ইতিকাফ কী ও কেন
ইতিকাফ হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যমগুলোর একটি। রমজান ও রমজানের বাইরে বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে ইতিকাফ করা সুন্নাত। আল্লাহর ইবাদাতে নিরবচ্ছিন্ন সময় কাটানোর ও লাইলাতুল ক্বদর লাভের একমাত্র সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে ইতিকাফ। সুতরাং সামনে ইতিকাফের সময় আসছে, আমরা নিজেদেরকে ইতিকাফের জন্য প্রস্তুত করি। ইতিকাফ কী ও কেন? এর সংক্ষিপ্ত আলোচনা জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি-
ইতিকাফ কী
ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা অর্থাৎ কোনো জিনিসকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা ও তার প্রতি মনকে আবদ্ধ রাখা। চাই সেটা ভালো হোক বা মন্দ। ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহ তাআলার নৈকট্য হাছিলের নিয়তে মসজিদকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা এবং সেখানে অবস্থান করা। আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগীতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করিয়ে লাইলাতুল ক্বদরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃত ও কবুলিয়াত ইবাদতের ভাগীদার হওয়া।
ইতিকাফ কেন
ইতিকাফের স্বপক্ষে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন- ‘ওয়া আনতুম আ’কিফু-না ফিল মাসা-জিদ’; তিলকা হুদু-দাল্লাহি ফালা-তাক্বরাবু-হা’। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৭) অর্থাৎ আর যখন তোমরা মসজিদ ইতিকাফে বসো তখন স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা এর ধারে কাছেও যেয়ো না। ইতিকাফে বসার অর্থই হচ্ছে, রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে অবস্থান করা এবংএই দিনগুলোকে আল্লাহর যিকিরের জন্য নির্দিষ্ট করা। এই ইতিকাফে থাকা অবস্থায় নিজের মানবিক ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন (অজু, গোসল, মিসওয়াক, পায়খানা-পেশাব) পূর্ন করার জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া যায় কিন্তু যৌন স্বাদ আস্বাদন করা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখা একান্ত অপরিহার্য।
কেননা অন্যান্য নবী-রাসুলদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করে শত শত বছর ইবাদাত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকত। কিন্তু আমাদের হায়াত কম যার কারণে শত শত বছর বেঁচে থেকে ইবাদত করার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া লাইলাতুল ক্বদরের রজনী যদি আমরা পেয়েই যাই; তবে হাজার মাসের ইবাদতের সমপরিমাণ ইবাদত একরাত্রিতেই সম্ভব। সুতরাং আমরা লাইলাতুল ক্বদরের জন্য ইতিকাফ করবো। লাইলাতুল ক্বদরের অর্জন ইতিকাফের মাধ্যমেই পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর এই জন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিকাফের জন্য জোর তাগিদ দিয়েছেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ার জীবনে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করে গেছেন। (বুখারি, মুসলিম)। হযরত আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রাসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে যে পরিমাণ কষ্ট করতেন, এত কষ্ট অন্য সময় করতেন না।’ (মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, ‘শেষ দশক হাজির হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা রাত জাগতেন, পরিবারের সবাইকে জাগাতেন। খুব কষ্ট করতেন এবং কোমরে কাপড় শক্ত করে বেঁধে নিতেন।’ (বুখারি, মুসলিম)।
সুতরাং আখিরাতের চূড়ান্ত কল্যাণে গুনাহ মাফ ও জান্নাত লাভের জন্য ইতিকাফের প্রস্তুতি নেয়া প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য একান্ত আবশ্যক। ইতিকাফকালীন সময়ে পরিবারের সকল খরচাদি ও প্রাথমিক সমস্যা সমাধান করে আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে রমজানের শেষ দশ দিন সপে দেয়ার জন্য আমরা এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করি। আল্লাহ আমাদেরকে ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর রেজামন্দি হাছিলের তাওফিক দান করুন। আমীন।
দৃষ্টি আকর্ষণ
ইতিকাফে আমরা কী আমল করবো; যথা সময়ে এ সকল আলোচনা আপনাদের প্রিয় সাইট জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মাধ্যমে তুলে ধরব। ইনশা আল্লাহ।
জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।
এইচএন/আরআইপি