ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

ঈদে গরিব-দুখীর পাশে দাঁড়াই

প্রকাশিত: ১০:২২ এএম, ১৫ জুলাই ২০১৫

চলছে রমজানের শেষ দশক। আর মাত্র ২ দিন পরই রমজানের ঈদ। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য; আপন জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে মুখিয়ে আছে সবাই। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ হয়তবা ১৮ তারিখ শনিবার হতে পারে।

কিন্তু আমরা ঈদের আনন্দ কার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেব? শুধুই কি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে। নিশ্চয়ই না। আমরা ঈদের আনন্দ, উৎসাহ-উদ্দীপনা সবই উপভোগ করব আমাদের চারপাশের প্রতিবেশীদের নিয়ে। ঈদের পূর্ব মুহূর্তে আমাদের প্রতিবেশীদের নিয়ে আমাদের ভাবনা কি? যে সব প্রতিবেশী আমাদের চারপাশে অসহায়ত্ব আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। যারা দু’বেলা পেটপুরে খেতে পায়না।

সেমাই-চিনি, নতুন জামা-কাপড় বাদই দিলাম যারা নিত্য দিনের ব্যবহারের জন্য সামগ্রী, খাবার ও জামা-কাপড়ই যোগাড় করতে পারেনা। তাদের কথা বলছি।

দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত সিলেটের রাজনকে শিশু বয়সে তরকারি বিক্রি করে চাল আনতে গিয়ে করুণ মৃত্যুর পরিণতি ভোগ করতে হল? যে মৃত্যু নাড়া দিয়েছে সমগ্র বিশ্ব বিবেককে। কিন্তু কী লাভ হবে? রাজন কি আর আসবে ফিরে? রাজন কী দেখবে তার ছোট ভাইটি ঈদের দিন নতুন জামা-কাপড়, স্বাদের খাবার খাচ্ছে কিনা? এরকম হাজারো রাজন যে বয়সে স্কুল কলেজে যাওয়ার কথা, সে বয়সে তারা অভাব অনটন আর ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে ভারী ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বাধ্য হচ্ছে। যে বয়সে মায়ের স্নেহ-মমতায়, বাবার ভালবাসায়, পরিবারের সহযোগিতায় বই-খাতা হাতে নিয়ে যাবে স্কুলে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ হবে। সমাজের এবং দেশের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে নিজেকে তৈরি করবে পবিরার গড়ার, দেশের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার, সে বয়সে হাতে চায়ের কেটলি এবং বাসা-বাড়ির গৃহকর্মী হয়ে গৃহকর্তার নির্যাতন ভোগ; অবশেষে সন্ত্রাস ও মাদকের হাতেখড়ি। তারপর এক সময় থাকে না পারিবারিক বন্ধন বলতে কোনো কিছুই। এ সব দিকভ্রান্ত পথশিশুদের ভাগ্যে হয়ত জুটেনি মা-বাবার স্নেহমাখা ডাক, খোকা আয়! খোকা আয়! আমাদের ঈদের ভাবনায় আদৌ কি তাদের স্থান হয়েছে? নাকি লুঙ্গি-শাড়ি বিতরণের নাম করে আমরা মৃত্যুর মুখোমুখি করে দিয়েছি কোনো কোনো মা-বাবা-ভাই-বোন ও সন্তানকে।

রমজানের রোজা পালনের সময়ে ঘটে যাওয়া রাজন ও বড় বড় কোম্পানির কাপড় বিতরণে মৃতদের ভুবন কাঁপানো চিৎকারে আমরা জাগ্রত হতে পেরেছি? আসছে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উৎসবে আমরা কি তাদের কথা ভাবতে পারিনা?
এত গেলো শহরে, বন্দরে, নগরে, স্টেশনে, দোকান-পাট, হোটেল-রেস্টুরেন্টে, বাস-টেম্পোতে নতুবা ফূটপাতে কোনো না কোনো ভারী কাজে নিয়োজিত দিকভ্রান্ত পথহারা শিশুদের কথা। আমরা দেশজুড়ে তাকালেই দেখি অগণিত অসংখ্য বনি আদমের অসহায় চেহারা। যাদের জীবনে আসে না কোনো ঈদের আনন্দ। যাদের চিত্তে আগুন জ্বলে সর্বক্ষণ। যে জ্বালায় চোখে ঘুম আসে না। তাদের আবার ঈদের খুশি!

আসুন তাদের দিকে সাম্যের হাত বাড়িয়ে দিই। খোঁজ নিই আমার আপনার সবার পাড়া প্রতিবেশীর। কেউ শিশু; কেউ কিশোর; কেউ বা আছে যুবক যারা আবার সঠিক পথ নির্দেশনা না পেয়ে সংসারে ঘানি টানতে টানতে নিজের পরণের লুঙ্গিই কিনতে পারেনি। তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই। যারা বয়স্ক, বয়সের ভারে ন্যুজ; তাদের দিকে ভালবাসার দৃষ্টিতে তাকাই। এদের কারো প্রতি কোনো করুণা নয়।

সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এগিয়ে যাই। নিজেদের ঈদের কেনাকাটার কিছু অংশ তাদেরকেও দিই। আমাদের সমাজে অনেক সম্পদশালী আছেন যারা নিজেদের ঈদের আনন্দ উদযাপনে অনেক অর্থ খরচ করে। তাদের প্রতি আমাদের আবেদন- আমরা ভুলে যাব না দিকভ্রান্ত পথহারা শিশু-কিশোর ছেলে মেয়েদের। ভুলে যাব না পাড়া প্রতিবেশী গরিব-দুখী অভাবী লোকদের। যাদের পোশাক তো দূরের কথা খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। আমরা সাধ্যমতো সব অভাবীর কথা চিন্তা করি; এগিয়ে যাই তাদের সহযোগিতায়। যাতে ওরাও উপভোগ করতে পারে ঈদের আনন্দ। আমাদের মনে রাখতে হবে গরিব-দুখী অভাবী আমরা সবাই একই সমাজ ও রাষ্ট্রেরই অংশ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না; আল্লাহর তার প্রতি দয়া করে না। অর্থাৎ গরিব দুখীর প্রতি সদয় হয়না আল্লাহ তায়ালাও সে মানুষের প্রতি সদয় হবে না। তা হতে পারে দুনিয়া হতে পারে আখিরাতে।

সর্বোপরি কথা হল আমরা সবাই মানুষ। স্রষ্টার সৃষ্টির অতুলনীয় সেরা জীব। আমাদের সমাজের সম্পদশালীদের দিকে পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে কম-বেশি সবাই অসহায় মানুষের দিকে সুদৃষ্টি দিলে তাদের জীবনমানে, ঈদের আনন্দে আসবে পরিবর্তন। ফুটবে মুখে অমলিন হাসি। ভুলে যাবে দুঃখ বেদনা। তারাও ভোগ করবে ঈদের আনন্দ।

তাইতো কবির ভাষায় বলতে চাই-
ঈদ এলো মানুষের জন্য/ঈদ এলো জীবনের জন্য/একা একা হয় না তো ঈদ/ হয় না তো ঈদের খুশি/একা একা ঈদ করে সেই/যেই জন মূলত দোষী। ঈদের আনন্দ যে ভাগ করে নেয়; সেই জন আসলেই ধন্য।

আমরাও ধন্য হতে চাই। আল্লাহ আমাদের ঈদের আনন্দ নিজেরা নিতে; গরিব-দুখী অসহায়কে ঈদের আনন্দ দিতে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/এসআইএস/এসএইচএস/আরআইপি