ওমরাহকারীদের পদচারণায় চিরচেনা রূপে ফিরছে কাবা শরিফ
আলহামদুলিল্লাহ! বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘ ৭ মাস ওমরাহ পালন বন্ধ থাকার পর গত ৪ অক্টোবর রোববার কাবা শরিফ খুলে দেয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে ওমরাহ পালন। চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে কাবা শরিফ প্রাঙ্গন। আল্লাহ প্রেমিকদের ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে কাবা শরিফের পবিত্র চত্বর। খবর আল-আরাবিয়া ডটনেট।
মাতআফের দিকে নজর দিলেই যেন মন জুড়িয়ে যায়। শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ নারী-পুরুষের পদচারনায় আগের রূপে ফিরছে এ পবিত্র ভূমি। মসজিদে হারামের প্রধান তত্বাবধায়ক ও খতিব কর্তৃক জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, ওমরাহ পালনকারীদের শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে সীমিত পরিসরে ওমরা আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
ওমরাহ পালনকারীদের চলাচলের সুবিধার্থে সৌদি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি প্রতিটি বাসে ২০ জন যাত্রী বহন করার বিবৃতি জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ওমরাহ পালনকারীরা একটি আসন ফাঁকা রেখে যেন তাতে বসে। ওমরায় অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে ২০০ বাস প্রস্তুত করেছে কর্তৃপক্ষ।
আরবি গণমাধ্যম আল-আরাবিয়া ডটনেটে সৌদিতে অবস্থানকারী স্থানীয় ও প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে কেউ শিশু কন্যাসহ স্ত্রীকে নিয়ে ওমরাহ করতে এসেছেন। কেউ এসেছেন একা। আবার কেউ হুইল চেয়ারে ওমরায় অংশগ্রহণ করেছেন।
মিশান আল-হারবি
দীর্ঘ দিন ওমরাহ বন্ধ থাকার পর প্রথম ধাপে শিশু কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে ওমরাহ করতে এসেছেন রিয়াদের অধিবাসী মিশান আল-হারবি। প্রথম দিকে তিনি সংকিত ছিলেন যে, শিশু মেয়েসহ ওমরার অনুমতি মিলবে কিনা। এ নিয়ে তিনি দ্বধাগ্রস্ত ছিলেন। তবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তিনি উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। মহান রবের শোকরিয়া আদায় করেছেন।
আবদুল ওহাব আল-আমিন
সৌদিতে অবস্থানকারী ওমরাহ পালন করতে আসা ইয়েমেনের বাসিন্দা। তার ভাষায়, ‘কারনার কারণে মসজিদুল হারাম বন্ধ হওয়ায় ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষায় ছিলাম, কবে কখন কাবা শরিফের আঙিনা সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। অবশেষে মহান আল্লাহর শোকরিয়া যে, তিনি সবার জন্য কাবা প্রাঙ্গন উন্মুক্ত করেন।
আবদুল ওহাব আল-আমিন সৌদি সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান। করোনা থেকে ওমরাহ পালনকারীদের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ থাকতে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করায় কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
সুরায়া
ওমরাহ করতে আসা আরেক সৌদি নাগরিক সুরায়া বলেন, ‘মসজিদুল হারাম তথা কাবা শরিফের আঙিনায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হবে, এমন কিছু জীবনেও কল্পনা করিনি; তারপরও দীর্ঘ ৭ মাস এ পবিত্র আঙিনা থেকে দূরে থাকতে হয়েছে।
সুরায়া আরও বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের সময়ে যখন কাবা শরিফের লাইভ চ্যানেলগুলো দেখতাম, তখন জনশূন্য মাতাআফ দেখতাম। নেই কোনো ওমরা আদায়কারীদের ভীড়, নেই তাওয়াফের চোখ জুড়ানো দৃশ্য। এ দৃশ্যে হৃদয় পুড়ে যেত। মনের কষ্ষ্টটে চোখ থেকে পানি ঝরতো। মহান আল্লাহ তাআলার শোকরিয়অ, তার রহমতে আবারও আমাদের জন্য বাইতুল্লাহর দরজা খুলেছে।
সর্বোপরি ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী সবার জন্য ওমরাহ উন্মুক্ত হবে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে বহিঃবিশ্বের লোকদের জন্যও উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে এ ওমরাহ কার্যক্রয়। এমনটি ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন ১৫ হাজার ব্যক্তি ওমরাহ পালন করতে পারবে। আর সর্বোচ্চ ৪০ হাজার মানুষকে কাবা শরীফে নামাজ আদায় করতে দেয়া হবে।
এরপর আগামী ১ নভেম্বর থেকে বিদেশি নাগরিকদের ওমরা পালনের সুযোগ দেয়া হবে। এ সময় থেকে প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষ ওমরা পালন করতে পারবেন এবং মসজিদের ভেতরে ৬০ হাজার মানুষকে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হবে বলেও ঘোষণা করেন সৌদি হজ ও ওমরাহ কর্তৃপক্ষ।
এমএমএস/এমকেএইচ