ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

ছেলে-মেয়েদের অবাধ চ্যাটিং সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:১১ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নারী-পুরুষের অবাধ চ্যাটিং সম্পর্কে ইসলামের বিধান কী? বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ফেক আইডির কারণে অসংখ্য অঘটন ঘটছে। মানুষের ব্যক্তিগত পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সাইবার অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলেছে।

অপরিচিত ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ফেসবুক, টুইটার, গুগলেপ্লে, ইউটিউব, অ্যান্ড্রয়েড-এর অবাধ অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে অশ্লীলতা, পর্নোগ্রাফি, অসামাজিক কাজ ও সাইবার অপরাধ বেড়েই চলেছে। এসব ক্ষেত্রেই বা ইসলামের বিধান কী?

ছেলে মেয়েদের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিস্কার ধারণা লাভে কুরআনুল কারিমের দু'টি আয়াত তুলে ধরছি-

আল্লাহ তাআলা সুরা নুর-এর ৩০ নং আয়াতে পুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করেন-

‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।’

পরবর্তী আয়াতে নারীদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত আর কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)

আল্লাহ তাআলা নবি পত্নীদের উদ্দেশ্য  আয়াত নাজিল করেন-

‘হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলি যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩২)

উল্লেখিত আয়াতসমূহের আলোকে বুঝা যায় যে, শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নয়, কোনোভোবেই নারী-পুরুষের অবাধ চলাফেরা, কথা-বার্তা, বিভিন্ন কার্যক্রমে সমানতালে অংশগ্রহণ ইসলাম সমর্থন করে না।

আর এ অবাধ চ্যাটিং, লাইক, কমেন্টস ইত্যাদি যদি হয় ফেসবুক, টুইটার, গুগলপ্লে, ইউটিউব, অ্যান্ড্রয়েড, আইফোন কিংবা আরএসএস-এর মতো মাধ্যমগুলোতে, আর তাতে অপরাধ প্রবণতা বাড়ে কিংবা পর্দার খেলাফ হয় তবে তাও ইসলামে নিষেধ।

সুতরাং নারীরা প্রয়োজন ছাড়া অপরিচিত কোনো পুরুষকে বন্ধু বানানো যেমন ঠিক নয়, তেমনি অপরিচিত পুরুষদের জন্যও অপরিচিত মেয়েকে বন্ধু বানানো ঠিক নয়। যদি বন্ধু হয়েও থাকে তবে আপত্তিকর, অসামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক।

এমন যেন না হয় যে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ব্যাহার করে কেউ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে না হয়।

দ্বীন কিংবা দুনিয়ার যে কোনো প্রয়োজনীয় কোনো বিষয়ে যদি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে হয় তবে যত কম কথা তা শেষ করা যায় ততই নিরাপদ ও উত্তম। এ সব বিষয়ে কুরআনের নির্দেশনা বা উপমা এমন যে, আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৩)

বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ কুরতবিতে এ আয়াতের আলোচনায় এসেছে, আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। তাই সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।

মনে রাখতে হবে
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে এ হুকুম কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুময়ে।

সুতরাং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে যে কোনো বয়সের নারী-পুরুষের অবাধ চ্যাটিং কিংবা তথ্য আদান-প্রদানে সাবধানতা অবলম্বন করা অনেক জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব বয়সের প্রতিটি নারী-পুরুষকে কুরআন-সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, গুগলপ্লে, ইউটিউব, অ্যান্ড্রয়েডসহ যাবতীয় সাইটগুলোর ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন।

অসমাজিক ও অপরাধমূলক সব কার্যক্রম থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখার তাওফিক দান করুন। যাবতীয় সাইবার অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি