ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

যে কাজে অনেক ছাওয়াব

প্রকাশিত: ০৭:১৮ এএম, ২৫ জুলাই ২০১৫

ছোট ছোট বিন্দু মিলে হয় মহাসিন্ধু; এ কথাটি যেমন ধ্রুব সত্য। তেমনি ছোট ছোট আমলের দ্বারা আল্লাহর নিয়ামতের বিশাল ভাণ্ডারের মালিকানা লাভ করাও মহাসত্য। মানুষ বিভিন্ন ধরনের ইবাদত বন্দেগিতে দিন-রাত অতিবাহিত করে থাকে। হাদিসে কুদসি প্রমাণ করে বহু আমলধারী লোক সারা জীবন আমল করা সত্বেও জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপিত হবে। যার কারণ হচ্ছে শুধুমাত্র সঠিক নিয়্যতের বিশুদ্ধতা।

তাই জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য নিয়্যতের পরিশুদ্ধতার ওপর কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো। যার ফজিলত ও গুরুত্ব অত্যধিক :

নিয়্যত বলতে আমরা কী বুঝি?
নিয়্যত হচ্ছে মনের ইচ্ছা বা সংকল্প। যা মানুষের মনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত।  আর বিশুদ্ধ নিয়্যত হচ্ছে কোনো কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে সফলতা লাভ করা। সে কাজ আল্লাহর জন্য হোক বা দুনিয়ার কোনো কাজ হোক। তাই মুমিন বান্দা চাইলে তার ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রায় সব কাজকেই নেকির কাজে পরিণত করতে পারে। ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাই নিয়্যতের হাদিসখানাকে সহিহ বুখারির প্রথমেই উল্লেখ করেছেন -

হজরত আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস আল-লাইসি হতে বর্ণিত, আমি হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় প্রত্যেক কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়্যত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়্যত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোনো মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে- তবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে, যে জন্যে সে হিজরত করেছে। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)।

অপর হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বলেন - নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কারো বাহ্যিক অবকাঠামো ও সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না। কিন্তু আল্লাহ তার বান্দার অন্তরের দিকে এবং কর্মের দিকে লক্ষ্য করেন। (মুসলিম)

হাদিসে কুদসি থেকে জানা যায় : যার নিয়্যত নষ্ট তার জন্য জাহান্নাম- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার ওপর ফয়সালা করা হবে, সে ব্যক্তি যে শহিদ হয়েছিল। তাকে ডাকা হবে এবং তার ওপর আল্লাহর দেয়া নেয়ামতগুলো একে একে স্মরণ করানো হবে। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি এসব নেয়ামত ভোগ করেছিলে? সে স্বীকার করে নিবে। বলবে, হ্যাঁ, এসব নেয়ামত আমি ভোগ করেছি। তখন আল্লাহ বলবেন, ওই সব নিয়ামতের শুকরিয়ায় তুমি কী আমল করেছ? সে বলবে, আমি আপনার রাস্তায় লড়াই করে শাহাদত বরণ করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; তুমি তো এই জন্য লড়াই করেছ, যেন তোমাকে বীর উপাধি দেওয়া হয়। তা তো দেওয়া হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাআলার নির্দেশে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

এরপর দ্বিতীয় ব্যক্তিকে আনা হবে, যে নিজে ইলম শিখেছে, কুরআন পড়েছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে। তাকেও পূর্ববর্তী ব্যক্তির মতো আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতগুলো স্মরণ করানো হবে এবং সে তা স্বীকার করে নিবে। আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন করবেন, এর প্রতিদানে তুমি কী আমল করেছ? সে বলবে, আমি তোমার জন্য ইলম শিখেছি, কোরআন পড়েছি এবং অপরকে শিখিয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ; বরং তুমি তো এই জন্য ইলম শিখেছ যাতে লোকে তোমাকে আলেম বলে, কুরআনের ক্বারী বলে। তা তো বলা হয়েছে। অতঃপর তাকে আল্লাহর নির্দেশে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

এরপর তৃতীয় ব্যক্তিকে আনা হবে, যাকে আল্লাহ তায়ালা স্বচ্ছলতা দিয়েছেন ও সর্বপ্রকার সম্পদ দান করেছেন,। তাকে তার নিয়ামতের কথা জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেন, তুমি, এর প্রতিদানে কী আমল করেছ? সে বলবে, এমন খাত নেই, যেখানে খরচ করা আপনি পছন্দ করেন, আমি তাতে আপনার জন্য খরচ করি নাই। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ,  বরং তুমি তা করেছ যেন লোকে তোমাকে দানশীল বলে। অতএব তোমাকে দানশীল বলা হয়েছে। অতপর তার ব্যাপারে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হবে। তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম ও নাসাঈ)।

নিয়্যতের পরিশুদ্ধতা ও মর্যাদার ব্যাপারে হাদিসে কুদসিতে এসেছে -
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা যখন কোনো পাপ করার ইচ্ছা করে, তখন তোমরা তা লিখ না, যতক্ষণ না সে তা করে। যদি সে তা করে তবে সমান পাপ লিখ। আর যদি সে তা আমার কারণে (আল্লাহর ভয়ে অন্যায়) ত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য তা নেকি হিসাবে লিখ। আর যদি সে নেকি (ভালো কাজ) করার ইচ্ছা করে কিন্তু তা সে করেনি, তার জন্য তা নেকি হিসাবে লিখ। অতপর যদি সে তা (কাজটি) করে তাহলে তার জন্য তা দশগুণ থেকে সাত শ’ গুণ পর্যন্ত লিখ। (বুখারি, মুসলিম)

এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, সব কাজগুলো ভাল হওয়া সত্বেও শুধু মাত্র নিয়্যতের পরিশুদ্ধতার অভাবেই নির্মম ও কঠিন পরিণতির কথা উল্লেখ হয়েছে। পাশাপাশি নিয়্যতের নিয়ামতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত কঠিন পরিণতি থেকে হেফাজত করে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তাহলে বুঝা গেল আল্লাহর ভয়ে পাপ ত্যাগ করাও ছাওয়াবের কাজ। পাশাপাশি ভাল কাজের নিয়্যত করার সঙ্গে সঙ্গে ছাওয়াব শুরু হয়। যখন কাজটি করা হয় তখন তার ছাওয়াব দশ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত ছাওয়াব লেখা হয়।

এই হাদিসের শিক্ষা :
ক. প্রত্যেক কাজের শুরুতে নিয়্যত করা
খ. ছাওয়াবের জন্য নিয়্যত আবশ্যক
গ. মন্দ বা গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকার সংকল্প করা
ঘ. আল্লাহর ক্ষমার প্রত্যাশা করা
চ. সর্ব ক্ষেত্রে সর্বস্তরে এ হাদিসের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া।

আলোচ্য হাদিস অনুযায়ী আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিটি কথা ও কাজ হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যেই। আল্লাহ তায়ালা অতিব দয়ালু ও মেহেরবান। যে দয়া ও রহমতের কোনো শেষ নেই। অনেক সময় বান্দার ছোট আমলেও আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হয়ে যান। তিনি তখন বান্দাকে দান করেন সীমাহীন নেয়ামত এবং উন্মুক্ত করে দেন তার দানের ভাণ্ডার। তাই মানুষ এই নিয়্যতের মতো ছোট আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। আল্লাহ বান্দার ছোট ছোট আমলগুলো কবুল করুন এবং নিয়্যতের পরিশুদ্ধতা দান করুন। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান করুন। আমিন।

জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/এসআইএস/এমএস