ইসলামে হত্যাকাণ্ড মারাত্মক অপরাধ
আল্লাহ তাআলা মানুষকে ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। নীতিমালা হিসেবে কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। সঠিক পথ দেখাতে নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। সমগ্র সৃষ্টির জীবনযাত্রায় মানদণ্ড ঠিক করে দিয়েছেন। প্রত্যেককেই যার যার অবস্থানে দিয়েছেন যথাযথ অধিকার। অথচ বর্তমান পৃথিবীতে চলছে হত্যাকাণ্ড নামক মহামারী। যার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পৃথিবীর আলো-বাসাত না দেখা শিশু থেকে শুরু করে মৃত্যুর প্রহরগোনা বৃদ্ধরাও। যা মানবতার জন্য বড়ই অমঙ্গলজনক কাজ।
কুরআন ও হাদিসে অবৈধ হত্যাকাণ্ডকে পৃথিবী ধ্বংসের চেয়েও মারাত্মক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যখন কোথাও কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, আল্লাহর অভিশাপ তথায় নাজিল হয়। হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতায় আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৯৩)
আল্লাহ আরো বলেন, ‘এ কারণেই আমি বনি ইসলাঈলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে গোলযোগ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারো জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩২)
হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন বিদ্রোহীরা ঘিরে ফেলে, তখন হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর কাছে গিয়ে বলেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আমি আপনার পক্ষ হয়ে আপনার বিরুদ্ধাচরণকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে এসেছি। আপনি লক্ষ্য করুন যে, পানি এখন আপনার মাথার ওপরে ওঠে গেছে। সুতরাং এখন তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।` এ কথা শুনে হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘তুমি কি সমস্ত লোককে হত্যা করার প্রতি উত্তেজিত হয়েছ, যাদের মধ্যে আমিও একজন? ‘হজরত আবু হুরায়রা উত্তরে বললেন ‘না, না।’ তখন খলিফা বললেন, ‘জেনে রেখ, ‘তুমি যদি একজন লোককেই হত্যা কর তবে যেন তুমি সমস্ত লোককেই হত্যা করলে। যাও, ফিরে যাও। আমি চাই যে, আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করুন, পাপকার্যে লিপ্ত না করুন।` এ কথা শুনে হজরত আবু হুরায়রা ফিরে গেলেন, যুদ্ধ করলেন না। এর ভাবার্থ হচ্ছে এই যে, হত্যা হচ্ছে পৃথিবী ধ্বংসের কারণ।
হজরত সাঈদ ইবনু যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ মনে করে সে সমস্ত লোকের ঘাতক। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকে সে যেন সমস্ত লোকেরই প্রাণ রক্ষা করে।
এক লোক রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমীপে নিবেদন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে কোন পাপটি সবচেয়ে জঘন্য? তিনি বললেন, ‘কাউকে আল্লাহর সমান মনে করা, অথচ তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন।` লোকটি বলল, তারপর কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন, `তোমার জীবিকায় অংশীদার হবে এ ভয়ে তোমার সন্তানকে মেরে ফেলা।` সে আবার আরজ করল, তারপর কোনটি? তিনি জওয়াব দিলেন, `পড়শির স্ত্রীর সঙ্গে জিনায় লিপ্ত হওয়া।’ এ কথাগুলো সমর্থনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদের ইবাদাত করে না, আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না (তারাই প্রকৃত ইমানদার)। (সুরা আল-ফুরকান : আয়াত ৬৮)
ইসলাম ভ্রাতৃত্ব, সমতা ও মানবতার ধর্ম। যার প্রমাণ পবিত্র কুরআনুল কারিম ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস। তাইতো অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করাকে পৃথিবী ধ্বংসের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যারা হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয় তাদের পরিণাম সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে ভয়াবহ শাস্তির কথা এসেছে।
হত্যা ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের পরিণাম কখনো ভালো হয় না। তারা সত্যিকার অর্থেই অভিশপ্ত। পৃথিবীর আদি থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত যারাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হয়েছিল এবং বর্তমানেও হচ্ছে তা দৃষ্টি দিলে উপলব্দি কর যায়। তাদের পরিণতি দেখলে আরো স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহর বিধান কতটা অলঙ্ঘনীয়।
সুতরাং আল্লাহ তাআলা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে হত্যা, সন্ত্রাস, বোমাবাজিসহ নানাবিধ উপায়ে অন্যায়, অত্যাচার, অসত্য পথ থেকে হিফাজত করে শান্তি ও কল্যাণের পথে চলার তাওফিক দান করুন। সত্য সুন্দর কল্যাণের পথে পরিচালিত করা তাওফিক দান করুন। যারা হত্যা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান জান্নাত দান করুন। আমিন।
জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/এমএস