ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

যে কৌশলে ঈসা আলাইহিস সালামকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:৫৩ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

মহান আল্লাহ সর্বোত্তম কৌশল গ্রহণকারী। দুনিয়ার সব চক্রান্ত ও কৌশল তাঁর কিছুই নয়। হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার আগে সে কৌশলের প্রমাণ ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সেই বর্ণনাই উঠে এসেছে কুরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَكَرُواْ وَمَكَرَ اللّهُ وَاللّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ - إِذْ قَالَ اللّهُ يَا عِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ كَفَرُواْ وَجَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُواْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ
‘আর কাফেরেরা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম কুশলী।
আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে নিয়ে নেব। এবং তোমাকে নিজের দিকে তুলে নেব। কাফের (অস্বীকারকারী) থেকে তোমাকে পবিত্র করে দেব। আর যারা তোমার অনুগত রয়েছে তাদেরকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত বিজয়ী করব, যারা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তাদের ওপর। বস্তুত তোমাদের সবাইকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। তখন যে বিষয়ে তোমরা বিবাদ করতে, আমি তোমাদের মধ্যে তার ফয়সালা করে দেব।' (সুরা ইমরান : আয়াত ৫৪-৫৫)

আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ
তারা (অর্থাৎ যারা ঈসা আলাইহিস সালামের নবুয়ত অস্বীকার করেছিল এবং তাঁকে গোপনে নির্যাতন ও হত্যা করার উদ্দেশ্যে) কৌশল গ্রহণ করেছিল (সে মতে ষড়যন্ত্র ও কৌশলে তাঁকে গ্রেফতার করে শূলীতে চড়াতে উদ্যত হলো)।
আর আল্লাহ তাআলাও (তাঁকে নিরাপদ রাখার জন্য) গোপন কৌশল অবলম্বন করলেন (ষড়যন্ত্রকারীরা আল্লাহর কৌশল গ্রহণ সম্পর্কে কোনো কিছুই জানতে পারল না। কারণ আল্লাহ তাআলা বিরোধীদের মধ্য থেকে একজনকে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের আকৃতি দান করলেন আর হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আকাশে উঠিয়ে নিলেন। এতে তিনি বিপদমুক্ত হয়ে যান। আর রূপান্তরিত ইয়াহুদিকে শুলে চড়ানো হয়। ইয়াহুদিরা আজন পর্যন্ত এ গোপন কৌশলের কথা জানতেই পারেনি। প্রতিরোধের সামর্থ্য হওয়া তো দূরের কথা)

আল্লাহ তাআলা শ্রেষ্ঠ কুশলী। (কারণ অন্যদের কৌশল দুর্বল ও মন্দ এবং অস্থানেও প্রয়োগ হয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহর কৌশল মজবুত, উত্তম ও হেকমত অনুযায়ী হয়। আল্লাহ তাআলা এ কৌশলই তখন অবলম্বন করলেন।

আর স্মরণ কর সে সময়ের কথা, যখন তিনি (গ্রেফতারের সময় ঈসা আলাইহিস সালামকে কিছুটা উদ্বিগ্ন দেখে) বললেন, হে ঈসা! (চিন্তা কর না), নিশ্চয়ই আমি তোমাকে (প্রতিশ্রুত সময়ে স্বাভাবিক পন্থায়) মৃত্যুদান করব।
(সুতরাং স্বাভাবিক মৃত্যুই যখন তোমার বিধিলিপি, তখন নিশ্চিতই শত্রুর হাতে শূলে নিহত হওয়া থেকে তুমি নিরাপদ থাকবে। আপাতত) আমি তোমাকে (উর্ধ্বলোকের দিকে) উঠিয়ে নেব, তোমাকে অবিশ্বাসীদের অপবাদ থেকে পবিত্র করব এবং যারা তোমার অনুসরণ করবে, তাদের কেয়ামত পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের উপর বিজয়ী রাখব। (যদিও বর্তমানে অবিশ্বাসীরাই প্রবল ও শক্তিশালী)

অতপর (যখন কেয়ামত আসবে, তখন দুনিয়া ও বরজাখ থেকে) আমার দিকেই ফিরে আসবে। আমি (তখন) তোমাদের (সবার) মধ্যে (কার্যত) ওই সব বিষয়ে মীমাংসা করে দেব, যাতে তোমরা পরস্পর মতবিরোধ করতে (তন্মধ্যে ঈসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারটি অন্যতম)। (মারেফুল কুরআন)

আয়াত নাজিল সম্পর্কে ধারণা
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এ আয়াতে ব্যাখ্যায় বলেন, ‘ইয়াহুদিরা যখন হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে নির্যাতন ও হত্যা করতে উদ্যত হয়, তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর সান্ত্বনার জন্য দুটি কথা বলেন-
- আপনার মৃত্যু তাদের হাতে হত্যার আকারে হবে না বরং স্বাভাবিক মৃত্যুর আকারে হবে।
- আপাতত তাদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য আপনাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নেব।’

দুররে মানসুরের বর্ণনায় হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু বলেন, আমি আপনাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নেব এবং শেষ জামানায় স্বাভাবিক মৃত্যু দান করব।

এ আয়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা তার বিরোধিদের হাত থেকে রক্ষার্থে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। আসমানে এ উঠিয়ে নেয়ার বিষয়টি চিরস্থায়ীভাবে নয়, বরং কিছু দিনের জন্য।

নির্ধারিত সময়ে তিনি আবারও দুনিয়াতে আসবেন, শত্রুদের পরাজিত করবেন এবং অবশেষে স্বাভাবিক মৃত্যু দান করবেন।

হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের পুনরায় আগমনের ফলে যে বিষয়গুলো সুস্পষ্ট হবে তাহলো-
আসমান থেকে পুনরায় হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের আগমন এবং ইসলামের শত্রুদের বিপক্ষে বিজয় লাভ অতপর স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ হবে তাঁর বিশেষ মুজেজা।

আসমান থেকে আগমন এবং স্বাভাবিক মৃত্যুর মাধ্যমে তাঁর যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা পূর্ণতা লাভ করবে।
খ্রিস্টানরা হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র হিসেবে উপাস্য বলে ইবাদত করে বা মানে তা ভ্রান্ত হিসেবে খণ্ডণ হবে।

মহান আল্লাহর কৌশল গ্রহণ, হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া, আবার দুনিয়া পাঠানো ও স্বাভাবিক মৃত্যুর বর্ণনা; এ সবই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের সত্যয়ন।

এমএমএস/এমকেএইচ

আরও পড়ুন