মৃতব্যক্তির জন্য আমাদের করণীয়
মৃত্যু থেকে রেহাই পাবে এমন ধারণা পোষণ করা বোকামি। সুতরাং জীবন যার আছে মৃত্যু তার সুনিশ্চিত। মানুষ যখন মৃত্যু বরণ করেন তখন থেকেই মানুষের আমল বন্ধ হয়ে যায়। তাই পরকালে শান্তিময় জীবন লাভ করতে চাইলে অবশ্যই দুনিয়াতে তাকে ভালো আমল করে যেতে হবে। মৃত্যুর পরে দুনিয়া অবস্থানকারী জীবিতরা মৃতব্যক্তির বিদেহী আত্মার রূহের মাগফিরাতের জন্য কী করণীয় জাগো নিউজে তা তুলে ধরা হলো-
হাদিসে এসেছে, মৃত্যুর পর দুই ধরণের আমল অব্যাহত থাকে- ১. মৃতের এমন আমল যা তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হতে পারে। ২. এমন আমল, যা মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতরা করে থাকে।
১. সদকায়ে জারিয়া
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের দরজা বন্ধ হয় না। ক. সদকায়ে জারিয়া খ. যদি কেউ এমন সন্তান রেখে যায়, যে সন্তান বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবে, গ. এমন দীনি শিক্ষা রেখে যায়, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে। (মুসলিম শরিফ)
২. মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতদের দোয়া-
মানুষের মৃত্যুর নিজে করে যায়নি।কিন্তু আমলের সাওয়াব পেতে থাকে। দুনিয়াতে জীবতরা তাদের জন্য দোয়া করে থাকে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু আমল রয়েছে-
ক. মুসলমানদের মাগফেরাত কামনা
মৃত বাবা-মার সঙ্গে সকল মুমিনদের জন্যও দোয়া করার শিক্ষা কুরআন ও হাদিসে দেয়া হয়েছে। কুরআনে এসেছে- ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্বে যারা ঈমান এনেছেন, তাদেরকে ক্ষমা কর। আর ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রেখ না’। অন্য আয়াতে এসেছে- ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছে’। (সূরা বনি ইসরাঈল)
খ. সাধারণ দান-সদকা করা
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, জনৈক সাহাবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মা হঠাৎ মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি কোনো ওসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে দান সদকা করতেন। আমি তার পক্ষ থেকে দান সদকা করলে কি তিনি এর সওয়াব পাবেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন। (বুখারি ও মুসলিম) এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কেউ যদি দান সদকা করে তাতে তিনি উপকৃত হবেন।
গ. রোজা পালন করা
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল এই অবস্থায় যে, তার ওপর রোজা ফরজ ছিল তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশগণ রোজা রাখবে। (বুখারি ও মুসলিম) এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, এর দ্বারা তিনি উপকৃত হবেন।
ঘ. হজ্জ আদায়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে এভাবে তালবিয়া পাঠ করতে শুনলেন, আমার শুবরুমার পক্ষ থেকে এ হজ্জ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, শুবরুমা কে? লোকটি বলল, সে আমার ভাই, অথবা বলল সে আমার আত্মীয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার নিজের হজ্জ আদায় করেছ? সে বলল না, করিনি। আগে তোমার নিজের হজ্জ কর। তারপর শুবরুমার হজ্জ কর।’ এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় এ আমলে তিনি উপকৃত হবেন।
ঙ.কুরবানি করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দুম্বা কুরবানি করেন, জবাই করার সময় বললেন, এটা আমার উম্মতের ঐ সকল লোকদের পক্ষ থেকে যারা কুরবানি করতে পারেনি। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা জায়েয। সুতরাং কেউ যদি নিজের কুরবানির সাওয়াবে তার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও মৃত ব্যক্তির নিয়ত করে নেয়, তাহলে তার সাওয়াব তারা পেয়ে যাবে।
পরিশেষে একটি হাদিস দিয়ে শেষ করতে চাই...
হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের ওপর অবিচল ও দৃঢ় থাকার দোয়া কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে।’
হে আল্লাহ! আপনি প্রত্যেক মুসলমানকে তার মৃত আত্মীয়-স্বজন তথা মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করার এবং মৃত্যু পূর্বেই আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/এমএস