যান্ত্রিক উন্নতির দিকে এগিয়ে গেলেও সভ্যতার শিখরে পৌছতে ব্যর্থ হয়েছে। মুসলিম উম্মাহ বর্তমানে বিপর্যস্ত ও পর্যুদস্ত হলেও ইসলাম বিদ্বেষীদের ঘৃণ্য আক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। এর একমাত্র কারণ, ইসলাম, কুরআন ও বিশ্বনবির সুমহান আদর্শ বুকে ধারণ করে মুসলমান। যে কুরআন ও নবির আদর্শ অন্ধকার জগত থেকে মুমিন মুসলমানকে দেখায় আলোর পথ।
মুসলিম উম্মাহকে বিপথগামী করতে, বিশ্বের বুকে তাদের মনোবলকে ভেঙে দিতেই যুগে যুগে ইসলাম বিদ্বেষীরা কখনো ইসলামের উপর আক্রমণ করেছে। আবার কখনো বিশ্বনবির ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ করে চালিয়েছে ঘৃণ্য অপপ্রয়াস। এ থেকেই প্রমাণিত ইসলাম, কুরআন ও বিশ্বনবির আদর্শ চিরন্তন সত্য ও এর বিবরণ যর্থার্থ।
ফ্রান্সের জন্য আফসোস!
ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত দেশটি তাদের যথাযথ অবস্থান ধরে রাখতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড বরাবরই দেশটির মুসলিমদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে চলছে। কষ্ট দিচ্ছে মুসলিম উম্মাহকে। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে তাদের এ ব্যঙ্গ চিত্র দেশটির দেয়ালে দেয়ালে টানানো তাদের এই ধৃষ্টতা যেন ছাড়িয়ে গেছে আগের সব মুসলিম বিদ্বেষ।
অথচ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত উদার ও ক্ষমা প্রদর্শনকারী ছিলেন; তা মক্কা বিজয়ের ঘটনা থেকেই প্রমাণিত। ইসলাম বিদ্বেষীরা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জন্মভূমি থেকে যথেষ্ট কষ্ট দিয়ে হিজরত করতে বাধ্য করেছিলেন। অথচ মক্কা বিজয়ের পর বিশ্বনবি ক্ষমার এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি সবাইকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেন। যাতে সবাই ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেশটিতে মুসলিমদের ওপর দমন-নিপীড়নের ঘটনা উঠে আসছে। ফলে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে বিশ্ব মুসলিম। বাংলাদেশের ইসলামি মতাদর্শে বিশ্বাসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরাসহ বিশ্বজুড়ে উঠছে সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড়। তাদের প্রতিবাদের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
সম্প্রতি ডেনমার্কের এক নওমুসলিম এমপি মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ (Joram van Klavere) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি ফ্রান্সে বিশ্বনবিকে ব্যঙ্গ করে কার্টুন প্রকাশের বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর প্রতি শান্তির আহ্বান তুলে ধরেন-
> মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (Joram van Klavere), এমপি, নেদারল্যান্ডস
ফ্রান্সে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ করায় ডাচ নওমুসলিম এমপি মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন-
‘বিশ্বনবি ইতিহাসের এমনই একজন মহামানব ছিলেন, যিনি একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান, শিক্ষক, সামরিক প্রশাসক এবং আল্লাহর প্রেরিত দূত তথা রাসুল ছিলেন। তিনি কোটি কোটি মুসলমানের নয়নমনি।
ফ্যান্সের বিতর্কিত ম্যাগাজিন শার্লি হেবদো বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম কার্টুন প্রকাশ করে শুধু বিশ্বনবিকেই অপমান করেনি বরং কোটি কোটি মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে ও অনুভূতিতে আঘাত করেছে, অপমান করেছে।
এমপি আব্দুল্লাহ (Joram van Klavere) আরও লেখেন, ‘আমি জানি, তিনি যদি এখন বেঁচে থাকতেন; তবে তিনি অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতেন। তিনি তাঁর ক্ষমা করার অসাধারণ গুণ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতেন। কেননা আল্লাহ তাআলা তাকে সর্বেোচ্চ জ্ঞান দান করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যঙ্গ চিত্র আঁকা কার্টুনিস্টদের বিরুদ্ধে রাগের মাথায় কোনো ক্ষতিকর কার্যকলাপ না করে ধৈর্যধারণ করা উচিত। আর কার্টুনিস্টদের এ অপরাধমূলক কাজের দায়ভার মহান আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন ডেনমার্কের এ নওমুসলিম এমপি।
তিনি আহ্বান জানান, বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান আদর্শ ও শিক্ষা মানুষের কাছে আরও বেশি বেশি তুলে ধরতে হবে। তাদের মাঝে বিশ্বনবির আদর্শ ও দাওয়াত ব্যাপকভাবে পৌছে দিতে হবে। আমি যদি অমুসলিম হতাম। যদি আল্লাহ আমাকে ইসলামের জন্য কবুল না করতেন। তাদের বলুন, কে ছিলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাদের দেখান, কি শিখিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর সম্পর্কে জানতে তাদের দাওয়াত দিন। তিনি বিশ্বমানবতার জন্য আর্শীবাদস্বরূপ প্রেরিত হয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘অবশেষে মনে রাখবেন, ইসলামের আলো দুনিয়ার প্রতিটি কোনা কোনায় পৌছে যাবে ইনশাআল্লাহ। বিশ্বের কোনো শক্তিই এটাকে থামাতে পারবে না। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আলোর মশাল দিয়েছেন। যা দিয়ে বিশ্বমানবতাকে আলোকিত করতে হবে। কিছু মানুষের মাঝে পার্থক্য থাকতে পারে!’
> আব্দুল্লাহ আল ফারুক, অনুবাদক ও লেখক
ফ্রান্সের ঘটনায় একটুও ভালো লাগছে না।
মাঝে মাঝে মনে হয়, কী হবে এ সব ছাইপাশ বইপত্রের পেছনে ছুটে! নামুসে রিসালাতের জন্যে যদি ক্ষুদ্র এই জীবনটা নযরানা হিসেবে পেশ করতে না পারি, তাহলে কোন মুখে নিজেকে আশেকে রাসূল দাবি করব! কিয়ামতের ময়দানে যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেন, তোমার জন্যে আমি দান্দান মুবারক শহিদ করেছি; আমার ইজ্জত রক্ষার জন্যে তুমি কী করেছো! তখন কী উত্তর দেব?
তিনি আরও লিখেছেন-
প্রিয় ইসলামি শীর্ষ নেতৃবৃন্দ,
আপনারা দয়া করে আগামী শুক্রবারের অপেক্ষায় থাকবেন না। অনতিবিলম্বে সবগুলো ইসলামি দল এক প্লাটফর্মে এসে ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করুন। বিশ্বের সকল মুসলিম দেশ নিজ দেশে অবস্থিত ফরাসি এম্বেসি ঘেরাও করুক। সকল মুসলিম দেশ ফরাসি পণ্য বর্জন করুক। ওয়াইসি জরুরি বৈঠক ঘোষণা করে নিন্দা প্রস্তাব দিক। মুসলিম দেশগুলো একযোগে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিন্দা জানাক।
প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন বন্ধ করতে অবশ্যই ফ্রান্সকে বাধ্য করতে হবে।
> আলী হাসান তৈয়ব, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট
জেনে নিন ফ্রান্সে কী হচ্ছে
গেল ৩০ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের ম্যাগাজিন শার্লি এবদো’র সবশেষ সংস্করণের প্রচ্ছদে প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে ব্যঙ্গ করে আঁকা ১২টি কার্টুন ছাপা হয়। এর পক্ষকাল পরে ফ্রান্সের একজন স্কুল শিক্ষক ক্লাসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মহানবীকে নিয়ে ব্যঙ্গ কার্টুন প্রদর্শন করেন। সেখানকার মুসলিম কমিউনিটি এর বিরোধিতা করে। একজন ইমাম মসজিদ থেকে এর বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রতিবাদের ডাক দেন।
এর মধ্যে গত শুক্রবার ওই শিক্ষক চেচেন এক যুবকের ছুরিকাঘাতে হত্যা হয়। তাকে সেখানেই গুলি করে হত্যা করা হয়। তারপর থেকে ফ্রান্সের জুড়ে চলছে মুসলিম কমিউনিটির বিরুদ্ধে সরকার ও বিভিন্ন উগ্র জাতীয়তাবাদীদের হামলা ও কঠোর সব পদক্ষেপ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওই ইমামের মসজিদ বন্ধ করে দেন, বিভিন্ন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়, চারদিকে ধরপাকড় শুরু হয় এবং প্রকাশ্য জনসভায় তিনি মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ জারি রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এর আগে এ মাসের শুরুতে তিনি ইসলাম ধর্ম সংকটে বলে পশ্চিমা বিশ্বে বিতর্ক তৈরি করেন।
এই ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনগুলো ২০০৫ সালে প্রথম প্রকাশ করেছিল ডেনমার্কের জিল্যান্ড পোস্ট পত্রিকা। এরপর কয়েকবার ফরাসি এই শার্লি এবদো ওই ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনগুলো ছাপায়। ২০১৫ সালে মহানবীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনগুলো প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। সারা বিশ্বের মুসলমানেরা বিক্ষোভ করেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইমানুয়েল ম্যাক্রোর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এর প্রতিবাদে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সামাজিকভাবে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক চলছে। কাতারের সামাজিক সংগঠনগুলো ফরাসি পণ্য প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে।
আফসোসের বিষয়, এবার সংবাদগুলো ভালো করে পত্রিকায় আসছে না। আমাদের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোও বিদেশী পত্রিকা তেমন একটা পড়ে না বলে তারাও বেখবর। কিন্তু মহানবীর বিরুদ্ধে বেয়াদবি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে করা হোক, কোনো মুসলিম সেটা জেনে বসে থাকতে পারে না।
তাই আসুন আমরাও আওয়াজ তুলি :
১- ফরাসি পণ্য বর্জন করুন।
২- ফরাসি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করুন।
৩- ফরাসি দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিন।
৪- ইসলামী দলগুলো পথে নামুক।
> আরজু আহমাদ, শিক্ষার্থী
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাত্র কিছুদিন আগে, চলতি মাসের প্রারম্ভে সব শিষ্টাচার ভেঙে একটি প্রধান ধর্মের বিরুদ্ধে যে ঘৃণাবাক্য উচ্চারণ করেছেন তা এই জামানায় অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত। তিনি ‘ইসলাম’কে সমগ্র ‘পৃথিবী’র জন্য ‘সংকট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আরও কয়েকবছর আগে ২০১৫ সালের দিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইসলামকে পরিমার্জনের আলাপ তুলে ‘মৌলবাদী ইসলাম’ নাম দিয়ে মূলত মূলধারার ইসলামের বিরুদ্ধেই প্রকাশ্য ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র কথা বলেছিলেন।
ফ্রান্সে পর্দার উপর আঘাত হানার রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা সেই ১৯৮১ সাল থেকেই চলছে। কিন্তু এখানেই ফ্রান্সের ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের ইতিহাস শুরু নয়। বরং মুসলমানদের দ্বিতীয় সারির মানুষ হিসেবে (আদতে শত্রু হিসেবে) ট্রিট করার ইতিহাস মুসলিম বিশ্বে ফরাসি উপনিবেশ স্থাপনের কাল থেকেই খোলাসা।
সেকালের ফ্রান্সের তামাম ইতিহাস জুড়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও বর্বরতা ছেয়ে আছে।
তারা জোরপূর্বক ৯৯ শতাংশ মুসলমানের দেশ আলজেরিয়াকে ১৩২ বছর দখল করে রেখেছিল। এই সময়ে জামা কাংশোয়াসহ প্রধান প্রধান প্রায় সবগুলো মসজিদগুলোকে গীর্জায় পরিণত করেছে।
মুসলমানদের ফসলি বাগানগুলোকে ফলের মওসুমে তারা আগুনে পুড়িয়ে দিত। ১৫ লাখেরও অধিক লোককে তারা শহীদ করেছে। মাদ্রাসাগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছিল। কোরআন শিক্ষা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
শুধু আলজেরিয়া নয়, মরক্কো, তিউনিসিয়া, সুদান, মালি, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, লেবানন, ইয়ামানে যেই মুসলিম ভূমিতেই ফ্রান্স প্রবেশ করেছে সেখানেই সে মসজিদ, মাদ্রাসা আর ইসলামের উপর আঘাত করেছে।
ফ্রান্সে কেবল গত এক বছরেই ১,০৪৩ টি ইসলামোফোবিক ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ২২ টিরও অধিক মসজিদে হামলার ঘটনাও আছে।
এবার ফ্রান্স রাষ্ট্রীয় বন্দোবস্তে আল্লাহ্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। যদিও আগে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে হয়েছে তবে তাতেও অবশ্য রাষ্ট্রীয় মদদ ছিল।
এই হচ্ছে ইউরোপের ধর্মনিরপেক্ষতা! কই ইসলাম ছাড়া আর কাউকে নিয়ে তো এত সমস্যা কখনো দেখি না! কখনো যীশুকে নিয়ে এত ব্যাঙ্গ আয়োজন দেখেছেন? কখনো শুনেছেন, বাইবেল, তোরাহ, গীতা পুড়ানো হচ্ছে? কোরআন নিয়ে, রাসুল নিয়ে হরদম হয়। এরপরও দুনিয়ার মুসলমান শাসকেরা একটা বাক্য উচ্চারণের সাহস করছে না! আহা! আমরা মুসলমানের সন্তানেরাও এসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিকার বোধ করি না!
আমাদের কিছুই করার ক্ষমতা হয়ত নাই- কিন্তু অন্তরের দহন তো কম হবার কথা নয়! সেই দহন কি আদতেই আছে? কতখানি? রাসুলের প্রতি ভালোবাসা ঈমানের শর্ত। নিজের ঈমানকে পরীক্ষা করে নিতে আর কোনও প্যারামিটার দরকার নাই!
আফসোস! আমরা তো কেবলই দুনিয়াকেই বেছে নিয়েছি! আহ! কা’বার রব্বের শপথ, ইতিহাসে মুসলমান আগে কখনো এত অসহায় ছিল না। আল্লাহ্ আমাদের অক্ষমতাকে ক্ষমা করুন।
ও আমাদের প্রতিপালক! এই অক্ষম নির্লজ্জ গোলামের তো আপনার কাছে দোআ করা ও ক্ষমা চাওয়া ব্যতিত আর কিছুই করার নাই!
হে মহামহিম, অসীম ক্ষমতার অধিকারী, আমরা কেবলই আপনার মুখাপেক্ষী। আপনার প্রেরিত পুরুষ, সর্বশ্রেষ্ঠ যে নবী, তাঁর ইজ্জত আপনিই রক্ষা করুন।
ইয়া রাব্বাল কা’বা! এই উদ্ধত ফরাসি জাতি ও তার নিকৃষ্ট শাসকদের হিদায়াত ও বুঝ দিন। কিন্তু যদি তারা প্রকৃতই বক্র আর মোহরবিশিষ্ট অন্তরের অধিকারী হয় তবে তাদের ধ্বংস করুন। তাদের উপর আসমান ও জমিন এক করে দিন।
তাদের পর্বতসমূহকে উপড়ে ফেলুন। ভূমির ভারসাম্যতা বিনষ্ট হোক। সমুদ্র তাদের উপর আছড়ে পড়ুক। বাতাস ও আগুন তাদের গ্রাস করুক। আকাশ ও মাটি থেকে পানিকে সরিয়ে দিন। তাদের উপর দূর্ভিক্ষ আরোপ করুন।
আদ ও ছামুদ জাতির মত তাদের ধ্বংস করুন। সাবায়ীদের মত তাদের চাষযোগ্য ভূমিসমূহকে অনাবাদী ও রুক্ষ করে দিন। তাদের ফলসমূহকে তিক্ত করে দিন। আমালেকা জাতির মত তাদেরকে পরাজিত করুন। বনী ইসরাইলের মত তাদেরকে রাষ্ট্রহীন করে দিন।
ইয়া রাব্বুল আলামিন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন। দয়া করুন। আমাদের ঐক্য ও মর্যাদাকে ফিরিয়ে দিন। অবিরত দুরুদ ও সালাম সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ সে নবীর উপর! আমাদের অনাগত বংশধরেরা তাঁর জন্য কুরবান হোক। আমাদের পিতা ও মাতা তাঁর সম্মানে কুরবান হোক। ফিদাকা আবি ওয়া উম্মি, ইয়া রাহমাতাল্লিল আলামিন।
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
> গাজী ইয়াকুব, চেয়ারম্যান, তাকওয়া ফাউন্ডেশন
#ইতিহাসের_পাতা_থেকে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বেয়াদবির পরিণাম কি হয়েছিল!
বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের স্বার্থে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁরি জীবদ্দশাতে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাইফা (রা.) কে চিঠি নিয়ে ইরানের রাজমুকুটধারী পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজ এর উদ্দেশ্যে পাঠান।
সে হতচ্ছাড়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াত কবুল করা তো দূরের কথা! পবিত্র চিঠির সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং চিঠিটি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে।
যখন হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে জানতে পারলেন, অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হলেন, তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা এই দাম্ভিক এর সাম্রাজ্যকে তেমনিভাবে টুকরো টুকরো করে দিন, যেভাবে সে আমার চিঠিটি টুকরা টুকরা করেছে।
নবীকুল শিরোমণি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়া কিভাবে শূন্য হাতে ফিরে যায়?
দেখা গেল অল্প কিছুদিন পরেই পারস্যের সম্রাট খসরু পারভেজ তার স্বীয় পুত্র শীরওয়াহের হাতে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে নিহত হলো
ফ্রান্সের গভর্মেন্ট আজকে যেভাবে প্যারিস জুড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অবমাননা করে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনের প্রদর্শনী শুরু করেছে, সাথে সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব গজবও শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিবিসির ভাষ্যমতে আজকের প্যারিসে করোনায় নিহতের সংখ্যা 162 জন,
আক্রান্তের সংখ্যা 42 হাজারেরও উপরে।
রাব্বে কারীম যিনি এই ভূমন্ডলের মালিক, তার শপথ করে বলছি আমাদের প্রিয় নবীজীর সাথে যারা এমন দৃষ্টতা দেখাচ্ছে, অবশ্যই অবশ্যই ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়ন অচিরেই ধ্বংসলীলায় পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ
যার যেভাবে সম্ভব আমাদের জীবনের চাইতেও প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুশমনদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন
নতুবা ময়দানে হাশরে সুপারিশ পাওয়ার আশাকরা সম্ভবপর নয়
তিনি আরও লিখেন-
দিন তারিখ লিখে রাখুন সেদিন বেশি দূরে নয়
এই দাম্ভিকতার কারণে ফ্রান্স চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্র "ফ্রান্স"সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশ্ববাসীর সামনে অপমান অপদস্থ করার জন্য যে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন এঁকে মানুষকে দেখানোর জন্য বহুতল বিল্ডিং এর সামনে সাটিয়ে রেখেছে।
এ বেয়াদবির পরিণামে ফ্রান্সসহ ইউরোপের মানুষজন অর্থাভাবে ক্ষুধার কাতরতায় ভিক্ষা করে খাবে।
ওরা একান্নবর্তী হওয়া দূরের কথা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ
আল্লাহ সব বরদাশত করতে পারেন কিন্তু আমাদের জীবনের চাইতেও প্রিয় হাবিবে কিবরিয়ার শানে কোনরকম বেয়াদবী বরদাশত করেন না
ব্যক্তির বেয়াদবী বরদাশত করা যায় কিন্তু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বেয়াদবি কখনোই বরদাশত করা যায় না
> হাসিব আর রাহমান, অ্যাক্টিভিস্ট
ফ্রান্স তাদের উগ্রতা ভয়াবহভাবে প্রকাশ করলো এবার। রাসুলে আরাবী, হৃদয়ের স্পন্দন, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লামকে নিয়ে তারা যে উগ্রতা আর হিংস্রতা দেখাচ্ছে তা সহ্য করার মতো না। মানুষ পোস্টার ও প্লেকার্ড লিখে রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। আর তাতে লেখা আছে-
(1) The Prophet (Muhammad S.M.) is the Saviour Of humanity.
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম মানবতার মুক্তির দূত।
(2) I Am A Servant Of Holy Prophet Muhammad (S.M.).
আমি মহানবী হযরত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম এর উম্মত/অনুসারী।
(3) To Insult Is Not Fredom
অপমান কখনও বাকস্বাধীনতা হতে পারে না।
ম্যাক্রোঁ, তোমাকে চরম মূল্য দিতে হবে।
শার্লি...., তোমাকে চরম মূল্য দিতে হবে।
ইয়েস! প্রচ্ছন্ন এই হুমকিটা দিতেই হবে মুসলমানদের। তবে ফ্রান্স এতোটা ইতর আর বর্বর জাতি এটা এর আগে কেহই হয়ত এভাবে জানতো না।
অনেকেই বলেন ফ্রান্সে গলাকেটে হত্যা করা ওই শিক্ষকের ব্যাপারে কথা বলতে। কিন্তু আমি স্পষ্ট মনে করি - ওই শিক্ষককে ম্যাক্রোঁর নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে মুসলমানদেরকে গিনিপিগ বানানোর জন্য।
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলাম ধর্মের উপর ক্ষোভ দেখাতেই উগ্রবাদী দেশ ফ্রান্স বিশ্বের শত কোটি মুসলমানদের কলিজায় আঘাত দিচ্ছে। বন্ধ করে দিচ্ছে বিভিন্ন এলাকার বড় বড় মসজিদগুলোও। নেতৃত্বশুণ্য মুসলমানরা আমরা হা-হুতাশ করে যাচ্ছি আমাদের মতো করে।
আমরা জানি - ফ্রান্স তার পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। এই দেশটার চরম পতনের অপেক্ষায় আছি। ইনশাআল্লাহ সেই দিন দেখবো।
> আবদুল্লাহ আল মাসুদ, লেখক ও অনুবাদক
নবীজির অপমান দেখে মুসলিমরা তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এটা অমুসলিমরা সহজে নিতে পারে না। তারা ভাবে, এটা এমন কী যে এর জন্য একেবারে খুনোখুনি করতে হবে! আসলে মুসলিমরা তাদের নবীকে যতটা গভীরভাবে ভালবাসে, অন্য কোন ধর্মের লোকেরা তাদের প্রধান ধর্মপুরুষকে অতটা ভালবাসে না। ফলে বিষয়টা তারা গভীর থেকে অনুধাবন করতে পারে না।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট দেখলাম দাম্ভিকতা দেখিয়ে বলছে, নবীজির ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনী তারা বন্ধ করবে না। তারা যদি এমন ভেবে থাকে যে, সারাবিশ্বের প্রতিবাদ ও কিছু নপুংসক মুসলিমের নিন্দাবাদ দেখে হয়ত এই কল্লাকাটা থেমে যাবে তবে তারা ভুলের মধ্যে আছে। এখনো হাজার হাজার নবী-প্রেমিক এমন আছে, যারা নিজের জানকে নবীজির ইজ্জতের জন্য অনায়েসে কুরবান করে দিতে সদা প্রস্তুত।
নিশ্চয়ই আমাদের জান থেকে নবীজির ইজ্জত অনেক বেশি দামী। ফিদাহু নাফসী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তিনি আরও লিখেন, একটা হলো অপমান করার চেষ্টা করা অন্যটা হলো অপমানিত হওয়া। অপমান করার চেষ্টা করার দ্বারাই কেউ অপমানিত হয়ে যায় না। পশ্চিমারা আমাদের নবীকে অপমান করার চেষ্টা করলেও তিনি কখনোই অপমানিত হবেন না। কারণ মহান রব্বুল আলামীন তাঁর ব্যাপারে বলে দিয়েছেন, ‘ওয়া রফা’না লাকা যিকরক―আমি আপনার আলোচনাকে সমুন্নিত করেছি।‘ সুতরাং এদের এসব ফালতু কাজ নবীর শান ও মান কিছুতেই কমাতে পারবে না।
কিন্তু তারমানে এই না যে, আমরা ছেড়ে কথা বলব; বরং অপমান করার চেষ্টা করাটাকেই আমরা মৃত্যুতুল্য অপরাধ বলে মনে করি। এর কারণ হলো নবীজির উচ্চমর্যাদা এত বেশি যে, তাকে কিছু করা তো দূরের কথা তার দিকে চোখ বড় করে তাকানোটাই চোখ উপড়ে ফেলা যোগ্য অপরাধ। এজন্যই আমরা ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখাই।
আল্লাহর ঘোষণা আছে, ‘ইন্না শানিআকা হুওয়াল আবতার―আপনার নিন্দুকেরা নির্বংশে পরিণত হবে।‘ সুতরাং ফ্রান্সের কপালে দারুন দুর্গতি আছে। সেটা আজ হোক বা কাল।
> মাহবুবুর রহমান তালুকদার, খতিব, ফোর্ড স্কয়ার মসজিদ
লন্ডন প্রবাসী অ্যাক্টিভিস্ট মাহবুবুর রহমান তালুকদার লিখেন, ‘আজ মিম্বারে বসে ফরাসি মুসলিম-বিদ্বেষ আর তার ঢাবি শাখার বরকন্দাজ ‘জিয়া’র ইসলাম বিদ্বেষ সম্পর্কে কিছু কথা বললাম। রাসূলের প্রতি একজন মুমিনের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রাখার গুরুত্ব তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।
বাংলা ও ইংরেজিতে কথা বলার সময় এমনকি খুতবার সময়ও চোয়ালদু’টি শক্ত হয়ে ওঠেছে। মসজিদে খুতবাহ দিতে এমন দৃঢ় কণ্ঠে আর কখনো বয়ান করেছি বলে মনে পড়ে না।
মসজিদের জব, সরকারি গোয়েন্দাহর স্পাইং— এসবের পরওয়া করি না। রাসূলের অবমাননার প্রতিবাদে যদি স্ফুলিঙ্গের মত জ্বলে ওঠতে না পারি— তাহলে কীসের জব আর কীসের এই পোষাকি সমাজ??
এমএমএস/এমকেএইচ