দুনিয়ার স্বচ্ছলতা ও আখেরাতের সফলতা মিলবে যে কাজে
মানুষের দুনিয়ার জীবন একেবারেই ক্ষণস্থায়ী। আল্লাহর কাছে এ জীবনের মূল্য একেবারেই তুচ্ছ। যে মানুষ দুনিয়াতে ভালো কাজ করবে, সে আখেরাতে এর উত্তম প্রতিদান পাবে। আর যে মন্দ কাজ করবে সে তার আমল অনুযায়ী প্রতিদান পেয়ে যাবে।
শুধু তা-ই নয়, মুমিন মুসলমান ভালো কাজের মাধ্যমে দুনিয়াতে লাভ করে স্বচ্ছ ও সুন্দর জীবন আর আখেরাতের সফলতা তার জন্য সুনিশ্চিত।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘যার জীবন আছে তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমরা সবাই কেয়ামতের দিন পূর্ণ বিনিময় পাবে। একমাত্র সেই ব্যক্তি সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে; আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোকার সামগ্রী। (সুরা আল ইমরান : আয়াত ১৮৫)।
তবে আল্লাহ তাআলার কাছে সফলতা লাভে এমন আমল করে যেতে হবে। যে আমলে বান্দা পাবে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা। আর তাহলো এমন দান-সহযোগিতা। যা তার মৃত্যুর পরেও চলমান থাকবে। যাকে বলা হয় ‘সাদকায়ে জারিয়া বা চলমান দান।
রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব বেশি দান-সাদকাহ করতেন। রমজানের আগমনে প্রিয়নবির এ দান-সাদকার মাত্রা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে যেত। প্রিয়নবির এ দান-সাদকা উম্মতের জন্য অনুপ্রেরণা।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তআলা সাদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে ঘোষণা করেন-
‘আমিই অবশ্যই একদিন মৃতদেরকে জীবিত করবো; তারা যা কিছু কাজ করেছে তা সবই আমি লিখে রাখি; যা কিছু তারা আগে পাঠিয়েছে এবং যা পিছনে রেখে যায়। আর প্রতিটি বস্তুকেই আমি সুষ্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি। (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ১২)
আরও পড়ুন > রোজায় ইফতার বিতরণ ও আর্থিক অনুদানের তাৎপর্য
আলোচ্য আয়াতে মানুষের ৩টি আমলের ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে। আর তাহলো-
>> মানুষের ভালো ও মন্দ কাজ আল্লাহর দফতরে লিখে নেয়া হয়; যা সংরক্ষিত আছে এবং থাকবে।
>> মানুষ দুনিয়ার জীবনে তার চারপাশে ও শরীরের উপর ভালো-মন্দের যে প্রভাব রাখে, পরকালে সে সব স্মৃতি তার মন-মগজে স্মরণ হতে থাকবে এবং তার সব আচরণের ছবি মতো স্মৃতিতে ভেসে ওঠবে।
>> ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার এ জীবনে নিজের সন্তান-সন্ততিসহ যে সব ভালো ও মন্দ কাজের প্রচলন করে যাবে। আর তা যতক্ষণ চালু থাকবে, ততক্ষণ ভালো ও মন্দ কাজ উভয়টির হিসাব আমল নামায় জমা হতে থাকবে।
এ কারণেই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য সাদকায়ে জারিয়া তথা এমন সাদকা বা দানের উপদেশ দিয়েছেন, যা তার মৃত্যুর পরেও চলমান থাকবে। আর তাহলো-
আরও পড়ুন > সারারাত নামাজের সাওয়াব লাভের সহজ উপায়
প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষের মৃত্যুর পর তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমল বন্ধ হবে না।
>> সাদকায়ে জারিয়া; এমন দান যা মৃত্যুর পরও চলমান থাকবে। যেমন মসজিদ, মাদরাসা, ইয়াতিমখানা এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জনকল্যাণমূলক কাজ যেমন, রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট, ব্রিজ ইত্যাদি।
>> এমন উপকারী ইল্ম বা জ্ঞান। যা দ্বারা উম্মাতে মুসলিম উপকৃত হয়। দ্বীন ও ঈমানের ওপর অটল-অবিচল থাকে।
>> এমন নেক সন্তান-সন্ততি; যারা তাদের মৃত ব্যক্তিদের জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করবে এবং তাদের উদ্দেশ্যে দান সাদকা করবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সদাকায়ে জারিয়া তথা চলমান দাস-সাদকা করার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি