ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

মুরাকাবা ইবাদতের অপরিহার্য বিষয়

প্রকাশিত: ০৮:২৩ এএম, ০৪ আগস্ট ২০১৫

আল্লাহকে জানার মানার অপর নাম ইবাদত। ইবাদতের ধরণ কেমন হবে আল্লাহ কুরআনে বলে দিয়েছেন। শুধু নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতই ইবাদত নয়। বরং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মানার নামই ইবাদত। পরিবারের বাবা-মার সঙ্গে কুশল বিনিময়, একাধিক সন্তানের মধ্যে সমতা বিধান, স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর আচরন, গৃহকর্মীর ভাল-মন্দের খোঁজ-খবর নেয়া এমনকি পোষা প্রাণীর প্রতি সদয় হওয়াও ইবাদতের অন্তর্গত। কারণ আল্লাহ তাআলা বান্দার কার্যাবলী সদা-সর্বদা প্রত্যক্ষ করেন। সুতরাং দুনিয়ার প্রত্যেক কাজে আল্লাহ দৃষ্টি রয়েছে এ উপলব্দিই হচ্ছে মুরাকাবার প্রাথমিক ধারণামাত্র।

ইসলামি পরিভাষায় মুরাকাবা
মুরাকাবার আভিধানিক অর্থ হল- পর্যবেক্ষণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-“তুমি যখন সালাতে দাঁড়াও তিনি তোমাকে দেখেন। আর সিজদাকারীদের মধ্যে আপনার নড়াচড়াও দেখেন।” (সূরা আশ-শুআরা : আয়াত ২১৮-২১৯); আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইবাদাত-বন্দেগি এমনভাবে করা যেন, ইবাদাতকারী আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছেন। যদি এ অবস্থা ইবাদাতকারীর অর্জিত না হয়, তা হলে ইবাদতে এমনভাব গ্রহণ করা যে, তিনি অবশ্যই ইবাদাতকারীকে দেখতে পাচ্ছেন। ইসলামের পরিভাষায় এ অবস্থাকেই বলা হয় মুরাকাবা।

সৃষ্টির কোনো কিছুই আল্লাহর দৃষ্টিসীমার বাইরে নয়। আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টিজগতের সব কিছুই প্রত্যক্ষ করেন। এ ব্যাপারে কুরআনের অসংখ্য আয়াত নাজিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন- “আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কোন কিছুই গোপন থাকে না।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৫) অাল্লাহ অন্যত্র বলেছেন- “নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক কড়া দৃষ্টি রাখছেন।” (সূরা আল ফাজর : আয়াত ১৪);
পৃথিবীতে মানুষ তার চক্ষু কোন দিকে ফিরায়, কি কি দেখে, এমনকি অন্তরে কি সংকল্প করে তার খবরও আল্লাহ রাখেন। তিনি বলেন- “তিনি জানেন চক্ষুসমূহের খেয়ানত ও অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে।” (সূরা আল মুমিন : আয়াত ১৯)

এমনকি মানুষ তার কাজ কর্মে কি করেন সে বিষয়ও আল্লাহ জ্ঞানের বাইরে নয়। জগতসমূহের কোথাও সামান্য অনু পরিমাণ বস্তু তার পর্যবেক্ষণের বাহিরে নয়। সমগ্র জগতের সব কিছুই তার জ্ঞান, দর্শন শ্রবনের আওতাভুক্ত। আল্লাহ আরো বলেন “তোমরা যেখানেই থাকো তিনি তোমাদের সাথে আছেন।” (সূরা আল হাদিদ : আয়াত ৪)   তাই ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এ আয়াতটিকে মুরাকাবা বা আল্লাহ তাআলার পর্যবেক্ষণ বিষয়ে গ্রহণ করেছেন।

মুরাকাবার প্রচলিত ধারণা-
আমাদের সমাজে দেখা যায়, মানুষ দুনিয়ার কাজ কর্ম ফেলে রেখে ঘরের এক কোনে, নির্জন স্থানে একান্ত ধ্যানে মগ্ন থেকে আল্লাহর জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিলে রত থাকা এবং এটাকেই মুরাকাবা হিসেবে জানা। মুরাকাবার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। অথচ আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমের অনেক আয়াতে বলেছেন, বান্দার কর্মই নয় শুধু, বান্দার চোখের চাহনি কোন দিক যায়, মনে কি সংকল্প করে তাও আল্লাহ জানে। এই যদি হয় কুরআনে ঘোষণা. তবে ঘরের কোনে বা নির্জণ স্থানে মুরাকাবা করে আবার ধ্যান থেকে বেরিয়ে এসে দুনিয়ার সাধারণ কাজ-কর্মে মিথ্যা, গীবত, চোখলখুরী, বেহুদা কথা-বার্তা, ফাহেশা কাজ কর্মে জড়িয়ে পড়ার মধ্যে মুরাকাবার সার্থকতা কি?

মুরাকাবা কেমন হওয়া চাই-
সুতরাং বান্দার মুরাকাবা হবে এমন যে, মানুষের বিবেক বুদ্ধির সূচিত হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রতিটি কদমে প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর স্মরণ ও পর্যবেক্ষণ উপলব্দি করা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুনিয়ার প্রত্যেক কাজে আল্লাহর দৃষ্টি রয়েছে। আল্লাহর নিকট প্রত্যেক কাজের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে এই মানসিকতা তৈরি করা। তবেই হবে মানুষের প্রকৃত মুরাকাবা। লোক দেখানো মুরাকাবা কখনোও আল্লাহ তাআলা কামনা করেন না।

উল্লেখিত আয়াত ও আলোচনায় আমাদের শিক্ষা-
১. আল্লাহ এমন এক সত্তা যে বান্দা নামাজ এবং সেজদা অবস্থায় নড়াচড়াগুলোও তাঁর দৃষ্টি এড়ায় না।

২. আসমানসমূহ ও জমিনের কোন বস্তু ও বিষয় তাঁর কাছে গোপন নয়।

৩. “তোমরা যেখানেই থাক তিনি তোমাদের সাথে আছেন।” এর অর্থ হল- তিনি সর্বক্ষণ, সর্বাবস্থায় ও সর্বত্র তোমাদের পর্যবেক্ষণ করেন। তার জ্ঞান, দর্শন, শ্রবন থেকে কেউই বাহিরে নয়। তাঁর পর্যবেক্ষণ, দর্শন, শ্রবন সর্বত্র বিরাজমান।

৪. আহকামুল হাকিমিন আল্লাহ তাআলার দৃষ্টি সদা সর্বদা বান্দাকে বেষ্টন করে আছে। যুদ্ধের ঘাঁটিতে সৈনিক সতর্ক দৃষ্টিতে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে। এমন অনেক বিষয় আছে যা মানুষ সতর্ক থাকার পরেও তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। আবার কোন কোন বিষয় আছে যা পর্যবেক্ষণ করা তাদের সাধ্যের বাহিরে থাকে। এমন সব বিষয়ও আল্লাহর পর্যবেক্ষণের বাহিরে নয়। মানুষ কোথায় লুকিয়ে তাকায়, সে কখন কি কল্পনা করে, নিয়্যত করে ও গোপন রাখে এগুলো অন্য মানুষ জানতে না পারলেও আল্লাহ তাআলা ভালভাবে জানেন।

সুতরাং মানুষের মুরাকাবা হোক প্রতি কাজে ও কর্মে। বান্দা যখন প্রতি কাজকে ইবাদত মনে করে আল্লাহর উপস্থিতি উপলব্দি করবে তবেই শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠবে ব্যক্তি জীবন, পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের প্রতিটি শাখা। আল্লাহ আমাদের কুরআন অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলার নিকট প্রতিটি কাজে মুরাকাবার উপলব্দি কামনা করি। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।

জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। কুরআনের আলোচনা আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/এমএস