ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

জাকাত : ইসলামের অর্থনৈতিক ইবাদত

প্রকাশিত: ০৮:২১ এএম, ০৮ জুলাই ২০১৫

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম ও তৃতীয় স্তম্ভই হচ্ছে জাকাত। ইসলাম ও মুসলমানের জন্য জাকাতের গুরুত্ব অত্যাধিক। ঈমানের পর দু’ধরনের ইবাদত হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটি হচ্ছে শারীরিক ইবাদত আর দ্বিতীয় হচ্ছে মালের তথা সম্পদের মাধ্যমে আদায়ের ইবাদত। জাকাত হচ্ছে সম্পদেও মাধ্যমে পালনীয় ফরজ ইবাদত। তাইতো ইসলামী অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছে জাকাত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনুল কারিমের অগণিত জায়গায় জাকাত আদায় করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাইতো জাকাত দানের উপযুক্ত ব্যক্তির উপর জাকাত দেয়া ফরজ তথা আল্লাহর রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ। ধনীর ধনে গরিবের হক নির্ধারণ করে ধনী-গরিবের বৈষম্য সমতার ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে শান্তির সহাবস্থান তৈরি করাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য।
 
জাকাতের বিধান-
জাকাতের ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন, তোমরা নামাজ কায়েক করো এবং জাকাত আদায় করো। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিসে এসেছে-

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুয়া’জ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামেন (শাসকরুপে) অভিমুখে প্রেরণকালে বলেন, সেখানকার অধিবাসীদেরকে আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং আমি (মুহাম্মদ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসুল- এ কথা সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দেবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর প্রতিদিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। তারা যদি এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তাদের সম্পদের উপর সাদকা (জাকাত) ফরজ করেছেন। তাদের মধ্যকার (নিসাব পরিমাণ) সম্পদশালীর নিকট থেকে (জাকাত) উসুল করে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হয়।

জাকাত উত্তোলন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব-
উপরোল্লিখিত হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী জাকাত আমাদের উপর ফরজ এবং জাকাতের বিধান বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের নিকট থেকে জাকাতের টাকা উত্তোলন করে তা রাষ্ট্রের গরিব নাগরিকের মাঝে প্রদান করা। কারণ দেশের সরকার জানে কার কার উপর জাকাত ফরজ হয়েছে; নিসাব পরিমাণ সম্পদ কাদের আছে। সরকারিভাবে জাকাত আদায় করলে দেশের উন্নয়ন হতো গরিব দুঃখীর সংখ্যা দিন দিন কমে যেত। এমন একটা সময় আসতো যখন জাকাত দেয়ার মতো কোনো গরিব মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত না।

দেশের সকল জাকাত আদায়কারীর সকল অর্থ জাকাত ফান্ডে জমা হওয়ার পর রাষ্ট্রের যে সকল খাতে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায়; সে সকল খাতে জাকাতের অর্থ দিয়েই সরকার তার কার্য পরিচালনা করলে রাষ্ট্রের উন্নয়ন হতো। যা আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা উপলব্দি করে সে অনুযায়ী রাষ্ট্রীয়ভাবে জাকাত উত্তোলন করতেন এবং তা বিতরণ করতেন। যার ফলশ্রুতিতে হযরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (যাকে ইসলামের পঞ্চম খলিফা ও দ্বিতীয় ওমর বলা হয়) এর সময়ে জাকাতের অর্থ নেয়ার মতো কোনো গরিব মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

জাকাত আদায়ের ফজিলত-
জাকাত আদায়ের মাধ্যমে শুধু মালের পবিত্রতা অর্জনই নয়। জাকাত প্রদানের ফলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিবিধ উপকার হয়। আর জাকাত আদায়ের মাধ্যমে আমরা আখিরাতে মুক্তি লাভ করতে পারি। হাদিসে এসেছে-

হযরত আবু আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত- এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ‘আপনি আমাকে এমন একটি কাজ সম্পর্কে অবহিত করুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বলেন, তার কী হয়েছে, তার কী হয়েছে! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বললেন, তার বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, জাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখবে। (বুখারী)

তাহলে বোঝা গেল জাকাতের মাধ্যমেও আমরা নাজাত লাভ করে জান্নাত পেতে পারি। এখন রমজান মাস চলছে। যারা এই মাসে জাকাত আদায় করবে, তারা অন্য মাসের চেয়ে দশ থেকে সাতশ’ গুণ বেশি ছাওয়াবের অধিকারী হবে। আল্লাহ আমাদের সমাজের জাকাত প্রদানকারী প্রত্যেককে এমনভাবে জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন যাতে এই সমাজ গরিব-দুঃখীমুক্ত সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আল্লাহ আমাদের তাওফকি দান করুন। আমিন।

জাগো নিউজের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/পিআর

আরও পড়ুন