কুরআনে বর্ণিত সাদকা-ই কি জাকাত?
ইসলামি শরিয়তে জাকাত-ই সাদাকাহ, সাদাকাহ-ই জাকাত। কুরআনুল কারিম ও সুন্নায় জাকাতকে সাদাকাহ বলা হয়েছে। জাকাত এবং সাদাকাহ- একই জিনিসের দুইটি নাম।
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে সাদাকাহ দ্বারা জাকাত আদায়ের বিষয় ও তা বিতরণ সম্পর্কে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে-
- إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
জাকাত হল কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন তাদের হক আর তা দাস-মুক্তির জন্য, ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৬০)
- خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلاَتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
’তাদের মালামাল থেকে জাকাত গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। আর তুমি তাদের জন্য দোয়া কর, নিঃসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য সান্ত্বনা স্বরূপ। বস্তুতঃ আল্লাহ সবকিছুই শোনেন, জানেন।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ১০৩)
উল্লখিত আয়াতে সাদাকাহ দ্বারা জাকাত বুঝানো হয়েছে। কুরআনুল কারিমে জাকাত বুঝাতে সাদাকাহ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ সাদাকাহ-এর মাধ্যমেই মানুষ নিজেদের মাল বা সম্পদকে পবিত্র করে।
- وَمِنْهُم مَّن يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ فَإِنْ أُعْطُواْ مِنْهَا رَضُواْ وَإِن لَّمْ يُعْطَوْاْ مِنهَا إِذَا هُمْ يَسْخَطُونَ
‘তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা জাকাত বণ্টনে আপনাকে দোষারূপ করে। এর থেকে কিছু পেলে সন্তুষ্ট হয় এবং না পেলে বিক্ষুব্ধ হয়।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৫৮)
হাদিসে পাকেও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাকাত বুঝাতে সাদাকাহ শব্দের উল্লেখ করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পাঁচ উকিয়ার কম সম্পদের উপর সাদাকাহ (জাকাত) নেই এবং পাঁচটি উটের কমের উপর সাদাকাহ নেই। পাঁচ ওয়াসাক-এর কম উৎপন্ন দ্রব্যের উপরও সাদাকাহ (জাকাত) নেই।’ (বুখারি)
এ হাদিসেও জাকাত বুঝাতে সাদাকাহ শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং সাদাকাহ মানে শুধুই দান নয় বরং হাদিসে উল্লেখিত সাদাকাহ দ্বারা জাকাত বুঝানো হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন ইয়েমেনের দায়িত্বশীল করে পাঠালেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘(ইয়েমেনবাসীকে) জানিয়ে দেবে যে, তাদের সম্পদে আল্লাহ তাআলা সাদাকাহ (জাকাত) দেয়াকে আবশ্যক করেছেন। যা তাদের ধনী (সম্পদশালী) ব্যক্তিদের কাছ থেকে নেয়া হবে।’
কুরআন এবং হাদিসে উল্লেখিত সাদাকাহ বলতে জাকাতকে বুঝানো হয়েছে। এ কারণেই যারা (ধনীদের থেকে) জাকাত আদায় করবে এবং (তা গরিবদের মধ্যে) বিতরণ করবে তাদের ‘মুসাদ্দিক’ বলা হয়।
মনে রাখতে হবে
সাদাকাহ বলতে শুধু গরিব দুঃখীকে দান করা বুঝানোয় সীমাবদ্ধ নয়। বরং কুরআন সুন্নায় সাদাকাহ বলতে জাকাতই মূল উদ্দেশ্য। যদিও ইসলাম পরবর্তী সময়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেউ কেউ সাদাকাহ বলতে শুধু গরিবদের দান করাকে বুঝানো হতো।
সুতরাং সম্পদশালী মুমিন মুসলমানের উচিত, সাদাকাহ তথা জাকাত আদায় করা। দান-সহযোগিতার নামে জাকাত দেয়া থেকে বিরত না থাকা।
সর্বোপরি জাকাতসহ সাধারণ দান-সাদাকায়ও রয়েছে অনেক কল্যাণ ও উপকারি ঘোষণা। যা সুরা লাইলে সুস্পষ্ট ভাষায় উঠে এসেছে-
‘অতএব, যে দান করে এবং খোদাভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে, আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব। আর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয়। এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে, আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব।’ (সুরা লাইল : আয়াত ৫-১০)
পরকালের কঠিন সময়ে সাদাকাহ হবে মুমিন মুসলমানের জন্য সত্য ন্যায়ের ইঙ্গিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সাদাকাহ হবে (মুমিনের ঈমানের) প্রমাণ।’ (মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব সম্পদশালীকে মুসলিম হিসেবে পরকালের নাজাত লাভে ‘সাদাকাহ’কে সাধারণ না ভেবে জাকাত হিসেবে মূল্যয়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ