ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

কুরআনে বনি ইসরাইলের মৃতদের পুনর্জীবনের বর্ণনা

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৭:২৩ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পবিত্র কুরআনুল কারিমের আয়াত বা বিধান নাজিলের একটি নিয়ম হলো যখনই শরিয়তের কোনো বিধান বর্ণিত হয় তখনই তার পরে কোনো একটি (ঐতিহাসিক) ঘটনার উল্লেখ করা হয়। এখানেও তাই করা হয়েছে। ইতিপূর্বে মানুষের পারিবারিক জীবনের অনেক বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।

আর এখান থেকে একটি ঘটনার বর্ণনা করেই অন্য একটি বিষয়ের ধারাবাহিক বর্ণনার শুরু হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নতুন ভাষণ শুরু আগেই বনি ইসরাইলের একটি ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুসলমানদেরকে আল্লাহর পথে জিহাদ এবং অর্থ-সম্পদ দানের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

পাশাপাশি যে সব দুর্বলতার কারণে বনি ইসরাইল জাতি অবনতি ও পতনের শিকার হয়েছিল; সেগুলো থেকে মুসলমানদের দূরে থাকার নসিহত প্রদান করেছেন।

মুসলমানরা যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আশ্রয় গ্রহণ করে এবং কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বারবার যুদ্ধের জন্য অনুমতির অপেক্ষায় ছিল; তখন যুদ্ধের অনুমতি দেয়ার পরও তাদের মধ্যে কিছু লোক ইতস্তত করছিল। তখন মুসলমানদের শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে বনি ইসরাইলদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন-

Quran

আয়াতের অনুবাদ

Quran

আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য বনি ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করেন এবং পরবর্তী আয়াতে আল্লাহর পথে জেহাদ এবং অর্থ-সম্পদ ব্যয়ের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।

এ আয়াতের ব্যাপারে আল্লামা ইবনে কাসির হজরত ইবনে আব্বাসের একটি বর্ণনা তুলে ধরেছেন, ‘বনি ইসরাইলের কিছু লোক একটি শহরে বাস করতো; তাদের সংখ্যা ৪ হাজার; কারো কারো মতে ৮, ৯, ৩০ ও ৪০ হাজার ছিল। নির্দিষ্ট সংখ্যা যা-ই হোক তারা সংখ্যায় অনেক ছিল।

ঘটনাক্রমে সেখানে একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি ‘প্লেগ’ দেখা দেয়; তারা এ অবস্থায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে শহর ছেড়ে পলায়ন করে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী একটি বিস্তৃত ময়দানে আশ্রয় গ্রহণ করে। তারা মনে করেছিল এভাবে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

কিন্তু তারা জানতো না যে, এ পৃথিবীতে যে একবার আগমন করে তাকে অবশ্যই এখান থেকে গমন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা এ সত্যকে বাস্তবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য তাদের কাছে দু’জন ফেরেশতা পাঠালেন।

ফেরেশতা দু’জন ময়দানের দু’প্রান্তে দাঁড়িয়ে এমন বিকট শব্দ করলেন যে, উপস্থিত সবাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। এদের মধ্যে একজনও জীবিত রইলো না। এমনকি চার দিকে একটি দেয়া তুলে দেয়া হলো এবং হাজার হাজার মানুষের মৃত দেহগুলো পঁচে গলে একাকার হয়ে গেল।

অনেক দিন পর
বনি ইসরাইলের একজন নবি হজরত হিজকিল আলাইহিস সালাম ঐ স্থান দিয়ে অতিক্রম করার সময় এ ভয়াবহ দৃশ্য দেখলেন এবং মৃত লোকদের ঘটনা সম্পর্কে অবগত হলেন।

অতঃপর তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে এ বলে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! তাদের সবাইকে পুনর্জীবন দান কর।’

আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করলেন এবং তাঁকে নির্দেশ দিলেন, ‘তুমি তাদের হাড়গুলোকে সম্বোধন করে ডাক, তিনি ডাকলেন- হে পুরাতন হাড়সমূহ! আল্লাহ পাক তোমাদেরকে স্ব-স্ব স্থানে একত্রিত হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহর কুদরত ও নির্দেশে হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে পুনঃস্থাপিত হলো।

এরপর হজরত হিজকিলের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ হলো- হাড়সমূহে গোস্ত ও চামড়ার আবরণ হওয়ার আদেশ করার জন্য। তিনি বললেন, ‘হে হাড়সমূহ! আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন গোস্ত পরিধান করে রগ ও চামড়া দ্বারা সুসজ্জিত হও।’

হজরত হিজকিলের এ বাক্য উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে কংকাল মাত্রই গোস্ত ও চামড়ার রূপ ধারণ করে লাশে পরিণত হলো।

অতঃপর রূহকে সম্বোধন করে বলা হলো- হে রূহ বা আত্মাসমূহ! আল্লাহ তাআলা নির্দেশ করেছেন, তোমরা যার যার শরীরে ফিরে আস।

তাঁর এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কুদরতে আগের নমুনা মতোই প্রতিটি মানুষ জীবন্ত অবস্থায় তাঁর সম্মুখে দণ্ডায়মান হলো এবং সবার মুখে একই বাক্য উচ্চারিত হলো-

‘সুবহানাকা লা-ইলাহা ইল্লা আংতা’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমারই পবিত্রতা বর্ণনা করি, হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত আর কোনো মা’বুদ নেই।’

এ ঘটনায় প্রমাণিত হলো মৃত্যু থেকে পলায়নের চেষ্টা বৃথা; কেননা মৃত্যু হলো জীবনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। আর জীবন ও মৃত্যু সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তাআলার দুটি আদেশের নাম। একটি আদেশের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় আর অপর আদেশের মাধ্যমে লয় হয়। উল্লেখিত আয়াতে এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

অন্য আয়াতে (২৪৪) আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার ঘোষণা রয়েছে। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, ‘তিনি একবার সিরিয়ার সীমান্তের দিকে রওয়ানা হলেন। সিরিয়া সীমান্তের ‘সারাগ’ নামক স্থানে পৌঁছার পর তাঁকে জানানো হলো যে, ওই স্থানে এখন মহামারী আক্রান্ত। এ অবস্থায় তিনি সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হবেন কিনা?

এ সময় তিনি সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করলেন, তখন বিখ্যাত সাহাবি আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি নির্দেশ শোনালেন-

নিশ্চয় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্লেগ মহামারী সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, এটি একটি আজাব। এর দ্বারা আগের যুগের কোনো কোনো উম্মতকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। তার কিছু অংশ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। এখন তা কখনও চলে যায় পুনরায় আবার ফিরে আসে।

অতএব, যদি কেউ এ কথা শুনে যে, কোনো স্থানে এ মহামারী দেখা দিয়েছে; তবে সেখানে কোনো অবস্থাতেই তার গমন করা উচিত নয়।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত রয়েছে সে যেন ঐ স্থান ত্যাগ না করে। (বুখারি) এ হাদিস শুনার পর হজরত ওমর সিরিয়া সফরের কর্মসূচি ত্যাগ করেন।

পড়ুন- সুরা বাকারার ২৩৮-২৩৯ নং আয়াত

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের সুন্দর ও শাশ্বত বাণীগুলো অধ্যয়ন করে নিজেদের ঈমান ও আমলকে সুন্দর করার তাওফিক দান করুন।
নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনকেও সুন্দর করার তাওফিক দান করুন। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা সাধনা করে ইসলামের সুমহান পতাকা তলে আশ্রয় গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

আরও পড়ুন