কন্যা সন্তানের অধিকারে ইসলাম
কন্যা সন্তান মানেই অলুক্ষণে, অপমানের বস্তু ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষিত। ইসলামপূর্ব যুগের অবস্থা ছিল এমন। কন্যা সন্তান জন্মদান ছিল আজন্ম পাপ। সমাজ সংসারে তাদের ছিল না কোনো অবস্থান। কন্যা সন্তানকে অপমাণের বিষয় মনে করেই বাবা কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। পাথর নিক্ষেপে মেরে ফেলত। ইসলাম দিয়েছে কন্যা সন্তানের বেঁচে থাকার অধিকার। দিয়েছে সৃষ্টির সর্বোত্তম মর্যাদার আসন। জাগো নিউজে কন্যা সন্তানের অধিকারের কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-
ইসলাম পূর্ব যুগে কন্যা সন্তান
ইসলামপূর্ব যুগে কন্যা সন্তানদের ওপর পাশবিকতার কথা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করছেন, ‘এভাবে যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় অসহ্য মনোকষ্ট। তাকে প্রদত্ত সুসংবাদের কারণে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে তাকে (কন্যা সন্তানকে) কি অপমানের গ্লানি সহ্য করে রেখে দেবে, নাকি মাটিচাপা দেবে? তাদের বিচার কতই না নিকৃষ্ট।’ (সূরা নাহল : আয়াত ৫৮-৫৯)
একটি ঘটনা
হজরত দাহিয়াতুল ক্বলবি রাদিয়াল্লাহু আনহু, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে নিজ হাতে তাঁর মেয়েকে জীবন্ত কবর দিয়েছিলেন। উৎসবে যাওয়ার কথা বলে তিনি মেয়েকে সাজে-পোশাক পরিয়ে মেয়েকে নিয়ে মরুভূমিতে গেলেন, মেয়েকে বসিয়ে রেখে নিজে গর্ত খুড়লেন, গর্ত খোড়ার সময় তাঁর দাড়িতে মাটি লাগলে মেয়ে হাত দিয়ে দাঁড়ি থেকে মাটি পরিষ্কার করে দিয়ে বলে, বাবা! তুমি নাকি দাওয়াতে যাবে, তোমার পোশাক ও চেহারা ময়লা হয়ে যাচ্ছে, তুমি কেন মাটি খুড়ছ? হায় আল্লাহ, মেয়ে তখনও জানে না এই গর্তে তাকেই নিক্ষেপ করা হবে।
মাটি খুড়া শেষ, বাবা মেয়েকে গর্তে ফেলে দেয়, মেয়ে বাবা বলে চিৎকার করে ওঠে। বাবা! আমি কোনো দিন তোমার পরিচয় দিব না। দাহিয়াতুল কালবি স্বজোরে পাথর নিক্ষেপ করে মেয়েকে লক্ষ্য করে। পাথরের আঘাতে রক্ত ফিনকি দিয়ে বের হয়, সে রক্তে রঞ্জিত হয় দাহিয়াতুল কলবি।
ইসলাম গ্রহণের পর এ ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘটনা শুনে কাঁদলেন, কাঁদলেন দাহিয়াতুল কালবি রাদিয়াল্লাহু আনহু। আর বললেন মানুষ কত পাষাণ! তিনি বললেন হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন। এই ছিল ইসলাম পূর্ব যুগে কন্যা সন্তানের অধিকার।
কন্যা সন্তানের প্রতি ইসলাম
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছেলে ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্য বিধান এবং মেয়েদের ওপর ছেলেদের অহেতুক প্রাধান্যদান কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, যার তত্ত্বাবধানে কোনো কন্যা শিশু থাকে আর সে তাকে জীবিত দাফন না করে, তার প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন না করে। আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আবু দাউদ)
ইসলাম মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে, সমাজ-সংসারে তাদের সম্মানিত করেছে। ইসলাম সব সময় নারীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশনা দিয়েছে। কুরআনে বাণী ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।` (সুরা নিসা : আয়াত ১৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানকে লালন-পালন করা জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় এবং বেহেশতে প্রবেশের কারণ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, `তোমাদের মধ্যে যার তিনটি কন্যা অথবা তিনটি বোন আছে, তাদের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করলে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।` (তিরমিজি)
সমাজ-সংসারে মেয়েদের বোঝা মনে করা উচিত নয়। বরং তারা হলো পুরুষদের অর্ধাঙ্গিনী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় মেয়েদের সঙ্গে নরম ব্যবহার করেছেন, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইসলাম নারীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। মোট কথা, প্রত্যেক ব্যক্তিরই উচিৎ নিজের ছেলে-মেয়েদের মতো অন্যের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গেও স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করা। বিশেষভাবে কন্যা সন্তানদের অধিকার যেন প্রতিষ্ঠিত থাকে, সেদিকে আন্তরিকতাপূর্ণ দৃষ্টি রাখা।
বর্তমান সমাজের অবস্থা
নিজের মেয়েকে অনকে ভালোবাসে। মেয়ের জন্য সব কিছু করতে পারে। মেয়েদের জন্য বাহ্যিকভাবে অনেক মায়া-মহব্বত প্রকাশ করে। কিন্তু সম্পত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে এই মায়া-মহব্বত মনে থাকে না। তারা শুধু ছেলেদেরই সম্পদের পাহাড় দিয়ে যায়। মেয়েদের প্রাপ্য অধিকার দেয় না। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের সূরা নিসায় মেয়েদের অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সবিস্তার উল্লেখ করেছেন। আরো অনেক আয়াত এবং হাদিস দ্বারা কন্যা সন্তান এবং বোনদের জন্য ব্যয় করার পুরস্কার ও মর্যাদা ঘোষিত হয়েছে। মহান আল্লাহ আমাদের এর ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
পরিশেষে...
ছেলেকে যেমন ভালোবাসেন, তেমনি মেয়েকেও ভালোবাসা উচিত। ছেলে ও মেয়েকে সমান দৃষ্টিতে দেখা উচিত। কারণ এ মেয়ে সব কিছু রেখেই স্বামীর বাড়ি যাবে। বাবা-মা, ভাইকে স্মরণ করবে সব সময়। এদের সুখে হাসবে, দুঃখে কাঁদবে। আল্লাহ উম্মতে মুসলিমাকে মেয়েদের অধিকার যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/পিআর