হালাল উপার্জন সম্পর্কে যা বলেছেন বিশ্বনবি
হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। মানব জীবনে বৈধ উপায়ে জীবকা উপার্জন করা অপরিহার্য সাওয়াবের কাজ। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে উপার্জন হবে না।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা হালাল বস্তু গ্রহণের ব্যাপারে একাধিক বার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাহলো-
- আমি যে রিয্ক তোমাদের দিয়েছি তা থেকে পবিত্রগুলো আহার করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭২)
- তোমাদের উপার্জিত পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬৭)
- পবিত্র বস্তু থেকে আহার কর এবং সৎ কর্মশীল হও। তোমরা যা করছ আমি তা জানি।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৫১)
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও হালাল জীবিকা উপার্জন ও তা গ্রহণ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন-
‘হালাল জীবিকার সন্ধান করা অন্যান্য ফরজের সঙ্গে আরেকটি ফরজ।’ (মিশকাত)
উপার্জন সম্পর্কে বিশ্বনবির নির্দেশ
নিজের হাতে আয় উপার্জন করা সর্বোত্তম কাজ। নবি-রাসুলগণ নিজ হাতে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতেন। রিজিক দেয়ার মালিক আল্লাহ। তিনিই বান্দাকে উত্তম রিজিক দান করেন। সে কারণে হারাম ও মাকরুহ (সন্দেহযুক্ত) জীবিকা বর্জন করা মুমিনের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-
- ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে রিজিক তালাশ কর, তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমাদের ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ১৭)
- অতপর নামাজ শেষ হলে তোমরা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক)তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)
হালাল রিজিক উপার্জন করা মুমিনের জন্য ফরজ। সে কারণে তিনি একাধিক হাদিসে বৈধ উপায়ে জীবিকা উপার্জনের তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
- হজরত জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং বৈধ উপায়ে জীবিকা অর্জন করো। কেননা কোনো প্রাণীই তার নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও কিছু বিলম্ব ঘটে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং সৎভাবে জীবিক অর্জন করো। যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো।’ (ইবনে মাজাহ)
- আবু ইয়ালার বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- হে লোকেরা! সম্পদের প্রাচুর্যতাই ধনী নয় বরং আসল ধনী হচ্ছে মনের ঐশ্বর্য। আর আল্লাহ তার বান্দাকে তাই দেবেন যা তিনি তার রিজিকে রেখেছেন। সুতরাং সৎভাবে উপার্জন করো। যা হালাল করা হয়েছে তা গ্রহণ করো এবং যা হারাম করা হয়েছে তা বর্জন করো।’
- হজরত আবু হুমাইদ আস-সাঈদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা দুনিয়ার সম্পদ উপার্জনে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা যার জন্য যা সৃষ্টি করা হয়েছে, সে তা পাবেই।’ (ইবনে মাজাহ)
বৈধ জীবিকা উপার্জনে বিশ্বনবি উৎসাহ প্রদান
বৈধ উপায়ে জীবিকা উপার্জন করার রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। আর তাতে প্রকাশ পায় পারিবারিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা। বৈধ পন্থায় উপার্জন পরিচ্ছন্ন ও উন্নত জীবন গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। হাদিসে এসেছে-
- হজরত মিক্বদাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি নিজ হাতে উপার্জনের খাবারের ছাড়া উত্তম কোনো খাবার খেতে পারে না। নবি (হজরত) দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন।’ (বুখারি, মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ)
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ সবচেয়ে পবিত্র আহার যা গ্রহণ করে, তা হচ্ছে তার নিজের উপার্জিত আহার। আর তার সন্তানও হচ্ছে তার উপার্জিত সম্পদ।’ (ইবনে মাজাহ)
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘কোনো মানুষ নিজ হাতের উপার্জনের চেয়ে উত্তম উপার্জন আর কিছুই করতে পারে না।’
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘উত্তম উপার্জন হলো নিজ হাতের উপার্জন এবং যে কোনো বৈধ ব্যবসার উপার্জন।’ (মুসনাদে আহমদ)
হালাল উপার্জন যেমন ইবাদত কবুলের শর্ত। আবার উপর্জন করতে গিয়ে যদি কারো পরিশ্রম হয় এবং সে পরিশ্রমে ঘাম ঝরে তবে ওই ব্যক্তির ঘামের বিন্দুতে তার গোনাহ মাফ হয়। হারাম মিশ্রিত জীবিকায় গঠিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি।
এমনকি হারাম উপায়ে উপার্জিত অর্থদানে সাওয়াবও থাকে না। তা নিজের জন্য যেমন বরকত হয় না তেমনি উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে তা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে যায়।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত বৈধ পন্থায় জীবিকা ও সম্পদ উপার্জন করা। হারাম তথা অবৈধ পন্থা ত্যাগ করা। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ মেনে বৈধ জীবিকা অর্জনের পথ অবলম্বন করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বৈধ উপায়ে উপার্জন করার তাওফিক দান করুন। হারাম থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ