মৃত্যুর পর কবরের সুখ-শান্তির ফয়সালা হবে যেভাবে
‘কুল্লু নাফসিং ঝায়িক্বাতুল মাউত’ অর্থাৎ (দুনিয়ার) প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ এটা আল্লাহ তাআলার ঘোষণা। এতো গেল দুনিয়ার সব জানদার প্রাণীর কথা।
একটা কথা মুসলিম উম্মাহর স্মরণ রাখা চাই- দুনিয়ার জীবনই মানুষের জন্য শেষ নয়, বরং দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের পরেই শুরু হবে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের পথ চলা।
পরকালের স্থায়ী জীবনের সুখ, শান্তি এবং দুঃখ যাতনায় ভরপুর থাকবে। সুখ-শান্তি, কল্যাণ এবং দুঃখ-যাতনা ও অকল্যাণ নির্ভর করবে মানুষের দুনিয়ার কর্মকাণ্ডের ওপর।
যারা দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলার বিধি-বিধান মেনে চলবে তারাই পাবে সুখের সন্ধান। আর যারা তাঁর অবাধ্য হবে তাদের দুঃখের সীমা থাকবে না।
বিশেষ করে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের শুরুতে কবরের জীবনে যারা সফলতা লাভ করবে, পরবর্তী প্রত্যেক মঞ্জিলে তারা সফলতা লাভ করবে। এ জন্য প্রত্যেককেই কবরের কিছু সুনির্দিষ্ট জবাবের মুখোমুখি হতে হবে। যারা কবরের প্রতি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে তারাই সফল।
মৃত্যুর পর কবরে দু’জন ফেরেশতা মানুষকে যে প্রশ্ন করবে সে প্রসঙ্গে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে সতর্ক করতে হাদিসে প্রশ্নোত্তরের সুস্পষ্ট বর্ণনা তুলে ধরেছেন।
হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে জানাযায় বের হই। এতে বর্ণিত হয় যে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘(মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর)কবরবাসীর নিকট দু’জন ফেরেশতা আসবেন। অতঃপর তাকে (মৃত ব্যক্তিকে) উঠিয়ে বসানো হবে এবং (তারা) জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার রব কে? তখন সে (মুমিন হলে) বলবে, আমার রব ‘আল্লাহ’।
আবার জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার দ্বীন কি? (মুমিন হলে) উত্তরে সে বলবে, আমার দ্বীন ‘ইসলাম’।
তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করবেন, তোমাদের নিকট প্রেরিত এ ব্যক্তিটি কে ছিলেন? (মুমিন হলে) উত্তরে সে বলবে, তিনি হলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ)
অন্য হাদিসে এসেছে, মৃতব্যক্তিকে দাফনের পর আত্মীয় স্বজন যখন চলে যায়, মৃতব্যক্তি তখন তাদের হাটাচলা বা জুতার শব্দ শুনতে পান। অতঃপর মৃতব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে দু’জন ফেরেশতা আসেন।
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘বান্দাকে (মৃতব্যক্তিকে) যখন তার কবরে রাখা হবে এবং তার (বহনকারী) সাথীরা সবাই চলে যায়, তখন সে তাদের জুতা-স্যান্ডেলের শব্দ শুনতে পায়।
অতঃপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসবেন এবং তাকে বসিয়ে বলবেন, ‘এ মানুষটি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে (দুনিয়াতে) কি বলতে? তখন সে (মুমিন হলে) বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল।
অতঃপর তাকে বলা হবে, দেখ জাহান্নামের সে স্থানটি যার পরিবর্তে আল্লাহ তাআলা তোমাকে বেহেশতের স্থান প্রদান করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তখন সে উভয় স্থান অবলোকন করবে।
আর কাফের বা মুনাফেক (প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বনিবি সম্পর্কে) বলবে, ‘জানি না, মানুষেরা যা বলতো তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি জাননি এবং পড়নি। অতঃপর তার দু’কানের মাঝে লোহার হাতুড়ি দ্বারা প্রহার করা হবে। আর সে (তখন) এমনভাবে চিৎকার করবে, যা মানুষ ও জ্বিন ব্যতিত তার পার্শ্ববর্তী সকলেই (জীব-জন্তু ও পশু-পাখি) শুনতে পাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
পরিশেষে...
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের শান্তি ও কল্যাণের জন্য কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। কবরের প্রশ্নগুলোর উত্তর সুন্দরভাবে দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।'
এমএমএস/আরআইপি