করোনা থেকে বাঁচতে যেসব বিষয় মেনে চলা জরুরি
অধিকাংশ সংক্রামক ব্যাধি মহামারী হিসেবে পরিচিত। করোনা ভাইরাস তার একটি। প্রাণঘাতি এ সংক্রামক ব্যাধি করোনা বাংলাদেশেও সনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। চীনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হলেও বিশ্বের অনেকে দেশে এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মহামারী করোনা প্রতিরোধে রয়েছে বিশেষ কিছু দোয়া, আমল ও করণীয়। যা তুলে ধরা হলো-
মহামারী দেখা দিলে করণীয়
হাদিসের পরিভাষায় বেশির ভাগ মহামারীই সংক্রামক। এ কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহামারী আক্রান্ত অঞ্চলে অবাধ যাতায়াত বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন-
‘তোমরা কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং মহামারী অঞ্চলে অবস্থান করলে সে জায়গা ছেড়ে চলে এসো না। আবার কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করে থাকলে, সে জায়গায়ও গমন করো না।’ (তিরমিজি)
হাদিসের এ নির্দেশনা অনুসরণ করে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর স্থগিত করেছেন। বুখারির বর্ণনায় এসেছে-
‘সিরিয়ায় মহামারী দেখা দিলে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার গুরুত্বাপূর্ণ কূটনৈতিক সফর স্থগিত করেন।’
>> মহামারী করোনায় মানুষের জন্য হাদিসের নির্দেশনা-
করোনাসহ যে কোনো সংক্রামক রোগ-ব্যাধিতে অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা না করে হাদিসের নির্দেশনাগুলো মেনে চলা জরুরি। আর তাতে রয়েছে সুস্থতা, সাওয়াব ও কল্যাণ।
সে কারণে সংক্রামক ব্যাধি করোনা ভাইরাস কোথাও দেখা দিলে সুস্থ মানুষদের সেখানে না যাওয়া। আবার করোনা আক্রান্ত অঞ্চলে অবস্থান করলে সেখান থেকে করোনাত আক্রান্ত অঞ্চলে না আসা।’ মহামারী সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনাগুলো হলো-
- ‘মহামারী পীড়িত স্থানে (গ্রাম বা শহরে) প্রবেশ নিষেধ। পক্ষান্তরে কেউ যদি আগে থেকেই আক্রান্ত অঞ্চলে অবস্থান করে থাকে তাহলে সেখান থেকে পলায়ন করাও নিষেধ। মহামারী আক্রান্ত এলাকা থেকে পলায়ন করা জেহাদের ময়দান হতে পলায়ন করার মতোই অপরাধ।’ (বুখারি)
- ‘যখন মহামারী ছড়িয়ে পড়বে, আর তুমি সেখানেই রয়েছো, তখন সেখানে তুমি অবস্থান করবে (সেখান থেকে পলায়ন করবে না)।’ (মিশকাত)
- ‘প্লেগ শাস্তির প্রতীক। আল্লাহ তাআলা তা দ্বারা তাঁর বান্দাদের কতিপয় ব্যক্তিকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। তাই কোনো অঞ্চলে এর প্রভাবের খবর পেলে, তোমরা সেখানে যেয়ো না এবং কোনো অঞ্চলে অবস্থানকালে সেখানে প্লেগ লক্ষ্য করলে সেখান থেকে পালিয়েও যাবে না।’ (মুসলিম)
- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি উত্তরে বলেন, ‘এটি এক ধরনের আজাব। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের প্রতি ইচ্ছা করেন, তাঁদের উপর তা প্রেরন করেন। আর আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদের উপর তা রহমত করে দিয়েছেন। অতএব কোনো ব্যক্তি যখন প্লেগ রোগে আক্রান্ত অঞ্চলে সাওয়াবের আশায় ধৈর্যধারন করে অবস্থান করে এবং অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন তা-ই হবে, এছাড়া আর কোনো বিপদ তার উপর আসবে না, তাহলে সে একজন শহীদের সমান সাওয়াব পাবে।’ (বুখারি)
- ‘মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যাক্তি শহিদ।’ (মিশকাত)
- উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহিদ, যে ব্যক্তি প্লেগ বা মহামারীতে মারা যায় সে শহিদ। যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মারা গেছে সে শহিদ। যে নারী গর্ভের সন্তানসহ মৃত্যুবরণ করেছে, সেও শহিদ।’ (দারেমি)
মহামারী করোনা থেকে বাঁচতে করণীয় আমল ও দোয়া-
মহামারী করনোসহ সব সংক্রামক ব্যাধি ও অসুবিধা থেকে বাঁচতে বিশ্বনবি ঘোষিত বিশেষ দোয়াটি সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলো যথাযথ আদায় করা এবং হাদিসের নির্দেশনাগুলো মেনে চালা জরুরি। আর তাহলো-
>> বেশি বেশি ইসতেগফার করা
অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও আল্লাহর অবাধ্যতায় সংক্রামক ব্যাধিসহ নানান ধরনের মহামারী দেখা দেয়। তাই প্রাণঘাতি মহামারী করোনা থেকে বাঁচতে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া। অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সব সময় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকা।
>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিন বার বলবে-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামায়ি, ওয়া হুয়াসসাম উল আলিম।’
সকাল হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তির উপর আকস্মিক কোনো বিপদ আসবে না। আর যে ব্যক্তি সকালে তিনবার এ দোয়া পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো বিপদ আসবে না।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)
অর্থ : ‘আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’
>> اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
>> اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’ (তিরমিজি)
করোনামুক্ত থাকতে আর যেসব বিষয় মেনে চলা জরুরি-
করোনা প্রতিরোধে সংক্রামক এ ভাইরাস আক্রান্ত অঞ্চলে চলাচলকারী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। তা হতে পারে এমন-
>> জনসমাগম এড়িয়ে চলা চেষ্টা অব্যাহত রাখা। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়াই ভালো। যতটা সম্ভব ঘরেই থাকার চেষ্টা করা।
>> ঘরের বাইরে একান্ত প্রয়োজনে বের হলেও সঙ্গে মাস্ক নেয়া।
>> বাস-ট্রেন-লঞ্চসহ সব গণপরিবহনে যাতায়াত এড়িয়ে চলার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
>> ঘরে কিংবা অফিসে প্রবেশ করতেই হ্যান্ডওয়াশ বা তরল সাবান কিংবা জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে উভয় হাত জীবানুমুক্ত করে নেয়া।
>> ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখা। পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের জন্য সকাল-সন্ধ্যায় কিছু সময় ঘরের দরজা-জানালা খুলে রাখা।
>> রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সুস্থ ও শক্তিশালী থাকতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
>> ফলমূল ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি গ্রহণ করা।
>> রান্না বা প্রক্রিয়ার আগে তা ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নেয়া কিংবা ধুয়ে নেয়া।
>> আমিষজাতীয় খাবার- ডিম, গোশত কিংবা মাছ রান্নার সময় তা ভালোভাবে সিদ্ধ করে নেয়া।
>> করোনা বা করোনাজাতীয় সংক্রামক রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হলে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা এবং অন্যদের সংক্রামক ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
মহামারী করোনা থেকে বাঁচত হাদিসের দিক নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করোনা থেকে হেফাজত করুন। হাদিসের দিক-নির্দেশনা ও করণীয়গুলো যথাযথ পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম