হে আল্লাহ! রহমতের বারিধারায় আমায় সিক্ত করুন
মহান আল্লাহর অপার মহিমায় রমজানের প্রথম দশকের রোজা রাখার সৌভাগ্য পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ! এ জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে আমাদের অনেক বেশি কৃতজ্ঞ হয়ে দোয়ায় রত হওয়া উচিত।
কেননা তিনি আমাদের সুস্থ রেখেছেন এবং রোজার বরকত থেকে কল্যাণ লাভের সুযোগ দিয়েছেন। যদিও বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। তারপরও রোজা পালনের জান্নাতি পরিবেশ ও শান্তি উপভোগ করছেন মুমিন মুত্তাকিরা।
বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ তিরমিজিতে এসেছে, ‘রোজা ধৈর্যের অর্ধেক আর ধৈর্য ঈমানের অর্ধেক।' ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রমজানের রোজা অন্যতম একটি।
এটি মহান আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সাক্ষাৎ লাভের মাধ্যম হিসেবেও সর্বশ্রেষ্ঠ স্তম্ভ। এজন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে কুদসিতে ঘোষণা করেন-
সম্মান ও মর্যাদার প্রভু আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের অন্য সব কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা একান্তই আমার জন্য এবং আমি এর জন্য তাকে পুরস্কৃত করব। রোজা ঢালস্বরূপ। তার নামে বলছি, যার হাতে মুহাম্মদের জীবন, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের গন্ধের চেয়েও পবিত্র। একজন রোজাদার দু’টি আনন্দ লাভ করে। সে আনন্দিত হয় যখন সে ইফতার করে এবং রোজার কল্যাণে সে আনন্দিত হয় যখন সে তার প্রভুর সাথে মিলিত হয়।’ (বুখারি)
কুরআনুল কারিম থেকেও এ কথা প্রতীয়মান যে, আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের বেহিসাব সাওয়াব দান করবেন। রোজা পালন করার ফলে একজন রোজাদার ধৈর্যের চূড়ান্ত নমুনা পেশ করেন। হাদিসে কুদসি থেকে আরও জানা যায়-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বলেন, রোজাদার তার ভোগ-বিলাশ এবং পানাহার শুধু আমার জন্যই বর্জন করে, সুতরাং রোজা আমার উদ্দেশ্যেই আর আমিই এর প্রতিদান। (মুসলিম)
একটু চিন্তা করে দেখুন, যার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ দেবেন, তাহলে এর গুরুত্ব কতই না ব্যাপক। হাদিসে আরও এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শয়তান মানুষের ধমনীতে চলাচল করে, তোমরা যদি শয়তান হতে আত্মরক্ষা করতে চাও, তবে রোজার মাধ্যমে তোমাদের ধমনীকে সংকীর্ণ করে দাও।‘
বর্ণনাকারী আরও বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন-
‘হে আয়েশা! সব সময় জান্নাতের দরজার কড়া নাড়তে থাক। জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তা কীভাবে? তিনি উত্তর দিলেন, রোজার মাধ্যমে।’ (এহ্ ইয়াউ উলুমিদ্দীন)
প্রত্যেক রোজাদারকে গভীরভাবে মনে রাখতে হবে যে-
রোজা আদায়ের অর্থ কতগুলো বিষয় থেকে বেঁচে থাকা ও কতগুলো বিষয়কে বর্জন করা। এর মাঝে বাহ্যিকতার কোনো আমল নেই। অন্য যেকোন ইবাদত মানব দৃষ্টে ধরা পড়ে, কিন্তু রোজা এমন এক ইবাদত, যা শুধু আল্লাহ তাআলাই দেখতে পান, যার মূল শিকড় রোজাদার ব্যক্তির হৃদয়ে লুকায়িত তাকওয়ার সঙ্গে সংযুক্ত।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি রোজা রাখে, তার এ একটি দিনের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
একজন ব্যক্তির কেবল অভুক্ত এবং পিপাসার্ত থাকাই রোজার মূল উদ্দেশ্য নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
- ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং গোলমাল ও ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা কেউ তার সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে, তবে সে যেন বলে দেয়, আমি রোজাদার।' (বুখারি)
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রাখার পরও মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারলো না, তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি)
তাই আসুন, আমরা সবাই এই রমজানে সিয়াম সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করে ‘মুসতাজাবুদ দাওয়া' বা দোয়া কবুলিয়তের মোকামে উপনীত করতে পারি, সেই প্রচেষ্টায় রত হই। আর দোয়া করি-
হে দয়াময় প্রভু! রমজানের কল্যাণে তুমি বিশ্বকে সব মহামারি ও বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করুন। রমজানের দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। রমজানের যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ