আল্লাহ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করে না
আল্লাহর কাছে বান্দার সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো তাঁর অনুগ্রহ লাভ করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর দয়া তথা অনুগ্রহ লাভ করবে, তার দুনিয়া ও পরকাল সফলতায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণাও এমন। হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়-
- হজরত জারির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করেন না যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন একদিন এক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে এসে (দেখল ছাহাবায়ে কেরাম নিজেদের শিশু সন্তানদের চুমু দিয়ে আদর করছেন)। তখন সে বলল, তোমরা কি শিশুদেরকে চুম্বন কর? আমরা তো শিশুদের চুম্বন করি না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি আল্লাহ তাআলা তোমার অন্তর থেকে স্নেহ-মমতা বের করে দেন তবে আমি কি তা বাধা দিতে সক্ষম হব?’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
বান্দার প্রতি অনুগ্রহের সুফল
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন একদিন এক নারী তার দু’টি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে আসে। ওই নারী আমার কাছে কিছু চায়। তখন আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আমি তাকে তা (ওই খেজুর) দিয়ে দেই। সে তা দুই ভাগ করে তার দুই মেয়ে দেয় আর তা নিজে খাওয়া থেকে বিরত থাকে। তারপর সে উঠে চলে যায়। এমন সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়িতে প্রবেশ করেন। আমি তাঁকে ঘটনাটি বলি। তখন তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি মেয়েদের ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে; ওই মেয়েরা তার জন্য জাহান্নামের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।' (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
উল্লেখিত হাদিসের মূল আলোচ্য বিষয় হলো মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা। তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানো। আর এতে মহান আল্লাহ ওই বান্দার জন্য হয়ে যান। ওই ব্যক্তির সার্বিক বিষয়ের উপর মহান আল্লাহর অনুগ্রহ নাজিল হতে থাকে।
মনে রাখতে হবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস। যা মানুষকে একে অপরের প্রতি সহনুভূতিশীল হতে সাহায্য করবে। এ সম্পর্কে উদাহরণ স্বরূপ অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে-
- হজরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য এক ঘরের মতো, যার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় রাখে। অতপর তিনি এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুলের মধ্যে প্রবেশ করান।' (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
- হজরত নুমান ইবনু বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সব মুমিন এক ব্যক্তির মত, যদি তার চোখ অসুস্থ হয় তখন তার পুরো দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর যদি তার মাথায় ব্যথা হয় তখন তার পুরো শরীরই ব্যথিত হয়।’ (মুসলিম, মিশকাত)
- তিনি আরও বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি ঈমানদারদের তাদের পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়া-অনুগ্রহের ক্ষেত্রে একটি দেহের মত দেখবে। যখন দেহের কোনো অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন পুরো শরীর তার জন্য বিনিদ্র ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
হাদিসের অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে, বান্দার প্রতি উত্তম ব্যবহার ও দয়া-মায়া দেখানোই হলো মহান আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ লাভের অন্যতম মাধ্যম। হাদিস প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া উম্মতে মুহাম্মাদিকে এ নসিহতই পেশ করেছেন। যার মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে ধন্য হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত হাদিসগুলোর উপর যথাযথ আমল করার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ