কারো সঙ্গে দেখা হলে যে কাজগুলো জরুরি বলেছেন বিশ্বনবি
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ জীবনে চলতে গেলে পারস্পরিক সুসম্পর্কের বিকল্প নেই। একে অপরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ইসলাম কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। যা মানুষকে আত্মকেন্দ্রীক হওয়ার পরিবর্তে সাম্য ও সম্প্রীতি শেখায়।
মানবতার কল্যাণে সাম্য ও সম্প্রীতি অন্যতম বন্ধন তৈরি করে ইসলাম। মানুষের চলাফেরায় একে অপরের সঙ্গে যে কাজগুলো একান্ত প্রয়োজন সে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর বিষয়গুলো হলো-
>> সালাম বিনিময়
আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম সালাম। সালামের মাধ্যমে একে অপরের শান্তি রহমত ও বরকত কামনা করে। এ কারণেই কথা বলার আগে সালামের মাধ্যমে অভিবাদন জানানোর কথা বলা হয়েছে হাদিসে।
এ সালামের মাধ্যমেই মুমিন বান্দার ভালোবাসা তৈরি হয়। মুমিনের পারস্পরিক ভালোবাসা জান্নাতের পথকে সুগম করে তোলে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ঈমানদার হতে পারবে না পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি না হলে। আমি কি তোমাদের এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হবে। তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।’ (মুসলিম)
>> মুসাফাহা করা
সালাম বিনিময়ের সঙ্গে এক মুসলমান অপর মুসলমানের সঙ্গে মুসাফাহা তথা হাত মেলাবে। একে অপরের জন্য ক্ষমার দোয়া করবে। যে ভাবে দোয়া করতে শিখিয়েছেন বিশ্বনবি। আর তাহলো-
يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَ لَكُمْ
উচ্চারণ : ইয়াগফেরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম
অর্থ : আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের ক্ষমা করুন।’
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে দুজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়, এরপর তারা মুসাফাহা করে, তারা (সেই স্থান থেকে) পৃথক হওয়ার আগেই তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়।’(আবু দাউদ, তিরমিজি)
> পরস্পরের দৃষ্টির হেফাজত করা
একই সমাজের চলাফেরায় নারী যেমন অন্য বেগানা পুরুষের দিকে তাকাবে না ঠিক পুরুষও অন্য নারীর দিকে তাকাবে না। উভয়েই নিজেদের দৃষ্টির হেফাজত করবে। দৃষ্টির হেফাজত প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘(হে রাসুল!) মুমিনদের (নারী-পুরুষ) বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে...।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩০)
> একান্তে নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না করা
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কোনো (বেগানা) নারীর সঙ্গে নির্জনে অবস্থান না করে। কেননা শয়তান সেখানে তাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে যায়। (সে তাদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়)।’(তিরমিজি)
> মেহমানকে স্বাগত জানানো
কারো বাড়িতে কিংবা সমাজে কোনো ব্যক্তি আগমন করলে তাকে অভিবাদন বা স্বাগত জানানো সুন্নাত। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘মদিনার বনু কুরাইজার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ডাকেন। তিনি (সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু) একটি গাধায় চড়ে আসেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের নেতা সাদের দিকে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাও।’ (মুসলিম)
> কারো সম্মানে সেজদা না করা
কোনো মেহমান কিংবা নেতৃস্থানীয় কেউ আসলে তাকে অভিবাদন দেয়া যাবে। দাঁড়িয়ে স্বাগত জানানো যাবে কিন্তু তার সামনে সেজদা কিংবা মাথা নত করা যাবে না। ইসলামে এটি নিষিদ্ধ। হাদিসে এসেছে-
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কেউ যখন তার ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে , তখন কি মাথা নত করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না’, বরং মুসাফাহা করবে।’ (ইবনে মাজাহ)
> হাসি মুখে সৌজন্যতা বিনিময় করা
কোনো মুসলমানের সঙ্গে দেখা হলে পারস্পর হাসি মুখে মিলিত হওয়া। বিশ্বনবি বলেছেন, কোনো মুসলমানের সামনে হাসি-খুশি থাকলে কিংবা হাসি মুখে কথার জবাব দিলে তাতে সাদকার সাওয়াব পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে-
>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
- অন্যের জন্য তোমার মুখের হাসি সদকাস্বরূপ।
- তোমার সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ সদকাস্বরূপ।
- পথহারাকে পথ দেখিয়ে দেয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।
- দৃষ্টিহীনকে পথ দেখানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।
- রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড্ডি সরিয়ে দেয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।
- তোমার বালতি থেকে অন্যের বালতি ভরে দেয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি)
>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কোনো ভালো কাজকে ছোট মনে করবে না, যদিও তা অন্যের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাতের ব্যাপারেই হোক না কেন।’(মুসলিম)
সমাজ জীবনে চলতে গেলে একে অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতে ছোট ছোট এ কাজগুলো যথাযথ পালন করা জরুরি। আর এতে রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণ ও রহমত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পাস্পপরিক সুসম্পর্ক, সাম্য ও সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে প্রিয় নবির এ আমলগুলো নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের আলোকে জীবন গঠন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ