মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত
মা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক। যেখানে খুঁজে পায় মানুষ শান্তির ঠিকানা। আল্লাহ তাআলা রহমতের সুধা দিয়ে প্রতিটি মাকে সৃষ্টি করেছেন। তাইতো মা সন্তানের জন্য করুণার আধার। মায়ের ভালোবাসা, করুণা মমত্ববোধ আল্লাহর অশেষ কুদরতেরই নিদর্শন। এ নিদর্শন শুধু মানুষের জন্যই নয় বরং সমগ্র প্রাণিজগতের জন্য। এ জন্য আল্লাহ এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর মায়ের হক বেশি। যা কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা কত অধিক তা একটি হাদিস দ্বারা অনুধাবন করা যায়। আলকামা নামক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাহাবি মারা যাচ্ছেন, অিন্তিম মুহূর্তে তার জবান থেকে কালেমা বের হচ্ছে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খবর পেয়ে ছুটে আসলেন এবং আলকামার মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি পুত্রের ওপর অখুশি? উত্তরে তিনি বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমার ছেলে আমার চেয়ে তার স্ত্রীকে বেশি গুরুত্ব দিত। এ কারণে আমি তার প্রতি অসন্তুষ্ট। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুকুম দিলেন, আলকামাকে আগুনে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দাও। আলকামার মা এ কথা শ্রবনে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার চোখের সামনে আমার সন্তানকে আগুনে জ্বালিয়ে দিলে আমি মা হয়ে কেমন করে তা সহ্য করব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আলকামার মাকে অনুরোধ করলেন, তাহলে আপনার সন্তানকে ক্ষমা করে দিন। তা না হলে অনন্তকাল ধরে সে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। তা আপনি কী করে সহ্য করবেন? একথা শুনে আলকামার মায়ের মন নরম হয়ে যায়, তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তারপর আলকামার জবানে কালিমা জারি হয়ে যায় এবং কালেমা পড়তে পড়তে ঈমানের সহিত আলকামা মৃত্যুবরণ করে। অতএব সাবধান! আল্লাহ ও তার রাসুলের পরে মায়ের হক আদায় করতে হবে। নতুবা মায়ের অবাধ্য সন্তানকে আখিরাতে কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। সুতরাং মায়ের প্রতি সদাচরণ সন্তানের জন্য অবশ্য পালনীয়।
হজরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি সর্বাগ্রে কার সঙ্গে সদাচরণ করব? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমার মায়ের সঙ্গে। লোকটি প্রশ্ন করল, তারপর? উত্তর এলো তোমার মায়ের। লোকটি আবার জানতে চাইল অতঃপর কে? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবারও জবাব দিলেন তোমার মায়ের। ওই লোক চতুর্থবার একই প্রশ্ন করলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, তোমার পিতা।` (বুখারি ও মুসলিম)
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মায়ের দোয়া অতি দ্রুত আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। আল্লাহ বান্দার সব গোনাহ ইচ্ছমতো ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু মাতা-পিতার অবাধ্যতার গোনাহ আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। বরং ওই অবাধ্য সন্তানকে এই পার্থিব জীবনের মৃত্যুর আগে শাস্তি দিয়ে থাকেন। (বায়হাকি) যা হজরত আলকামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুকালীণ ঘটনাই প্রমাণ করে।
যারা শৈশবে মাকে হারিয়েছেন। তারা কিভাবে মায়ের হক আদায় করবেন। এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামর বাস্তব জীবনেই তা ঘটেছে। তিনি শৈশবেই তার মা জননীকে হারান। তিনি তাঁর দুধ মা হজরত হালিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে সম্মান করতেন। যখন তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন। তখন তিনি তাকে দেখামাত্রই সম্মান জানিয়ে ওঠে দাঁড়াতেন। নিজের পাগড়ি অথবা গায়ের চাদর বিবি হালিমাকে বসার জন্য বিছিয়ে দিতেন। (আবু দাউদ) যারা মাকে ছোটবেলাতে হারিয়েছেন তারা মায়ের বোন-বান্ধবীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করবেন। তাতেও আল্লাহ তাআলা তাদের উত্তম প্রতিদান দিবেন।
হে আল্লাহ আপনি সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে মায়ের খিদমত করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়াতেই জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/পিআর