পাপ মোচনের মাস রমজান
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য বারটি মাস টাইম ফ্রেম তৈরি করে দিয়েছেন। প্রতিটি মাসের জন্য আলাদা আলাদা মর্যাদা, শান-শওকত নির্ধারণ করেছেন। আর একটি মাসকে রেখেছেন শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। এই মাসে আপনি করতে চান; যেভাবে পালন করতে চান; সবকিছুই সম্ভব। আপনি যদি সফলতা লাভ করতে তাও সম্ভব; আর যদি ব্যর্থ হতে চান তাও সম্ভব। এসব কিছু করার কর্মের স্বাধীনতাও আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন। এখন সিদ্ধান্ত আপনার আপনি কি করতে চান। এ পৃথিবীকে আল্লাহ আমাদের জন্য পরীক্ষাগার করে হিসেবে তৈরি করেছেন। প্রশ্ন তৈরি করে তার উত্তরপত্র মহাজীবন ব্যবস্থা গাইড স্বরূপ আল কোরআনকে আমাদের জন্য পেশ করেছেন। তাও আবার এই বরকতময় মাসে। তাইতো এ মাসকে কোরআন নাযিলের মাস বলা হয়।
আল্লাহ বলেন- ইন্নামা আমওয়ালুকুম ওয়া আওলাদুকুম ফিতনাতুন ওয়াল্লাহু ইনদাহু আঝরুন আজিম। (সুরা তাগাবুন আয়াত ১৫)
অর্থাৎ তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি শুধু মাত্র পরীক্ষার জন্য। আল্লাহর নিকটই মহা প্রতিদান।
যে জিনিসটি সাধারণত মানুষের ঈমানী চেতনায় এবং নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় বিশৃংখলা সৃষ্টি করে এবং যে জন্য মানুষ প্রায় মুনাফেকী, বিশ্বাসঘাতকতা ও খেয়ানতে লিপ্ত হয় সেটি হচ্ছে তার অর্থনৈতিক স্বার্থ ও সন্তান-সন্তুতির স্বার্থের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ। এ কারণে বলা হয়েছে, এ অর্থ-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতির মোহে অন্ধ হয়ে তোমরা সাধারণত সত্য-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাও। অথচ এগুলো তো আসলে দুনিয়ার পরীক্ষাগৃহে তোমাদের জন্য পরীক্ষার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়। যাকে তোমরা পুত্র বা কন্যা বলে জানো, প্রকৃতপক্ষে সে তো পরীক্ষার একটি বিষয়। আর যাকে তোমরা সম্পত্তি বা ব্যবসা বলে মনে কর, সেও প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষার আর একটি বিষয়।
এ জিনিসগুলো তোমাদেরর হাতে সোপর্দ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে- তোমরা অধিকার ও দায়-দায়িত্বের প্রতি কতদূর লক্ষ্য রেখে কাজ করো; দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে আবেগতাড়িত হয়েও কতদূর সত্য ও সঠিক পথে চলা অব্যাহত রাখো এবং দুনিয়াবি জিনিসের প্রতি প্রেমাসক্ত নফসকে কতদূর নিয়ন্ত্রণে রেখে পুরোপুরি আল্লাহর বান্দায় পরিণত হও এবং আল্লাহ তাদের যতটুকু অধিকার নির্ধারণ করেছেন ততটুকু আদায়ও করতে থাকো, এগুলোর মাধ্যমেই তা যাচাই করে দেখা হবে। (তাফহিম)
আবার আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুরা আম্বিয়ার ৩৫ নং আয়াতে বান্দাকে পরীক্ষার ব্যাপারে বলেন- ওয়া নাবলুকুম বিশশাররি ওয়াল খাইরি ফিতনাতান ওয়া ইলাইনা তুরযাউন)।
`আর ভাল মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি আর আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে।`
উপরোলেখিত আয়াত দ্বয়ে ফিতনা শব্দটি পরীক্ষা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আয়াতের ব্যখ্যায়-
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তোমাদের সুখ-দুঃখ, সুস্থতা-অসুস্থতা, প্রাচুর্য-দারিদ্র, হালাল-হারাম, পাপ-পূণ্য এবং হেদাযেত ও গোমরাহির মাধ্যমে পরীক্ষা করব। (তাফসিরে ইবনে কাসীর)
হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ফেতনা সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াস সাল্লামের হাদিস কার মনে আছে? হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তাকে বলতে শুনেছি, `ব্যক্তির ফিতনা তার পরিবার-পরিজন, মাল-সম্পদে ও তার প্রতিবেশির মধ্যে যার কাফ্ফারা হয়- সালাত, সিয়াম ও সদকা।` (বুখারি ও মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াস সাল্লাম বলেছেন-
লিকুলি আমালিন কাফ্ফারাতুন; ওয়াসসাওমু লি ওয়া আনা আয্যি বিহি। প্রত্যেক কাজের কাফ্ফারা রয়েছে। আর সাওম বা রোজা হচ্ছে আমার জন্য; আমি তার প্রতিদান দিব। (বুখারী ও মুসনাদে আহমদ)
মুসনাদে আহমদে এসেছে- প্রত্যেক কাজের কাফ্ফারা আর সাওম আমার জন্য; আমি এর প্রতিদান দেবো। এ কাজগুলো পরিপূর্ণভাবে করার একমাত্র মাস হচ্ছে পবিত্র রমজানুল মোবারক। যে ব্যক্তি এই দায়-দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারবে সেই সফলকাম; সেই বেগুনাহ মাসুম বান্দায় পরিণত হবে।
হযরত আবুদ সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াস সাল্লামকে বলতে শুনেছি : মান সামা রামাদানা ওয়া আরাফা হুদুদাহু ওয়া তাহাফ্ফাজা মিম্মা কানা ইয়ামবাগি লাহু আঁইয়াতাহাফ্ফাজা ফিহী কাফ্ফারা মা ক্ববলাহু। (ইবনু হিব্বান, আবু ইয়ালা, বয়হাকী, মুসনাদে আহমদ)
অর্থ : যে ব্যক্তি রমজানের সাওম বা রোজা পালন করল, তার সীমা রেখা ঠিক রাখল এবং যা থেকে বিরত থাকা দরকার তা থেকে সে বিরত থাকল, তার পূর্বের পাপ মোচন করা হবে।’
হাদিস শরীফে এসেছে-
যে ব্যক্তি রমজান পেল এবং রমজানের রোজা পেলো কিন্তু নিজেকে গুনাহ মুক্ত করতে পারল না তার মতো অভাগা আর কেউ নাই। আর যে ব্যক্তি পবিত্র রমজান পেল এবং তার হদসমূহ সঠিকভাবে পালন করল। সে এমন পাপমুক্ত হল যেন সে সদ্য মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হল।
সার কথা হচ্ছে- রমজান মাসের রোজা হচ্ছে সকল মন্দ ও গুনাহের কাফ্ফার। এবং প্রত্যেক ভাল কাজ মন্দ কাজের গুনাহ সমূহকে মিটিয়ে দেয়। যেমন আল্লাহ বলেন- ইন্নাল হাসানাতি ইউজহিব্নাস সাইয়্যিআত। (সুরা হুদ : আয়াত ১১৪)
অর্থাৎ নিশ্চয় ভাল কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়। এ আয়াত প্রমাণ হলে যে, নিঃসন্দেহে অধিক পরিমাণ নেক কাজ গুনাহের শৃংখল থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। অতপর বান্দার নেক আমলের কারণে আল্লাহ তাকে খালেস তাওবা করার তাওফিক দান করেন।
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত রমযানের রাত দিন হারাম কথা যথা- গীবত, পরনিন্দা ও হারাম দৃষ্টি থেকে নিজেকে হেফাজত করা, যার কুফল অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজানে বেড়ে যায়। আল্লাহ আমাদের হিদায়াত ও সঠিক পথে থাকার তাওফিক দান করে রমজানে নিজেদের পাপ মোচনের তাওফিক দান করুন। আমীন।
তথ্যসূত্র : কুরআনুল কারীম, তাফসিরে ইবনে কাসীর, তাফহীম, সহিহ বুখারি, মুসলিম, ইবনু হিব্বান, আবু ইয়ালা, বয়হাকী, মুসনাদে আহমদ।
জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন
এইচএন/আরআইপি