আল্লাহর রহমতের প্রশস্ততা
কুরআনের দাওয়াতই হচ্ছে তোমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারও দাসত্ব করিও না। কুরআন কারিম হেদায়েতপ্রাপ্তদের জন্য অবতীর্ণ হলেও সব মানুষের কথাই কুরআনে বলা হয়েছে। দেখানো হয়েছে মুক্তির পথ। আশার বাণী শুনিয়েছেন। রহমত ও মাগফিরাতের। যার স্বপক্ষে অগণিত আয়াত রয়েছে। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হলেন দয়ার সাগর, করুণার ভাণ্ডার ও মাগফিরাতের দরিয়া। তাইতো আল্লাহ বলেন তোমরা আমার দয়া হতে নিরাশ হইওনা।` আল্লাহর সীমাহীন রহমতের কথা জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
হাদিসে কুদসিতে এসেছে :
ক. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআ`লা বলেন, আমার রহমত আমার গোস্বাকে অতিক্রম করেছে। (মুসলিম) অর্থাৎ আল্লাহ তাআ`লার রহমত এত ব্যাপক যে তাঁর গোস্বা তাঁর দয়ার কাছে হার মেনেছে।
আল্লাহর রাগের তুলনায় রহমতের স্থান অনেক ব্যাপক। বিধায় বান্দা যতই রাগ হওয়ার মতো কাজ করুন না কেন, ক্ষমা চাইতে দেরি, মাপ করে দিতে দেরি করেন না।
কুরআনে কারিমে এসেছে :
খ. হে আমার বান্দারা! যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হ্ইও না। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাপ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা যুমার : আয়াত ৫৩)
জাহেলি যুগে যারা হত্যা, ব্যভিচার, চুরি, ডাকাতি এবং এ ধরনের বড় বড় গুনাহর কাজে লিপ্ত ছিলেন আর এসব অপরাধের কখনও মাপ হবে বলে নিরাশ ছিল। তাদের বলা হয়েছে, তোমরা যা কিছুই করেছো এখনও যদি তোমরা আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আস তাহলে সব বড় বড় অপরাধ মাপ হয়ে যাবে।
আর আমরাতো মুসলমান। আল্লাহকে বিশ্বাস করি। হয়ত না জেনে বা না বুঝে অন্যায় করি; আমরা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রাথর্না করলে তিনি মাপ করে দিবেন। এই আশা পোষন করাই ঈমানের দাবি।
বর্তমান সমাজে এক শ্রেণির লোক মানুষের গুনাহ দেখে বলে থাকেন- এ লোক একেবারে শেষ, জাহান্নামে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আল্লাহর রহমত তাদের জন্য অনেক বেশি যারা তাদের অভিসম্পাত করেন। কারণ ঐ বান্দা যদি আল্লাহর দরবারে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে তাওবা করে তবে আল্লাহর রহমতের দরিয়া ঢেউ শুরু হয়ে যায়। আল্লাহ ঐ বান্দাকে মাপ করে দেন।
হাদিসে এসেছে :
গ. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, বনি ইসরাঈলে দুই বন্ধু ছিল। তাদের একজন পাক করত, অপরজন খুব ইবাদতগুজার ছিল। ইবাদতগুজারকারী তার বন্ধুকে সর্বদা পাপে লিপ্ত দেখত, তাই সে বলত বিরত হও। একদিন সে তাকে কোনো পাপে লিপ্ত দেখে বলে, বিরত হও। উত্তরে বন্ধু বলল, আমাকে ও আমার রবকে থাকতে দাও, তোমাকে কি আমার ওপর পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয়েছে? ফলে ইবাদতকারী বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না, অথবা তোমাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতপর তাদের উভয়ের রূহ কবজ করা হল এবং তারা উভয়ে আল্লাহর দরবারে একত্র হল। আল্লাহ ইবাদতকারীকে বলেন, তুমি কি আমার ব্যাপারে অবগত ছিলে? অথবা আমার হাতে যা রয়েছে তারওপর তুমি ক্ষমতাবান ছিলে? আর পাপীকে তিনি বলেন, যাও আমার রহমতে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। আর অপর ব্যক্তির জন্য বরেন তাকে নিয়ে যাও জাহান্নামে? (আবু দাউদ)
তাই কাউকে গুনাহ বা অন্যায় করতে দেখলে তাকে হাত ও মুখ দ্বারা বাঁধা দিয়ে নিষেধ করবে। যদি সামর্থ্য না থাকে তবে অন্যায় অপরাধ বন্ধে নিরব ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু সীমা অতিক্রম করে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। এগুলো বলা অগ্রহণযোগ্য কাজ। যার পরিনাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ রাহমানুর রাহিম যে কাউকে ক্ষমা করার অধিকার রাখেন।
ঘ. আল্লাহ বলেন- আর আমাদের জন্য এ দুনিয়ার কল্যাণ লিখে দাও এবং আখিরাতেরও আমরা তোমার দিকে ফিরেছি। জওয়াবে বলা হলো- শাস্তি তো আমি যাকে চাই তাকে দিয়ে থাকি, কিন্তু আমার অনুগ্রহ সব জিনিসের ওপর পরিব্যপ্ত হয়ে আছে। কাজেই তা আমি এমন লোকদের নামে লিখবো যারা নাফরমানি থেকে দূরে থাকবে, যাকাত দেবে এবং আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনবে। (সূরা আ`রাফ : আয়াত ১৫৬)।
মহান রাব্বুল আলামিন যে পদ্ধতিতে বিশ্ব ব্যবস্থা পরিচালনা করছেন, সেখানে ক্রোধ মুখ্য নয় এবং অনুগ্রহ ও মেহেরবানী সেখানে মাঝে মধ্যে দেখা যায় না এমন নয়। বরং অনুগ্রহই সেখানে মূখ্য এবং সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থা তারই ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর সেখানে রাগের বা গোস্বার প্রকাশ কেবল তখনই ঘটে যখন মানুষের দম্ভ ও অহংকার সীমা ছাড়িয়ে যায়।
কুরআনের এই আয়াতের প্রথম অংশ নাজিল হওয়ার পর ইবলিসসহ অভিশপ্ত লোকেরা বলিতে থাকে তাহলে আমরাও তো সব কিছুর অন্তর্ভূক্ত। তাই আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ পাইব। পরবর্তীতে আল্লাহ দ্বিতীয় অংশে, কাজেই আমি এমন লোকদের নাম লিখবো যারা আল্লাহর নাফরমানি থেকে বিরত থাকে এবং আমার আয়াতের ওপর ঈমান রাখে। এই আয়াতে ইবলিস এবং অবিশ্বাসীরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায়।
মানুষের উচিত হজরত ইয়াহইয়া বিন মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুর এই দুআ`গুলোর মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে রহমত কামনা করা :
১. হে আল্লাহ! আপনি দুনিয়াতে রহমতের মাত্র এক অংশ অবতীর্ণ করেছেন। ইহার দ্বারা ইসলামের ন্যায় মহামূল্য সম্পদ আমাদের দান করেছেন। যখন আপনি একশত ভাগ রহমত অবতীর্ণ করবেন তখন আপনার কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার আশা করব না কেন? আমরা আপনার ক্ষমার আশা করি।
২. হে আল্লাহ! আপনার অনুগতদের জন্য আপনার পক্ষ হতে প্রতিদান নির্ধারিত রয়েছে। আর আপনার রহমত গোনাহগারদের জন্য, আমরাতো আপনার অনুগত না হওয়া সত্বেও আপনার নিকট প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখি। আমরা গুনাহগার হয়ে আপনার রহমতের আশা করব না কেন? আমরা আপনার রহমতের আশা করি।
৩. হে আল্লাহ! আপনি প্রিয় বান্দাদের জন্য বেহেশত প্রস্তুত করেছেন। কাফের মুশরেকদের ইহা হইতে নিরাশ ও বঞ্চিত করেছেন। ফিরিশতাদের জন্যও বেহেশত প্রয়োজন নাই। আপনি নিজেও বেহেশতের মুখাপেক্ষী নন। সুতরাং বেহেশত আমাদের ব্যতিত আর কার জন্য? হে আল্লাহ! আপনি আমাদের বেহেশত দান করুন।
আল্লাহ মানবজাতিকে কুলুষমুক্ত জীবন দান করুন। রহমতের হকদার বানিয়ে দিন। সারা পৃথিবী আল্লাহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যের মাধ্যমে ইসলামি সমাজ কয়েম করুন। আমিন।
জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/এআরএস/এমএস