বনি ইসরাইলের নবি হজরত শিমবীলের সঙ্গে অনুসারীদের কথোপকথন
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ইন্তেকালে পর তাঁর অনুসারীরা কিছুদিন সঠিক পথের ওপর অধিষ্ঠিত ছিল। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের অধিকাংশ শিরক এবং বিদাআতে জড়িত হতে থাকে। তাদেরকে সঠিক প্রদানে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলদের মধ্যে থেকেই অনেক নবি প্রেরণ করেন।
সে সব নবিদের একজন হলেন হজরত শীমবিল আলাইহিস সালাম। যিনি নবুয়ত লাভের পর বনি ইসরাইলরা তাঁদের জন্য বাদশাহ নিযুক্তসহ অনেক আবদার তুলে ধরেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে সে ঘটনা তুলে ধরেন। আল্লাহ তাআলা বলেন
আয়াতের অনুবাদ
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২৪৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম-এর পরবর্তী নবি হজরত শীমবিলের সঙ্গে তার অনুসারীদের কথপোকথনের বর্ণনা তুলে ধরেছেন।
হজরত মুসা আলাইহি সালামের মৃত্যুর পর কিছুদিন পর্যন্ত তারা সঠিক পথের ওপর ছিল। অতঃপর তারা ধীরে ধীরে অন্যায়ের প্রতি ধাবিত হতে থকে। কিন্তু তখনও তাদের মধ্যে নবিদের আগমন বিরাজমান ছিল। আর বনি ইসরাইলিদের অন্যায়-অপরাধের কারণে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত নেয়ামতসমূহও থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।
একটা সময় এমন আসে, যে বংশ হতে নবি জন্ম গ্রহণ করতো সে বংশের লোকেরা বিভিন্ন যুদ্ধে নিহত হয়। শুধুমাত্র একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা জীবিত ছিলেন; যার স্বামী নিহত হয়েছিল।
বনি ইসরাইলিদের দৃষ্টি তখন নিবব্ধ ছি এ মহিলার দিকে। যদি আল্লাহ তাআলা তাকে কোনো পুত্র সন্তান দান করেন। আর তাকে যদি নবি হিসেবে মনোনীত করা হয়; তবে তাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামত অব্যাহত থাকবে এ আশায়। সেই মহিলাও দিনরাত আল্লাহর দরবারে এ দোয়াই করতেন।
অবশেষ আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করলেন। তার ঘর আলো করে এক পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। মহিলা তার নাম রাখেন শীমবির বা শামউন। যার অর্থ হলো ‘আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।’
হজরত শিমবীলের মা তার সন্তানকে তাওরাত শিক্ষা গ্রহণের জন্য বাইতুল মুকাদ্দাসে রেখে আসেন। একজন বয়োবৃদ্ধ আলেক তাকে তাওরাত শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
যখন হজরত শিমবীল নবুয়ত লাভের বয়সে উপনীত হলেন; তখন তিনি তার শিক্ষকের কাছে নিদ্রিত অবস্থায় দেখলেন হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম আগমন করেন এবং তাকে তাঁর বৃদ্ধ শিক্ষকের সূরে ডাকেন, ‘হে শিমবীল!।
তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বৃদ্ধ শিক্ষকের সামনে দাঁড়ালেন এবং বললেন, পিতা! আপনি কি আমাকে ডেকেছেন?’ শিক্ষক না বলা সমীচিন মনে না করে বললেন, তুমি আরো ঘুমাও।’
এভাবে দ্বিতীয় বারও ডাক দেয়া হল। এবারও তিনি তার শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলেন, তিনি তাঁকে ডেকেছেন কিনা। তখন শিক্ষক তাকে বললেন, তোমাকে যদি এভাবে তৃতীয় বার আমার ডাক শোন। তবে আমার ডাকে তুমি সাড়া দেবে না।
এভাবে যখন তৃতীয় বার ডাকা হলো তখন তিনি উপলব্ধি করলেন যে, এই ডাক শিক্ষকের নয় বরং তা ছিল হজরত জিবরিল আলাইহিস সালামের ডাক।
হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম তাকে বলরেন, ‘তুমি তোমার সম্প্রদায়ের কাছে গমন কর এবং তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের পয়গাম পৌঁছাও। কেননা আল্লাহ তোমাকে পয়গাম্বর হিসেবে মনোনীত করেছেন।
অতঃপর তিনি সম্প্রদায়ের কাছে গেলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান করলেন। তাঁর সম্প্রদায় দাওয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। তাঁকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে এবং বলে, ‘তুমি যদি সত্য নবি হও তবে আমাদের (বনি ইসরাইলের) জন্য বাদশাহ নিযুক্ত কর। যার নেতৃত্বে আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করব। পবিত্র কুরআনে একথার উল্লেখ করা হয়।
তিনি তাদেরকে বললেন, তোমাদের জন্য বাদশাহ নির্বাচন করলে তো তোমরা আল্লাহর পথে জেহাদে অংশ গ্রহণ করবে না বরং বাদশাকে ফেলে পিছু হটবে। আর তোমাদের প্রতি যদি জেহাদ ফরজ হয়; আর তোমরা আল্লাহর বিধানের অমান্য করে জেহাদ থেকে বিরত থাক তবে হবে তোমাদের জন্য জুলুম। যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
অতঃপর তাদের জন্য বাদশাহ নির্বাচন করা হয়। বাদশাহ নির্বাচনের পর যখন তাদেরকে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে বলা হয়; তাদের অধিকাংশই তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং আল্লাহর নির্দেশের প্রতি জুলুম করে। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার ফলে বনি ইসরাইল জাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর পথে জান এবং মাল দিয়ে কুরবানি করার নির্দেশ প্রদান করেন; যাতে তাঁর বিধানের বিরোধীতা না করা হয়। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইল কর্তৃক আল্লাহর নির্দেশ অমান্যের কথা এ আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। যে অবাধ্যতার কারণে তাদের প্রতি অভিশাপ নাজিল হয় এবং তাদের প্রতি নাজিল হওয়া রহমত নেয়ামত বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- সুরা বাকারার ২৩৮-২৩৯ নং আয়াত
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের বিধান যথাযথ বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। অন্যান্য নবির উম্মতদের মতো আল্লাহর বিধান লংঘনের মারাত্মক অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি