বাবা-মার সঙ্গে সন্তানের সুসম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহর যত নির্দেশনা
বাবা-মার সঙ্গে সন্তানের সুসম্পর্ক নিয়ে কুরআন এবং হাদিসে অনেক নির্দেশ ও নসিহত রয়েছে। কুরআনের এসব নির্দেশ ও হাদিসের নসিহত সন্তানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাওহিদের দায়িত্ব পালনের পরপরই বাবা-মার খেদমতের আহ্বান করা হয়েছে কুরআনে।
হাদিসে পাকে প্রিয় নবি বাবা-মাকে জান্নাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যারা বাবা-মার খেদমত করে তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে না। তাদের জন্য সুস্পষ্ট জাহান্নামের কথা বলেছেন বিশ্বনবি।
সুতরাং প্রত্যেক সন্তানের উচিত কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বাবা-মার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। তাওহিদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাবা-মার খেদমতের মাধ্যমে পরকালের নাজাতের পথ উন্মুক্ত করা।
কুরআন ও হাদিসে বাবা-মার ব্যাপারে যেসব নির্দেশনা এসেছে তাহলো-
>> তাওহিদের দ্বিতীয় দায়িত্ব
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং বাবা-মার সাথে উত্তম ব্যবহার কর।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)
>> বাবা-মাকে ধমক না দেয়া
إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا
তাদের মধ্যে একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে, তাদের উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বল।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)
>> বাবা-মার অনুগ্রহ স্মরণ করা
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)
>> অমুসলিম বাবা-মার প্রতি অনুগ্রহ করা
وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا
পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৫)
> ‘মা’র বিশেষ অবদান
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমকে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল! কে সেই ব্যক্তি; যার সঙ্গে আমি সবচেয়ে উত্তম আচরণ করবো?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার মা।’
লোকটি বলল, তারপর কে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার মা।’
লোকটি বলল, তারপর কে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার মা।’
(চতুর্থ বার) লোকটি বলল, তারপর কে?
এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার বাবা।’
> বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব পালন জিহাদের সমতুল্য
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন এবং জেহাদের যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার পিতামাতা কি জীবিত আছে? তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, ‘পিতামাতার সেবাই তোমার জন্য জেহাদ।’ (মুসলিম)
> মৃত্যুর পর তাদের জন্য দোয়া করা
হজাত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার ৩ আমল ছাড়া সব কর্মফল বন্ধ হয়ে যায়। তার একটি হলো সাদকায়ে জারিয়া। দ্বিতীয়টি হলো উপকারি জ্ঞান। তৃতীয়টি হলো নেক সন্তান, যে তার পিতামাতার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম)
> সুসম্পর্ক বজায় না রাখার কুপরিণতি
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সে ক্ষতিগ্রস্ত হোক! সে ক্ষতিগ্রস্ত হোক! সে ক্ষতিগ্রস্ত হোক!
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, কে সেই ব্যক্তি? হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তিনি উত্তরে বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতামাতা উভয়কে কিংবা তাদের একজনকে তাদের জীবদ্দশায় পেয়েছিলো কিন্তু (পিতামাতার খেদমত করে) জান্নাত অর্জন করতে পারলো না।’ (মুসলিম)
> বাবা-মার অবাধ্যতা বড় পাপ
হজরত আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদের বড় পাপ সম্পর্কে অবহিত করব না? সাবাহায়ে কেরাম জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ’, (অবশ্যই আপনি অবহিত করবেন) হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা এবং পিতামাতার প্রতি অবাধ্য হওয়া।’ (বুখারি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন হাদিসের আলোকে পিাতামাতার খেদমত করার তাওফিক দান করুন। পিতামাতার খেদমতের মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ