রোজায় ইনসুলিন ইনজেকশন টিকা নেয়া যাবে কি?
রমজানের রোজা রাখা ফরজ। এ ইবাদত পালনের বিধান দিয়েছেন আল্লাহ। আবার যারা এ ইবাদত পালনে অক্ষম তাদের জন্যও রয়েছে ছাড়। রোজার বিধান নাজিলের আয়াতে আল্লাহ তাআলা অক্ষম বা সমস্যার সম্মুখীন মানুষের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এ বিধানে রয়েছে সহজের ঘোষণা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা'আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
আল্লাহ বান্দার জন্য তার বিধান পালনে কঠোর নন বলে এ আয়াতে ঘোষণা দিয়েছেন। রোজা যেহেতু ফরজ বিধান তাই এই রোজা সঠিকভাবে পালন করতে হলে জানতে হবে কোন অবস্থায় রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়, আবার কোন অবস্থায় রোজা ভঙ্গ হয় না।
রমজান আসলে প্রায়ই একটা সমস্যা সামনে এসে যায়। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত,তাদের জন্য করণীয় কী? তারা কি ইনসুলিন নিতে পারবে? কিংবা যাদের ইনজেকশন স্যালাইন, টিকা নেয়া জরুরি, তারা রমজানের রোজা রেখে এসব চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবে কি? এ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
নিয়মিত রোগের কারণে ইনসুলিন, ইনজেকশন, টিকা কিংবা স্যালাইন গ্রহণে ইসলামি আইন শাস্ত্রের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হলো- যে কোনো ধরনের ইনজেকশন বা টিকা নিয়ে রোজা নষ্টহবেনা। চাই তা শিরায় দেয়া হোক কিংবা চামড়া,মাংসে, বা পেটে নেয়া হোক।
যেমন কুকুরে কামড়ালে পেটে ইনজেকশন নিতে হয়। এসব অবস্থায় অধিকাংশ আলেমদের মতে এটা সুস্পষ্ট যে, এতে তাদের রোজা ভাঙ্গবে না। ইনসুলিন ও স্যালাইন গ্রহণেরও একই বিধান।
বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের গবেষণায় ফতোয়া, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার সম্বন্বয়ে এটা প্রমাণিত যে, ইনসুলিন, ইনজেকশন, টিকা কিংবা অসুস্থতায় স্যালাইন গ্রহণে ভাঙ্গবে না রোজা।
কারণ ইনজেকশন দ্বারা যেসব ওষুধ শরীরে প্রবেশ করনো হয়, তা রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য যে শর্ত রয়েছে তার মধ্যে পড়ে না। রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য যে গ্রহণযোগ্য রাস্তা তথা খাদ্যনালী বা মস্তিষ্কের রাস্তা পথ রয়েছে তা দিয়ে ইনজেকশন, ইনসুলিন, স্যালাইন কিংবা টিকা ইত্যাদি প্রবেশ করানো হয় না।
এ ওষুধগুলো শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে তা খাদ্যনালী দিয়ে পেটে যায় না। যদিও পেটে যায় তা আবার সেটা খাদ্যনালী দিয়ে পেটে যায় না, বরং অন্য রগ দিয়ে তা ঢুকে থাকে। তাই ইনজেকশন জাতীয় চিকিৎসাগ্রহণের দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না।
তবে যারা রোজার কষ্ট লাগবের উদ্দেশ্যে স্যালাইন গ্রহণ করবে তাদের রোজা মাকরূহ হয়ে যাবে। সুতরাং এ মানসিকতা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সুতরাং ডায়াবেটিস কিংবা ইনজেকশন নিতে হয় বলে রোজা রাখা যাবে না এ অজুহাতে রোজা থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ নেই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজার যথাযথ হক আদায় করে তা পালনের তাওফিক দান করুন। রোজার বরকতের অসুস্থদের সুস্থ করে দিন। আমিন।
একই বিধান ইনসুলিন ও স্যালাইন নেয়ার। এগুলোর দ্বারাও রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেয়া মাকরূহ।
এমএমএস/জেআইএম