রসিকতার নামে কাউকে কষ্ট দেয়া অনুচিত
মানুষের চিত্ত-বিনোদনে খোশগল্প, হাস্যরস, কৌতুক করায় কোনো অন্যায় নেই; যদি সে রসিকতা বা হাস্যরসে গোনাহ বা মিথ্যা না থাকে। রসিকতায় যদি কেউ শারীরিক বা মানসিক কষ্ট না পায় আর গোনাহমুক্তভাবে আনন্দ লাভ করে তাতে ইসলামে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
রসিকতার নামে এমন কোনো কথা বা কাজ করা যাবে না; যাতে মানুষ শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।
যদিও এ সব রসিকতার ফলে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলা যায় না; তথাপিও রসিকতা করার সময় এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।
অনেকেই রসিকতার নামে শরীরে আঘাত করেন। এ ধরনের রসিকতা ঠিক নয়। এগুলো পরিহার করা জরুরি।
যেমন- কেউ হাত বা চিকন কঞ্চি দ্বারা কারো মাথায় আঘাত করে বা চুল ধরে টান দিয়ে কিংবা শরীরে চিমটি কেটে মজা করল আর জিজ্ঞেস করল বন্ধু কেমন আছ? যে ব্যক্তি এগুলো করল সে হয়ত মজা করল কিন্তু যার সঙ্গে এ আচরণ করা হলো সেতো কষ্ট পেল।
আর তা ঐ কথার মতো- ‘এ যেন তোমাদের খেলা আমাদের মরণ’-এরই প্রতিরূপ হয়ে যায়।
বিশেষ করে
ছোট ছোট শিশু কিশোরদের সঙ্গে এ জাতীয় রসিকতা নির্মম নিষ্ঠুরতা ছাড়া কিছুই নয়। মনে রাখতে হবে এটা রসিকতা নয়। রসিকতার নামে জুলুম।
বিরক্তিকর রসিকতা
সমাজে কিছু সহজ ও সরল প্রকৃতির মানুষ রয়েছে; যাদেরকে নির্দিষ্ট কোনো কথা বললেই তারা ক্ষেপে যান। প্রথমত তাদেরকে এ ক্ষেপানো কথাগুলো একবার বা দু'বার বললে সাধারণত তাদের মাঝে কোনো বিরক্তি আসে না।
কিন্তু যখনই একাধিকবার বলা হয়, তখনি তারা ক্ষেপে যায়। এ রকম রসিকতা একেবারেই নির্বুদ্ধিতার শামিল। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।
আর এ রসিকতায় উত্যক্ত করাই যাদের উদ্দেশ্য; সেদিকে তাদের খেয়াল করার কথা নয়। বিরক্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না মারমুখো হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের হুশ হয় না। অথচ এটা রসিকতার নামে চরম বাড়াবাড়ি।
অহেতুক রসিকতার নামে অন্যকে বিরক্ত করা কোনো সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয়। কাজেই রসিকতার নামে কাউকে কষ্ট দেয়া অনুচিত এবং তা পরিত্যাজ্য বিষয়।
রসিকতায় আদব
ছোট-বড় সবার সঙ্গেই রসিকতা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ছোটদের রসিকতা যেন বড়দের সঙ্গে আদবের গণ্ডি অতিক্রম না করে। আবার বড়দের রসিকতায়ও যেন ছোটদের প্রতি আদর-স্নেহের আবহ থাকে।
উদাহরণ স্বরূপ এক সাহাবির ঘটনা তুলে ধরা হলো-
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি তাঁবুর ভেতর অবস্থান করছিলেন। সেই সাহাবি এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ভেতরে প্রবেশ করতে বললেন; কিন্তু তাঁবুটি ছিল বেশ ছোট। সাহাবি রসিকতা করে বললেন হে আল্লাহ রাসুল! (তাবুতে) আমার পুরো শরীরটাই প্রবেশ করাব নাকি আংশিক?
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পুরোটাই।’ (আবু দাউদ)
পরিশেষে...
রসিকতায় ইসলামি দিক-নির্দেশনাগুলো মেনে চলা আবশ্যক। রসিকতা খোশগল্প ও কৌতুক যেন অভদ্র ও আচরণ প্রকাশ না পায়। রসিকতার নামে যেন কেউ শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত না পায় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
খোশগল্পে, রস আড্ডায় রসিকতাকে সব রকম ক্ষতি থেকে রক্ষা করে শিক্ষণীয় করে তোলার জন্য স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রেখে ভাষা ও বিষয়বস্তু নির্ধারণে সতর্কতা অবলম্বন করাও আবশ্যক।
খোশগল্প ও রসিকতার বিষয়ে হজরত সাঈদ ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক তাঁর সন্তানকে দেয়া উপদেশটি প্রণিধানযোগ্য। আর তাহলো-
হে বৎস! রসিকতায় পরিমিতিবোধের পরিচয় দেবে। এতে বাড়াবাড়ি ভাবমূর্তি নষ্ট করে ও মূর্খদের অন্তরে ধৃষ্টতার জন্ম দেয়। আবার এর অভাবে প্রিয়জনেরা তোমার থেকে দূরে সরে যাবে এবং সংগী-সাথীরা তোমাকে নিয়ে অস্বস্তি বোধ করবে। এমন যেন না হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রসিকতা, কৌতুক ও খোশগল্পে মিথ্যাচার ও অনৈসলামিক বিষয়সহ কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম