করোনায় বিশ্বব্যাপী নিষ্প্রাণ ঈদের নামাজের দৃশ্য
বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ দেশই আজ ঈদ পালন করেছে। মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে সতর্কতার সঙ্গে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেছেন মুমিন মুসলমান। ঈদের নামাজের এসব চিত্র ছিল নিষ্প্রাণ। চিরচেনা ঈদের আমেজ নেই কোথাও।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার মানুষকে নিজ নিজ ঘরে থাকার অনুরোধ করেছেন। ঘরেই ঈদের নামাজ পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববিতে লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ করে ঈদের নামাজের অনুমতি দিয়েছে দেশটি। ফলে মক্কার মসজিদে হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববি মুসল্লিবিহীন ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বিশ্বের অনেক দেশ ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও কারফিউর মধ্যে লোক সমাগম ছাড়াই আদায় করেছে ঈদের নামাজ।
মধ্যপ্রাচ্যের আরবদেশগুলোর চিত্রই ছিল বেশি নিষ্প্রাণ। তাদের ঈদের জামাআতের দেখা যায়নি কোনো জৌলস। ইউরোপের শহরগুলোর মতো মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলোতেও স্থগিত ছিল বড় বড় ঈদের জামাআত। এসব দেশের মানুষেরা ঘরে ঘরে ঈদের নামাজের জামাআত আয়োজন করেছেন।
এ দিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে এশিয়ার বেশ কিছু দেশ তাদের নিয়ম-কানুন কিছুটা শিথিল রেখেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তান। এ শিথিলের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।
এসব দেশকে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার শর্তে ঈদের জামাআত আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ দেশগুলোর মধ্যে যারা আজ ঈদের নামাজ আদায় করেছেন, তাদের মাস্ক পরা অবস্থায় যথেষ্ট সতর্ক দেখা গেছে। প্রত্যেকেই যার যার জায়নামাজ নিয়ে মসিজদে হাজির হয়েছেন।
আবার ঈদগাহে কিংবা নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার স্থানে প্রবেশের আগে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকেই হাত ধুয়ে ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেখা যায়। ঈদগাহে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের তাপমাত্রা মাফার ব্যবস্থাও করেছে কর্তৃপক্ষ।
আজ যারা ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহে গেছেন, তারা দ্রুততার সঙ্গে নামাজ ও দোয়া সেরে যার যার বাড়িতে চলেগেছেন। বিশ্বির বিভিন্ন দেশের ঈদের খবর ও ছবি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ঈদের নামাজের প্রাণহীন ছবিগুলো মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে হাহাকারকেই বাড়িয়ে দিয়েছে।
পবিত্র নগরী মক্কা
পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদে হারামের শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ-এর ইমামতি ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা হয়। কিন্তু ঈদের জামাআতে কাবা শরিফের বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ছাড়া আর কেউ অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
মসজিদে নববি
মদিনার মসজিদে নববিতেও অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদুল ফিতরের জামাআত। এতে ইমামতি করেন শায়খ ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান বুয়াইজান। ঈদের জামাআত অনুষ্ঠিত হলেও তাতে বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য কোনো মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী ক্যাপটাউন। সরকারিভাবে ঈদের জামাআত আদায়ে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তাই বাড়ির পাশের একটি মাঠেই অল্প কয়েকজন মিলে আদায় করছেন ঈদের নামাজ।
ইন্দোনেশিয়া
মধ্যবয়স্ক এক বাবা তার সন্তানকে কোলে নিয়ে ঈদের জামাআতে যাচ্ছেন, আর ঈদগাহের প্রবেশ মুখেই বাবার শরীরের তাপ মেপে দেখছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রহরী।
মসজিদে ঈদের জামাআত
ইন্দোনেশিয়ার মধ্য সুলাসি প্রদেশের একটি মসজিদে ঈদের জামাআত অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে রয়টার্স। তাতে দেখা যাচ্ছে মহামারি করোনায়ও মুসল্লিরা মসজিদে নামাজ আদায়ে সমবেত। মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ইমাম খুতবা পড়ছেন।
ফিলিস্তিন
যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ ফিলিস্তিন। ঈদ উৎসব ও নামাজ আদায়ে পিছিয়ে নেই। ঈদের আমেজ না থাকলেও দেশটির গাজার একটি মসজিদে পরম ভক্তি নিয়ে ঈদের নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। তারা পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখেই পড়ছে ঈদের নামাজ। আর এ শর্তেই নামাজের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন।
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের ঐতিহ্যবাহী মাজার-ই-শরীফ প্রাঙ্গনে পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। তারা পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের নামাজ পড়েছেন।
পাকিস্তান
দেশটির করাচিতে একটি মাঠে নামাজ পড়ছে মুসল্লিরা। এ স্থানের মুসল্লিদের মাঝে নেই মহামারি করোনা নিয়ে কোনে টেনশন। সে কারণে পারস্পরিক দূরত্বেরও বালাই নেই এখানে।
মিসর
রাষ্ট্রীয়ভাবে মসজিদে কিংবা লোক সমাগম হয়ে নামাজ আধায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সে কারণে বাড়ি ছাদকেই নামাজের স্থান হিসেবে বেচে নিয়েছে তারা। ঈদের নামাজ তো পড়তে হবে!
ইরাক
ইরাকের নারীরা ঈদের দিনের আনন্দ আয়োজন ও খাবার নিয়ে চলছে একে অপরের বাড়ি। করোনার মাঝেও মাস্ক পরে নানান আয়োজনে ঈদের আয়োজনকে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারা।
শ্রীনগর
ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশ্মীরের শ্রীনগরের বেশ সুনাম রয়েছে। ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে ঈদ অনুষ্ঠিত না হলেও কাশ্মীরের মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন। দেশটিতে কেন্দ্রীয়ভাবে ঈদ পালন করা না হলেও কাশ্মীরের কিছু রাজ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদ।
মালয়েশিয়া
কভার ফটোটিতে স্থান পেয়েছে মালয়েশিয়ার এক বাবা-ছেলের ফটো। যারা ঈদের নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন। এটি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি ঈদগাহ স্থিরচিত্র।
মরক্কো
আফ্রিকার দেশ মরক্কো। দেশটিতে ঈদ অনুষ্ঠিত হলেও দেশটির মসজিদগুলো ছিল ফাঁকা। স্বল্প পরিসরে ঈদ আয়োজন থাকলেও চোখে পড়েনি ঈদের জামাআত।
উল্লেখিত ছবিগুলোই প্রমাণ করে যে, মহামারি করোনায় আক্রান্ত এবার ঈদ মুসলিম উম্মাহর জন্য নিষ্প্রাণ। যেখানে নেই কোনো আনন্দ ও উৎসবের আমেজ। ঈদের গুরুত্বপূর্ণ দিনে সবাই মিলে মহান প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন মহামারি করোনা থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্তি দেন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ