জিলহজের প্রথম দশকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
হজ কোনো লোক দেখানো ইবাদত নয়। হজ পালন মুসলমানের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ ও আল্লাহর ভয়ের চেতনাকে জাগ্রত করে। ভ্রান্ত ধারণা কিংবা ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক কাজ থেকে হেফাজত এবং ইবাদাত বন্দেগিতে নিজেদের আত্মনিয়োগ করাই হজের দশকের দাবি। যা বিশ্বের সব মুসলমানকে এক ও ঐক্যবদ্ধভাবে ইবাদত বন্দেগিতে শামিল করে। এ দশকের করণীয় ও বর্জনীয়/দায়িত্ব ও কর্তব্য জাগো নিউজের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, আশরাফুল মাখলুকাত। ইসলাম এ সম্মান মানুষকে দিয়েছে। তা রক্ষা করার দায়িত্ব মানুষের। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায়, হিংসা-বিদ্বেষ অনুধাবন তথা ইচ্ছা শক্তির ক্ষমতা দান করেছেন। মানুষ তার নিজের সম্মান কিভাবে রক্ষা করবে সে সব করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়াদির বিস্তারিত বিবরণ কুরআনুল কারিমে ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যা রক্ষা করা মানুষেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
চলছে হজের মাসের প্রথম দশক। এ দশকের রয়েছে অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত। এ মাসের প্রথম দশক কেন আমাদের জন্য ফজিলতপূর্ণ হলো তা ইতোমধ্যে আমরা জাগো নিউজে তুলে ধরেছি। এ দশকের দায়িত্ব ও কর্তব্য জানার পাশাপাশি তার ইজ্জত ও সম্মান রক্ষা করা জরুরি।
প্রাক ইসলামি যুগে মানুষজন আত্মীয়-স্বজনসহ হজ পালনের নিয়তে সমবেত হতো পবিত্র ঘর বাইতুল্লায়। সেখানে তারা নিজেদের বংশীয় মর্যাদা ও আত্মগরিমার আসর জমিয়ে বসত, করত বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান। ইসলামের আগমনে যা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে শুরু হয়েছে নব্য জাহিলিয়াত। যার ভয়াবহতা অনেক প্রকট। অনেক মানুষ হজ করে লোকে হাজি ডাকবে বলে। নামের শুরুতে হাজি টাইটেল আসবে। মানুষ বড় বড় কুরবানির পশু ক্রয় করে একাধিক লোক দিয়ে, গাড়ি দিয়ে, স্লোগান দিয়ে, ফুলের মালা দিয়ে সাজিয়ে আনে। কে কত দাম দিয়ে, কত বড় গরু ক্রয় করতে পারে তার প্রতিযোগিতায় নামে। কুরবানির আগে ও পরে বাড়ির সামনে জাকাত ও গরুর চামড়ার টাকা বিলায় প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে। ইসলামে যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যা ইবাদাতের পরিবর্তে মস্তবড় গুনাহের কাজও বটে। সর্বোপরি যাতে ঘটে প্রাণহানির মতো ঘটনা। ইসলাম এ রকম পশু ক্রয়, কুরবানি, দান-খয়রাতকে সমর্থন করে না। আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা করেন- `নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবকিছুই সমগ্র বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।’
হজ হবে আল্লাহর জন্য, কুরবানি হবে আল্লাহর জন্য, তাকবির-তাসবিহসহ সব ইবাদত হবে আল্লাহর জন্য। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের উচিত প্রচার-প্রচারণা না করে প্রত্যেকের অঞ্চলের প্রকৃত অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে দান-সাদাকা, জাকাত, কুরবানির হাদিয়া, ফিতরার টাকা, চামড়ার টাকা নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দেয়া। এমনভাবে দেয়া যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের পূর্ণ অনুসরণ হয়। দান এমন হওয়া উচিত যে, ডান হাত কি দান করল বাম হাত তা জানে না। ইবাদাত-বন্দেগি এমন হওয়া উচিত নিজের স্ত্রীও যেন টের না পায়। তাহাজ্জুদ নামাজ এমনভাবে পড়া, অন্য কেউ যেন না জানে যে এ ব্যক্তি নিয়মিত তাহাজ্জুদ গুজার। রোনাজারি এমনভাবে করা যাতে মাওলার কাছে ব্যক্তির সব দুর্বলতা প্রকাশ করে, অন্যায় থেকে মুক্তি চাওয়া যায়। যা ইজতেমায়ী বা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রাণ খুলে বলা, চাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং ইবাদত হবে গোপনীয়।
জিলহজের প্রথম দশক ছাড়া হজ হয় না। এ দশকে আরাফায় না গেলে হজ হয় না। কুরবানি করার বিধান চালু হয়েছে এ দশকে। সুতরাং জিলহজের প্রথম দশকে গুরুত্বও অত্যধিক। কারণ রমজানের ফরজ রোজা ভাঙলে তা পরবর্তী রমজান আসার পূর্বে যে কোনো মাসে কাজা করা সম্ভব। কিন্তু হজের কাজগুলো এ দশকে না করলে পরবর্তী বছর ছাড়া আদায় করা সম্ভব নয়, বিধায় এর গুরুত্ব অনেক বেশি।
সুতরাং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর উচিত- জীবনের প্রতি কাজে ও কর্মে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা, ধর্মীয় বিধানের শিক্ষাকে সমুন্নত করা। জীবনের ঘটে যাওয়া ভুল ও গুনাহগুলো থেকে তাওবা করে সুন্দর জীবনে ফিরে আসা। বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে মশগুল রাখার পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদেরকেও এ ব্যাপারে উৎতসাহ দেয়া। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে স্মরণ করা। কুরআন হাদিসসহ ইসলামি বই-পুস্তক অধ্যয়ন করা। জামাতের সহিত নামাজ আদায় করা। হালাল-রুটি ও রুজির জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করা। সঠিক পদ্ধতিতে কুরবানি করা।
পরিশেষে...
প্রত্যেকের এ কথা মনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ আমাদের প্রভু, আমরা মুসলমান, ইসলাম আমাদের ধর্ম, আমরা এক উম্মাহভুক্ত বিধায় মহান আল্লাহ যেন উম্মাতে মুহাম্মাদিকে কুরআন-হাদিস মোতাবেক সঠিক পথের দিশা দান করেন। এ দশকে তার নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করেন। আমিন।
জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ইমেইল করুন- [email protected]
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/এইচআর/এমএস