মুসলিমরা বাবরি মসজিদ না পেলেও শিখরা পেয়েছে শহীদগঞ্জ গুরুদারা!
মুসলিমরাই পারে ত্যাগ করতে। মুসলিমদের ত্যাগ পুরো বিশ্বের জন্য রোল মডেল। বার বার এমনটিই প্রমাণিত হয়েছে। আর এতেই যুগে যুগে বিজয় লাভ করেছে ইসলাম। যদিও ভারতের অযোধ্যায় অন্যায়ভাবে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর সে স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী উগ্রপন্থীরা।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আদালতের রায়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে পাকিস্তানের লাহোর শহীদগঞ্জের গুরুদারার শিখ ধর্মাবলম্বীরা। ভিন্ন মত পোষণ করেছেন ভারতের সাবেক বিচারপতি অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত শনিবার (৯নভেম্বর) ষোল শতকের প্রাচীন ধ্বংস করে দেয়া বাবরি মসজিদ-এর জায়গাকে হিন্দুদের হাতে তুলে দিয়েছে। সেখানে এবার নির্মাণ করা হবে রাম মন্দির।
মুসলমানরা তাদের ৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো মসজিদ-এর জায়গা যেদিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে হারালো ঠিক সেদিনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার দেশের শিখ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ যাত্রার জন্য বিনা পাসপোর্ট ও মাসুলে পাকিস্তানের শহীদগঞ্জের গুরুদারায় যাওয়ার জন্য কর্তারপুর করিডোরের উদ্বোধন করেছেন। মুসলমানদের অনেকেই এটিকে কাঁটা ঘায়ে লবন ছিটানোর মতো মনে করেছে।
পাকিস্তানের লাহোর শহীদগঞ্জ মসজিদ (গুরুদারার) রয়েছে আরো চাঞ্চল্যকর ইতিহাস। মসজিদের পক্ষে যে ইতিহাসের দাবি অনেক শক্তিশালী। যা এখন শিখ ধর্মাবলম্বীদের দখলে। যেখানে এক সময় মসজিদ ছিল। এমনই এক সংবাদ প্রকাশ করেছে আনাদোলু এজেন্সি।
ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানরা বাবরি মসজিদের ক্ষতিপূরণ থাক দূরের কথা মসজিদের জায়গাও বুঝে পায়নি অথচ পাকিস্তানে সংখ্যালঘু শিখরা তাদের মসজিদ দখল করে বানানো গুরুদারা ঠিকই ফেরত পেয়েছিল। যেখানে তীর্থযাত্রায় যেতে বিনা পাসপোর্ট ও ফি ছাড়াই করিডোর উম্মোচন করেছে প্রধানমন্ত্রী মোদি।
বাবরি মসজিদের মামলার রায় ইস্যুতে পাকিস্তানের শিখ ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, ‘লাহোরের শহীদগঞ্জ গুরুদারা থেকে ভারতের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের শিক্ষা নেয়া উচিত ছিল।’
পাকিস্তানের শহীদগঞ্জের (মসজিদ) গুরুদারার ইতিহাস
ভারতের বাবরি মসজিদ এবং লাহোর শহীদগঞ্জ গুরুদারার মাঝে অনেক মিল রয়েছে। দুটোর জন্যেই অনেক মামলা মোকদ্দমা করতে হয়েছে। তবে পার্থক্য নিরূপণ হয়েছে মামলার রায় নিয়ে। আর তাহলো-
পাকিস্তানের শহীদগঞ্জের শিখরা মসজিদ দখল করে গুরুদ্বারা বানিয়েও তা ফেরত পেয়েছিল আর ভারতের মুসলিমরা অযোধ্যায় স্থাপনা দখল করা ছাড়া খালি জায়গা নির্মাণ করা মসজিদ ও জায়গা ফেরত পেল না।
১৬৫৩ সালে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে লাহোরের কোতোয়াল আবদুল্লাহ খান শহীদগঞ্জ মসজিদ নির্মাণ করেন। সেটি ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত ১৫২ বছর মসজিদ হিসেবে ব্যবহার হয়।
১৭৯৯ সালে যখন রাজা রঞ্জিত সিংয়ের নেতৃত্বে শিখ সেনারা শহীদগঞ্জ দখল করে। তখন থেকে তারা শহীদগঞ্জ মসজিদটিকে শিখদের উপাসনালয় গুরুদারায় পরিণত করে এবং মুসলমানদের সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়।
পরবর্তীতে ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশরা শিখদের পরাজিত করে লাহোর দখল করে। সে সময় মসলিমরা গুরুদারা থেকে মসজিদটি ফেরত পেতে ব্রিটিশ আদালতে আবেদন করে। ব্রিটিশরা মুসলমানদের সে আবেদন ৫১ বছর দেরি হওয়ার অজুহাতে খারিজ করে দেয়। যার ফলে লাহোরের শহীদগঞ্জ মসজিদ এখনো শিখরা গুরুদারা হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে।
মুসলমানরা এরপর গুরুদারাকে মসজিদে রূপান্তরিত করতে অনেক সুযোগই পেয়েছে কিন্তু তারা তা করেনি। এমনকি ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান দেশ ভাগের সময়ও অল্প কয়েক জন শিখ ছাড়া প্রায় সবাই শহীদগঞ্জ গুরুদারা ছেড়ে চলে যায়। শহীদগঞ্জে মসজিদ ভেঙে নির্মিত গুরুদারা আজও অক্ষত অবস্থায় শিখদের উপসনালয় হিসেবেই ব্যবহৃত হয়।
দেশভাগের পর থেকে মুসলিম ইচ্ছা করলেই লাহোরের শহীদগঞ্জের এ গুরুদারাকে দখল করে মসজিদ বানাতে চাইলে বাধা দেয়ার কেউ ছিল না এবং এখনও নেই। কিন্তু মুসলিমরা এটা করেননি।
এ কারণেই বাবরি মসজিদ মামলার রায়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন শিখ নেতারা বলছেন-
‘সংখ্যালঘুদের অধিকার কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, পাকিস্তানের লাহোরের শিখদের গুরুদারা থেকে পুরো ভারতের শিক্ষা নেয়া উচিত।’
শুধু তা-ই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ের নিরাপত্তা দিয়েছে মুসলিমরা। আবার মুসলিমদের সহযোগিতায় অনেক জায়গায় ভিন্নধর্মী উপাসনালয় তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশেও হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও মন্দির রক্ষায় মানববন্ধন তৈরি করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
বাবরি মসজিদ ইস্যুতে ভারতের মুসলমানরা বাবরি ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ ও মসজিদের জায়গা না পেলেও তারা শান্তি ও সম্প্রীতির বৃহত্তর স্বার্থে ভারতের আদালতের রায় মেনে নিয়েছে। দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমানরা ইসলামের সুন্দর সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের প্রমাণ দিয়েছে আর নিজ জাতি ও বিবেকের কাছে হেরে গেছে ভারতীয় আদালত ও কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। শহীদগঞ্জের (মসজিদ) গুরুদারাই এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত...
এমএমএস/এমকেএইচ