ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

ওমর হলেন আল-ফারুক

প্রকাশিত: ১০:২৯ এএম, ০৪ অক্টোবর ২০১৫

উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া সাহাবাদের একজন। হজরত আবু বকরের মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব নেন। তাঁর শাসনামলেই খিলাফতের সীমানা অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এসময় সাসানীয় সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুইতৃতীয়াংশ মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং জেরুজালেম মুসলিমদের হস্তগত হয়। আমিরুল মুমিনিন উপাধিটি সর্বপ্রথম তার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। ইতিহাসে তাকে প্রথম উমর হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। জাগো নিউজে তার সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো-

বংশ ও জন্ম
আসল নাম ওমর, ডাক নাম আবূ হাফস। পরবর্তীকালে উপাধি পান ফারুক। বনু আদি গোত্রের সূর্যসন্তান খাত্তাব ছিলেন তাঁর বাবা এবং মায়ের নাম হানতামা, তিনি ছিলেন বনু মাখজুম গোত্রভূক্ত। হজরত ওমরের আম্মা কুরাইশ বংশের সেই অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপতি হিশাম ইবনে মুগীরার কন্যা। আব্বা আম্মা উভয়েই কুরাইশ বংশের লোক। তিনি ৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

প্রাথমিক জীবন
পড়া লেখার রীতি প্রচলিত না থাকলেও তিনি লিখা-পড়া শিখার পাশাপাশি সমরবিদ্যা, অশ্বারোহন ও কুস্তি শিখেন শৈশবেই। কুস্তিগীর, সুবক্ত এবং গোত্রের বিরোধ মিমাংশাকারী হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। ব্যবসায়িক কাজে বাজেন্টাইন, সাসানীয় সম্রাজ্য সফরকালে তিনি রোমান ও পারসিয়ান পণ্ডিতদের সঙ্গে সাক্ষাত ও সামাজিক অবস্থার বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ৬১০ সালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম প্রচার শুরু করলে মক্কাবাসীর মত তিনিও প্রথম পর্যায়ে ইসলামের বিরোধীতা করেছিলেন। কুরাইশদের একতায় বিশ্বাস করে এবং ইসলামের উত্থানকে কুরাইশদের মধ্য বিভাজন সৃষ্টির কারণ বিবেচনায় তার হাতে মুসলিমরা নির্যাতিতও হয়। এক পর্যায়ে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও হত্যা করতে চেয়েছিলেন।

ইসলাম গ্রহণ
তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ছিল আকস্মিক ও অত্যন্ত হৃদয় গ্রাহী। আসলে ওমর প্রকৃতিগত দিক থেকেই ছিলেন অত্যন্ত কঠোর প্রকৃতির মানুষ। যখন তিনি জানতে পারলেন বোন ফাতিমা, ভগ্নিপতি এবং চাচাতো ভাই যায়িদ, দাসী লাবিনা এমন কি তার বংশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বন্ধু নাঈম ইবন আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তখন তিনি স্বাভাবিক ভাবেই মাথা ঠিক রাখতে পারেননি। যাতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদেরকে মারাত্মকভাবে আহত করতেও বাঁধেনি তাঁর। কিন্তু আপন সহোদরার সমস্ত শরীর এবং মুখ যখন রক্তাক্ত দেখেছেন তখন আর নিজেকে জাহেলিয়াতের ওপর মজবুত রাখতে পারেননি। মুহুর্তের মধ্যে মন থেকে শিরকের সমস্ত কালিমা উবে গেলে তিনি সত্যের বর্ণালী আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠলেন। সংগে সংগে সহোদরা ফাতিমার নিকট থেকে সূরা ‘তাহা’র লিখিত অংশটুকু নিয়ে পড়লেন, আর স্বাগত বলে উঠলেন, ‘তোমরা আমাকে রাসূলের কাছে নিয়ে চলো।’ তাইতো তিনি ৬১৬ সালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পদ মোবারকে তাঁর তলোয়ার বিসর্জন দিয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি নিজেই আবু জাহলকে তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবর জানান।

ওমর হলেন আল-ফারুক
তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ``হে আল্লাহর রাসূল! বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা কত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, ``তোমাকে নিয়ে ৪০ (চল্লিশ) জন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এটাই যথেষ্ট। আজ থেকে আমরা এই চল্লিশ জনই কাবা গৃহে গিয়ে প্রকাশ্যে মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করবো। ভরসা মহান আল্লাহর। অসত্যের ভয়ে আর সত্যকে চাপা পড়ে থাকতে দেব না। সেদিনই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে "ফারুক" উপাধি দেন।

হিজরত
মক্কায় নির্যাতনের কারণে এবং মদিনা থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আসায় অধিকাংশ ব্যক্তিই ধরা পড়ার ভয়ে রাতে মদিনায় হিজরত করতে থাকে। কিন্তু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সাঈদ ইবনে যায়িদকে সঙ্গে নিয়ে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে মদিনায় হিজরত করেন।

যুদ্ধ-বিগ্রহ
ইসলাম গ্রহণের পর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবিত থাকা পর্যন্ত এবং জীবনে সংঘটিত প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বদর থেকে শুরু করে ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত সব যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেন।

খিলাফত লাভ
হজরত আবূ বকরের ইন্তেকালের আগেই তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে খলিফা নির্বাচিত করা হয়। তাঁর শাসনকাল এখনো পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হিসাবে স্বীকৃত। ‘দশ বছরের স্বল্প সময়ে গোটা বাইজান্টাইন, রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটান। তাঁর যুগে বিভিন্ন অঞ্চলসহ মোট ১০৩৬ টি শহর বিজিত হয়। ইসলামী হুকুমাতের নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা মূলত তাঁর যুগেই হয়। সরকার বা রাষ্ট্রের সকল শাখা তাঁর যুগেই আত্ম প্রকাশ করে। তাঁর শাসন ও ইনসাফের কথা সারা বিশ্বে মানুষের কাছে কিংবদন্তীর মত ছড়িয়ে আছে। যিনি তাঁর প্রজা সাধারণের অবস্থা দেখার জন্য রাতের অন্ধকারে মহল্লায় মহল্লায় ছুটে বেড়াতেন। নিজে পিঠে করে খাদ্যের বস্তা অভূক্তদের বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। দুধ বিক্রেতা সত্যবাদিনী যুবতীকে নিজের পুত্রবধু হিসাবে বরণ করে নিয়েছেন। খৃষ্টান শাসকের আমন্ত্রণে জেরুযালেম যাওয়ার সময় উটের রাখালকে পর্যায়ক্রমে উটের পিঠে উঠিয়ে নিজের রাখাল হিসাবে উটের রশি টেনে নিয়ে এগিয়ে গেছেন। অর্ধ দুনিয়ার বাদশাহ হয়েও নিজের রুটি রুজির জন্য ব্যবসাপাতি করেছেন।

ইন্তেকাল
দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবী ৬৩ বছর বয়সে হিজরী ২৩ সনের ২৫ শে জিলহজ সোমবার ফজরের নামাযরত অবস্থায় আবূ লুলু ফিরোজ নামে মুগীরা ইবন শুবার অগ্নি উপাসক দাস তাঁকে ছুরিকাঘাত করেন। আহতাবস্তায় ৩ দিন অতিবাহিত করেন। দশ বছর ছয় মাস চার দিন খিলাফতের দায়িত্ব পালনের পর মুসলিম দুনিয়ার আমিরুল মুমিনিন বুধবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)।

দাফন
হজরত সুহাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইমামতিতে তাঁর জানাজা নামাজ আদায়ের পর মসজিদে নববিতে হজরত আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়।

জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]

জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/আরআইপি