ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ক্ষমা কর!

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২০

মাহমুদ আহমদ : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দিনদিন বাড়ছে। ১৭-৩১ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশের স্কুল-কলেজ, মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা কি একটু ভেবে দেখেছি, একের পর এক বিপদ কেন আঘাত হানছে? কেন আমাদের বিবেক জাগ্রত হচ্ছে না? অথচ প্রতিনিয়ত পাপ কাজ করেই যাচ্ছি।

খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, অধিক মুনাফা লাভের আশায় অসৎ ব্যবসা-বাণিজ্য, অহরহ মিথ্যা বলাসহ এমন কোনো পাপ নেই যা আমরা করছি না? এমনকি মতের অমিল হলে হত্যা করতেও দিধা করছি না।

এতকিছু পরও আল্লাহ তাআলা তার বান্দার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখতে চান। তিনি চান তার বান্দারা যেন নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে পবিত্র করার চেষ্টা করে আর আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। চলার পথে কিছু না কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েই থাকে। এসব পাপের জন্য সব সময় ইসতেগফার ও দোয়া করা উচিত।

আমরা যদি আমাদের পাপ থেকে ক্ষমা চাই ও ইসতেগফার করে থাকি তাহলে হয়তো আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবেন এবং আমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসতেগফারের সঙ্গে লেগে থাকে অর্থাৎ সব সময় ইসতেগফারে নিয়োজিত থাকে আল্লাহ তাআলা তাকে সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধারের পথ তৈরি করে দেন আর প্রত্যেক দূরাবস্থা থেকে উত্তরণের রাস্তা বের করে দেন আর তাকে সে সব রাস্তায় দান করেন যা সে ধারণাও করতে পারে না।’ (আবু দাউদ)
তাই আমাদের উচিত, সব সময় ইসতেগফারে রত থাকা। আমরা যখন যেই অবস্থাতেই থাকি না কেন, আমরা ইচ্ছা করলেই মহান আল্লাহকে স্মরণ করতে পারি। আমাদের কারো জানা নেই যে, কখন, কোন অবস্থায় মৃত্যু ঘটবে। তাই আামরা যদি আমাদের দোষ-ত্রুটি থেকে ক্ষমা পেতে চাই তবে ইসতেগফারের বিকল্প নেই।

মনে রাখতে হবে
আমি ভুল করেছি, তারপর আমার মাঝে উপলব্ধি হলো আর আমি এর জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা চাইলাম আর তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিলেন। তাই বলে বার বার ভুল করবো আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবো। এমনটি ঠিক নয়।

মুমিন একই ভুল বার বার করে না। আমাদেরকে এমনভাবে ইস্তেগফার করতে হবে যেন আমার দ্বারা দ্বিতীয়বার এমন ভুল আর কখনও সংঘটিত না হয়।

এছাড়া সব সময় মহান আল্লাহ তাআলার কাছে এই প্রার্থনা করতে হবে, যেভাবে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসেরিন। (সুরা আরাফ: আয়াত ২৩)
অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।’
আমরা যেন সর্বদা মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও তওবা করতে থাকি এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন-
وَأَنِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘ওয়া আনেসতাগফিরু রাব্বাকুম ছুম্মা তুবু ইলাইহি।’
অর্থ : ‘আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর।’ (সুরা হুদ : আয়াত ৩)

তাই সব সময় আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে আর তার শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে। কেননা তিনি না চাইতেও আমাদের অনেক কিছুই দান করছেন। আমরা যদি এসবের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করি তাহলে আমরা অকৃতজ্ঞ হিসেবে পরিগণিত হব। হাদিসে এসেছে-

- হজরত নুমান বিন বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি অল্পে তুষ্ট হয় না সে অধিক পেলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। আর যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না সে আল্লাহ তাআলার করুণারাজিরও কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না। আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহরাজির উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ করাটাও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। আর আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহের উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ না করাটাই অকৃতজ্ঞতা।’ (মুসনাদে আহামাদ)

- হজরত মাআজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাত শক্ত করে ধরলেন আর বললেন, ‘হে মাআজ! আল্লাহর কসম! সত্যিই আমি তোমাকে ভালোবাসি’ অতপর তিনি বললেন, ‘হে মাআজ! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি প্রত্যেক নামাজের পর এই দোয়া করতে ভুলে যেও না-
اَللَّهُمَّ أعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদিকা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে শক্তি-সামর্থ্য দান কর যেন আমি তোমার (জিকির) স্মরণ করতে পারি, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আর তোমারই ইবাদত আরও উত্তমরূপে করতে সক্ষম হই।’ (আবু দাউদ)

আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীকে করোনাসহ যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করুন। ক্ষমার চাদরে আবৃত রাখুন সবাইকে। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ

আরও পড়ুন