ইফতারের সময় বিশ্বনবির দোয়া ও আমল
রহমত বরকত ও নাজাতের মাস রমজান। আল্লাহর নির্দেশ পালনে দিনভর সিয়াম সাধনায় নিয়োজিত থাকে মুমিন মুসলমান। সন্ধ্যা হলেই আল্লাহর নির্দেশ পালনে সুন্নাত তরিকায় ইফতার করবে রোজাদার। ইফতারে পরিপূর্ণ সাওয়াব ও কল্যাণ লাভে বিশ্বনবির অনুসরণেই ইফতার করবে মুমিন।
ইফতারের বিধান
সারাদিন উপবাস করে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভাঙা বা খোলার উদ্দেশ্যে কিছু খাওয়াকে ইফতার বলে। সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে এ ইফতার করা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম সুন্নাত। হাদিসে এসেছে-
‘সূর্য ডোবার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর দেরি না করে দ্রুত ইফতার করে নেয়া সর্বোত্তম।’ (বুখারি)
ইফতারের সামগ্রী
খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত। আর যদি খেজুর না পেলে কিংবা না থাকলে তবে সাদা পানি দ্বারা ইফতার শুরু করা উত্তম। হাদিসে এসেছে-
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা তাতে বরকত (কল্যাণ) রয়েছে। আর যদি খেজুর না পাওয়া যায় তবে সে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মিশকাত)
আর ইফতারের সময় সামান্য কিছু দিয়ে হালকা ইফতার করে কিছুক্ষণ পর পরিপূর্ণ খাবার গ্রহণ করা ইসলাম ও বিজ্ঞান সম্মতভাবে উত্তম। এতে শরীর অনেক সুস্থ ও সবল থাকে। তাই মাগরিবের নামাজ আদায় করে ইফতার পরবর্তী খাবার গ্রহণ করা।
ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা
ইফতারের আগে ইফতার সামনে নিয়ে তাসবিহ-তাহলিল ও তাওবা-ইসতেগফার আল্লাহ কাছে অনেক পছন্দনীয়। ইফতারের সময় আল্লাহ বান্দার সব চাওয়াগুলোই পূরণ করে দেন। রোজাদার প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে খাবার সামনে নিয়ে আল্লাহর ভয়ে সময় না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এটি আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দনীয় বিষয়।
ইফতারের আগ মুহূর্তে বেশি বেশি ইসতেগফার পড়া-
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الْعَظِيْم – اَلَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْم
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।
নিচের দোয়াটিও বিশেষভাবে পড়া যায়-
اَلْحَمْدُ للهِ اَللّهُمَّ إنِّيْ أسْئَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْئٍ أنْ تَغْفِرَلِيْ.
উচ্চারণ : ‘আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিআত কুল্লা শাইয়িন আন তাগফিরলি।’
অর্থ : ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য; হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার সর্ববেষ্টিত রহমতের উসিলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)
ইফতারের সময় বিশ্বনবির দোয়া
হজরত মুয়াজ ইবনে যুহরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন এ দোয়া পড়তেন-
أللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلى رِزْقِكَ أفْطَرْتُ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আ’লা রিযক্বিকা আফত্বারতু।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যে রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করছি। (আবু দাউদ মুরসাল, মিশকাত)
ইফতার করার পর বিশ্বনবির দোয়া
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
উচ্চারণ : ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’
অর্থ : ‘ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াব ও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)
অন্য কারো ঘরে মেহমান হয়ে ইফতার করলে এ দোয়া পড়া-
أَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ.
উচ্চারণ : আকালা ত্বাআমাকুমুল আবরারু, ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালায়িকাতু, ওয়া আফত্বারা ইংদাকুমুস সায়িমুন।’ (আবু দাউদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইফতারের সময় উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথ খেয়াল করার পাশাপাশি রমজানকে গোনাহ মাফের উত্তম উপায় হিসেবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ