আজ পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর
মুমিন মুসলমানের কাঙ্ক্ষিত ও বহু প্রতিক্ষীত রজনী পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর আজ। সমগ্র মুসলিম জাহানের ধর্মপ্রাণ মুসলমান যার অপেক্ষায় রয়েছেন। এই রজনীর কল্যাণ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায়, সে জন্য অনেক আল্লাহর বান্দাহ ২০ রমজান থেকেই মসজিদে ই’তিকাফে বসেছেন।
এই লাইলাতুল ক্বদর কোন রাতে, তা নিয়ে প্রায় ৪০টিরও অধিক মতের সন্ধান পাওয়া যায়; তবে আলেম সমাজের অধিকাংশের মতে, রমজানের শেষ দশ দিনের কোনো একটি বিজোড় রাত। তাদের মধ্যে আবার বেশির ভাগ লোকের মত হচ্ছে সেটি ২৭ তারিখের রাত। কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতের ঘোষণা দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাজিল করেছেন। যা কুরআনুল কারিমের ৯৭তম সূরা আল ক্বদর। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি এ কুরআন নাজিল করেছি মহিমান্বিত রজনীতে’। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হেরা গুহায় যে রাতে হযরত জিব্রিল আমিন ওহি নিয়ে এসেছিলেন, সেটি ছিল রমজান মাসের একটি রাত। এ রাতকে এখানে ক্বদরের রাত বলা হয়েছে। এর দুটি অর্থ হতে পারে-
প্রথম অর্থ হচ্ছে- হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘এই রাতে সমগ্র কুরআনুল কারিম ওহির ধারক ফেরেশতাদেরকে দিয়ে দেয়া হয়। তারপর অবস্থা ও ঘটনাবলী অনুযায়ী তেইশ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে জিব্রিল আলাইহিস সালাম আল্লাহর হুকুমে তার আয়াত ও সূরাগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল করেন। (বায়হাকী, ইবনে জারির, মুসতাদরেকে হাকেম, ইবনুল মুনজির, ইবনে আবি হাতেম)
দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে- এটি ইমাম শাবী বলেন, ‘এই রাত থেকেই কুরআন কারিম নাজিলের সূচনা হয়’। যাই হোক উভয় মতের সার কথা হল- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কুরআন নাজিলের সিলসিলা এই রাতেই শুরু হয় এবং এই রাতেই সুরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। কুরআনুল কারিমের নাজিলের সিলসিলা এই রাতে শুরু করা হয়েছে বিধায় এ রাতের মর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘লাইলাতুল ক্বাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর’ অর্থাৎ লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের চাইতেও উত্তম।
এ প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদিস-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বলেন, ‘সেটি সাতাশের বা ঊনত্রিশের রাত। (আবু দাউদ)
২. যির ইবনে হুবাইশ হজরত উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি হলফ (কসম) করে কোনো কিছু ব্যতিক্রম হিসেবে দাঁড় না করিয়ে বলেন, ‘এটা সাতাশের রাত (২৬ রমজান দিবাগত রাত। অর্থাৎ ২৭তম রমজানের রাত)। (মুসনাদে আহমদ, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে হিব্বান)
৩. হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন, হজরত ওমর, হজরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুমসহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহু সাহাবাগণের মনে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ ছিল না যে, এটি রমজানের ২৭তম রাত। (ইবনে আবি শাইবা)
৪. হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ক্বদরের রাতকে রমজানের শেষ দশ রাতের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে তালাশ কর। (বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)
৫. হজরত মুআবীয়া, হজরত ইবনে ওমর, হজরত ইবনে আব্বাস এবং অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈনগণ যে রেওয়ায়াত করেছেন তার ভিত্তিতে পূর্ববর্তী আলেমগণের বিরাট অংশ ২৭ (সাতাশ) রমজানকেই লাইলাতুল ক্বদরের রাত বলে মনে করেন।
কোনো কোনো তাফসিরকারক লাইলাতুল ক্বদরকে তাকদির অর্থে গ্রহণ করেছেন; এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাকদিরের ফয়সালা জারি করার জন্য তা ফেরেশতাদের হাতে তুলে দেন। যা সূরা দুখানে আল্লাহ বলেন, ‘এই রাতে সব ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ ফয়সালা প্রকাশ করা হয়ে থাকে’। (সূরা দুখান : আয়াত ৪)
এ রাতে ফেরেশতাগণ ও জিব্রিল আলাইহিস সালাম মহান রবের আদেশে প্রত্যেক কল্যাণকর ও মঙ্গলময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। সারা রাত শান্তির ধারা বর্ষণ হতে থাকে যা অব্যাহত থাকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত।
লাইলাতুল ক্বদরে সব ধরনের ইবাদত-বন্দেগী করা যাবে। বিশেষ করে নামাজ, কুরআন কারিম তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ, দুরুদ শরিফ ও ইস্তেগফার পাঠ, রাতের বেলায় গরিব-মিসকিন-অসহায় মানুষকে আহার, টাকা-পয়সা-নতুন জামা-কাপড় দানসহ ইত্যাদি ভাল কাজগুলো করা যাবে। এই রাতে অতীতের সব গুনাহ থেকে তাওবা করে আল্লাহ তাআলার দরবারে কান্নাকাটি রোনাজারির মাধ্যমে ক্ষমা চাইতে হবে। তবেই আল্লাহ মেহেরবান সমগ্র মুসলিম মিল্লাতকে মাপ করে দিতে পারেন।
হে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন! আজকের রজনীতে মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর দান করুন। ইবাদত-বন্দেগী করার তাওফিক দান করুন। সমস্ত গুনাহ মাফ করে নাজাত দান করুন। জাহান্নামের আগুন হারাম করে জান্নাতের মেহমান হওয়ার সৌভাগ্য নসিব করুন এবং ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আজকের রজনী আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।
এমএমএস/এসআইএস/পিআর