নেক আমল না থাকলেও আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করবেন
পরকালে মানুষের ক্ষমা লাভে কুরআন এবং হাদিসে রয়েছে অনেক সুসংবাদ। আল্লাহ তাআলা মানুষকে ক্ষমা লাভের জন্য যেমন অনেক উপায় এবং পদ্ধতি জানিয়েছেন। তেমনি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ঘোষণা করেছেন অনেক সুসংবাদ।
এ সুসংবাদে রয়েছে ফজিলতপূর্ণ ইবাদত, আমল ও দোয়ার বর্ণনা। আবার রয়েছে আগের যুগের নবি রাসুলদের অনুসারী ও মানুষের সুন্দর সুন্দর ঘটনার অনুপ্রেরণা। যে ঘটনা ও অনুপ্রেরণা থেকে মানুষ লাভ করে ভালো কাজের উৎস।
হাদিসে কুদসিতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের আগের যুগের এক লোককে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দান করেছিলেন।
লোকটির যখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছিল তখন তিনি তার সন্তান-সন্তুতিদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমি তোমাদের পিতা হিসেবে কেমন ছিলাম।
তারা বলল, ‘আপনি পিতা হিসেবে উত্তম ছিলেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘সে (ব্যক্তি) কোনো নেক আমল করে আল্লাহর দরবারে জমা করেননি।’
তাই সে (ব্যক্তি) তার সন্তানদেরকে নসিহত করলেন, ‘এ কথা খেয়াল রেখ! আমি যখন মারা যাব; তখন আমার মৃত দেহকে জ্বালিয়ে (ভষ্ম করে) দেবে এবং এর কয়লাকে ভালভাবে পিষে ঝড়ের দিনে বাতাসে উড়িয়ে দেবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ওই ব্যক্তি এ বিষয়ে তার ছেলেদের কাছ থেকে অঙ্গিকার গ্রহণ করেছিলেন। (সে মারা যাওয়ার পর) তার সন্তানরা ওয়াদা মতো তার মৃত দেহকে ছাঁইকে এক প্রবল ঝঞ্চা বিক্ষুব্ধ দিনে বাতাসে উড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন > যে কাজে কখনো অভাব দূর হবে না
অতঃপর আল্লাহ আদেশ করলেন, ‘হয়ে যাও’ অমনি ওই ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে গেল।
আল্লাহ বললেন, ‘হে আমার বান্দা! তুমি এ কাজ কেন করেছিলে? (এ কাজ করতে কেন বলেছিলে?)
তখন সে (লোকটি) বলল, ‘(হে আল্লাহ!) আপনার ভয়ে। আপনার সামনে হাজির না হওয়ার জন্য।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ তাকে অনুগ্রহ (রহমত) করেছেন।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘আল্লাহ তাকে শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
উল্লেখিত হাদিসে কুদসি থেকে বুঝা গেল, শুধুমাত্র আমল-ইবাদত করে কোনো মানুষ পরকালে মুক্তি লাভ করতে পারবে না। যদি না মহান আল্লাহ তাআলার রহমত বা অনুগ্রহ না থাকে।
হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত এ ঘটনায় কোনো নেক কাজ না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে শুধুমাত্র অন্তরে আল্লাহর ভয় পোষণেই আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করেছিলেন।
সুতরাং কোনো কারণে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক আমল, ইবাদত-বন্দেগি না করতে পারলেও আল্লাহর রহমতের আশা ও তাঁকে ভয় করা জরুরি। কেননা এ ভয় এবং রহতের কারণেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার রহমতের আশার পাশাপাশি সব কাজে তাকে ভয় করার তাওফিক দান করুন। আশা ও ভয়ের মাধ্যমে দুনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বচ্ছলতার পাশাপাশি পরকালের চিরস্থায়ী সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি