রমজানের শিক্ষায় জীবন হোক আলোকিত
আজ ২৮ রমজান। সিয়াম-সাধনার শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছেন সম্মানিত রোজাদারগণ। আত্মশুদ্ধি লাভ করেছেন রোজা পালনের মাধ্যমে। প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন আগামী রজমজান পর্যন্ত পাপমুক্ত জীবন-যাপনের। শিক্ষা গ্রহণ করেছেন কম কথা বলার; অভ্যাস গঠন করেছেন অল্প নিদ্রার; তৈরি করেছেন নিজেকে স্বল্প পানাহারের জন্য। অনুভব করেছেন গরিব-দুখীর ক্ষুধা যন্ত্রণার। এই রোজায় আমাদের অর্জনগুলো জেনে নিই-
আল্লাহর ভয় ও মহব্বত লাভ-
রোজাদার সারাদিন পানাহার ত্যাগের মাধ্যমেই কেবল তাকওয়া অর্জন সম্ভব নয়। যদি আল্লাহর ভয় না অন্তরে না থাকে। রোজা মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় ও মহব্বত তৈরি করে থাকে। আল্লাহ তাআলার ইবাদতের মধ্যে রোজা ব্যতিত সব ইবাদত লক্ষণীয়। নামাজ শারিরীক ইবাদত; যাকাত আথির্ক ইবাদত; হজ আর্থিক এবং শারিরীক ইবাদত; আর রোজা হচ্ছে আত্মিক ইবাদত যাতে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখানোর কিছুই নেই। সুতরাং যারা রোজা রাখে মনে প্রাণে আল্লাহকে ভয় এবং মহব্বত করেই আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে রোজা রাখে। আল্লাহর এই ভয় এবং মহব্বত আমাদের মাঝে বাকি ১১ মাস বিরাজমান থাকাই কামনা করা জরুরি।
ধৈর্যের শিক্ষা-
রোজা মানুষকে আল্লাহর হুকুম পালনে ধৈর্যশীল ও পরমতসহিষ্ণু হতে শেখায়। সারাদিনের প্রচণ্ড ক্লান্তি সত্ত্বেও ক্ষুধা নিবারণে ইফতারের অপেক্ষা ধৈর্য ধারণ করতে শেখায়। যদি মানুষ চাইলেই লুকিয়ে পানাহার করতে পারে; আল্লাহর ভয়ই মানুষকে লুকিয়ে খাওয়া থেকে বিরত রাখে।
সুশৃংখল জীবনে শেখায়-
রোজা মানুষকে শৃংখলিত জীবনের দিক নির্দেশনা দেয়; রোজায় মানুষ যেমন সময় মতো নামাজ; সময় মতো ইফতার; সময় মতো সেহরি; সময় মতো তারাবিহ; নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজগুলো করতে শেখায় একজন মানুষ যদি রমজান মাসকে ফলো করে। তবে বাস্তবজীবনে একজন মানুষ নিয়ম-নিয়ন্ত্রিত সফল মানুষে পরিণত হতে পারে।
পরিশ্রমী হতে শেখায়-
রোজা মানুষকে অলসতা দূর করে পরিশ্রমী হতে শেখায়। রোজায় মানুষ যাবতীয় কাজ-কর্ম ঠিক রেখে সারাদিন পানাহার ত্যাগ করেও কঠোর পরিশ্রম করে। সারা দিন রোজা রেখে রাতের বেলায় তারাবিহ এবং তাহাজ্জুদ আদয়; আবার শেষ রাতে উঠে সাহরি খাওয়া ও ফজর আদায় করা অনেক কষ্টকর। এই রোজায় থেকেই মানুষ পরিশ্রমী হতে শেখে। যা একজন মানুষের বাস্তব জীবনে অতিব জরুরি।
সত্যবাদী হতে শেখায়-
মানুষের যতরকম খারাপ চরিত্র বা আচরণ থাকুক না কেন রমজানের রোজা তা ধুয়ে-মুছে সুন্দর জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করে তোলে। যে ব্যক্তি রোজা রাখেন তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলতে পারেন না। মিথ্যা বলতে গেলে নিজে থেকেই একটা খারাপ লাগা অনুভূত হয়। তাছাড়া একজন রোজাদার কখনো সজ্ঞানে কোনো অবৈধ ঘৃণিত নিষিদ্ধ হারাম কাজ করতে পারেন না। কুরআন নাযিলের মাসে কুরআনের বরকতে আল্লাহর রহমতে রোজাদার হয়ে ওঠেন সত্যবাদী।
দায়িত্বশীল হতে শেখায়-
রমজানের রোজা একজন রোজাদারকে নিজে অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার নির্যাতনমূলক কাজ-কর্ম করা থেকে বিরত থাকে। পাশাপাশি পরিবার ও সমাজে যাতে কোনো রকম গর্হিত কাজ-কর্ম না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকে। রোজাদার কাজে কর্মে, অফিসে-আদালতে, ব্যবসা বাণিজ্যে সব জায়গায় নিজেকে যথাযথ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট রাখে। যা অন্য কোনো সময় সাধারণত দেখা যায় না। এ জন্যই আল্লাহ বান্দার জন্য এক মাসের রোজা ফরজ করেছেন; যাতে বান্দাহ বাকি ১১ মাস রোজার এই ধারাকে অব্যাবহ রাখতে পারে।
নামাজি হতে শেখায়-
যে মানুষটি রমজানের পূর্বে নামাজ পড়তেই অলসতা করত। রমজানে সেই মানুষটি নিজে নামাজ পড়ে এবং অপরকেও নামাজের ব্যাপারে আহ্বান করে। যা আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। রমজান আসলেই আমরা মসজিদে চিনতে পারি; দেখতে পাই তার আসল চেহারায়। যৌবন ফিরে পায় মসজিদ। প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে রোজাদার নামাজে কাতারবন্দী হতে। এ সবই রমজানের রোজার শিক্ষা। যা পরেও মানুষের জীবনে বাস্তবায়িত থাকে।
কুরআনের বিধান বাস্তবায়ন হয়-
রমজান আসলেই মানুষ আল্লাহর রাস্তায় বেশি বেশি দান-সাদকা করেন। সম্পদশালী ব্যক্তি জাকাত আদায় করেন। ব্যক্তি পরিবার ও সমাজের লোকজন পরিবারের পক্ষ থেকে ফিতরাহ আদায়ে মনোযোগী হয়। কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী সব বিধি-বিধান বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে। সমাজ ফিরে পায় সোনালী জীবন। অপরাধ-কুসংস্কার দূরভীত হয় সমাজ থেকে। সুখ ও শান্তি বিরাজ করে সমাজ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে। যা এক অতুলনীয় উপমা।
গুনাহমুক্ত হয় মানুষ-
রমজানের মূল লক্ষ্য আল্লাহ তার বান্দাকে বিগত বছরের সব গুণাহ থেকে মুক্ত করে নিষ্পাপ মাছুম করে দেয়ার জন্য যে ঘোষণা দিয়েছেন। তাইতো মানুষ রমজানের গুনাহ মাফের জন্য সারাদিন পানাহার-যৌনাচার ত্যাগ করে রাতের বেলায় তারাবিহ-তাহাজ্জুদ-সাহরির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত করে আল্লাহ কাছে নিজেকে সঁপে দেয় গুনাহ মাপের জন্য। পক্ষান্তরে আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তির গুনাহ অনুযায়ী ক্ষমা নিয়ে এগিয়ে আসেন বান্দাকে মাফ করে দিতে। যার বাস্তবায়ন শুধুমাত্র রমজানেই সম্ভব। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দাহর বিগত জীবনের গুনাহ মাফের জন্য রেখেছেন হাজার মাসের চাইতেও অধিক সাওয়াবের রজনী- পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর।
রোজাদারের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার-
এত কিছুর পর একজন বান্দা যে জন্য তৈরি হয় তা হচ্ছে- জান্নাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দিদার বা সরাসরি সাক্ষাত লাভের জন্য। আল্লাহ বলেছেন- রোজা আমার জন্য রাখা হয় আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। কেননা নামাজ, যাকাত, হালাল করা, হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে আল্লাহ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন- জান্নাত দেয়া হবে সৎকর্মশীলদের; এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নহর/নদী প্রবাহিত। দেবে সুন্দর আবাস, দেবে সতি-সাধ্বী জান্নাতি হুর-গেলমান। পক্ষান্তরে রোজাদারের রোজার কোনো পুরস্কার এভাবে ঘোষিত হয়নি। চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন- মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। যার সর্বোচ্চ পর্যায় হচ্ছে আল্লাহর দিদার।
এজন্য আমরা রোজাকে শুধু মাত্র আনুষ্ঠানিকতার বিষয় হিসেবে পালন করা থেকে বিরত থাকি। শিক্ষা নেই রমজানের রোজা থেকে। যে শিক্ষা একজন মানুষকে তার জীবনের আমূল পরিবর্তন করে দেয়। তাই রমজানের শেষ পর্যায়ে এসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম আমজাইনের শেখানো পদ্ধতিতে রমজানের কর্তব্য পালনে এগিয়ে আসি। ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন সবাই চলে আসি এককাতারে। নান প্রকার অপরাধ-অপকর্ম থেকে বিরত থাকি। সমাজ থেকে হিংসা-বিদ্বেষ তথা সব ধরনের মুনকার বা গর্হিত পরিত্যাগ করি। ইবাদত-বন্দেগিতে হই মশগুল। আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে জীবন বিলিয়ে দেই। তবেই আমাদের জীবন হবে সার্থক ও সুন্দর। আল্লাহ আমাদের রমজনের শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগো নিউজ২৪ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/এসএইচএস/আরআইপি