যে কারণে জুমআর দিন ইবাদতের জন্য মর্যাদাবান
জুমআর দিন মুসলিম উম্মাহর ইবাদতের জন্য অনন্য মর্যাদার দিন। ইয়াহুদিরা তাদের ইবাদতের জন্য শনিবার আর নাসারারা রোববারকে মনোনীত করেছে। আর জুমআর দিনকে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর জন্য দান করেছেন।
এ তথ্য সহিহ হাদিস সূত্রে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে আল্লাহ্ তাআলা জুমআর দিনের সন্ধান দেননি। ইয়াহুদিরা বেছে নিয়েছে শনিবারকে, নাসারাগণ পেয়েছে রোববার। আর আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে (উম্মতে মুহাম্মাদিকে) জুমআর দিনের সন্ধান দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া শনি এবং রোববার সপ্তাহের দিন হিসেবে যেহেতু শেষে পরকালেও তারা মুসলিম উম্মাহর পেছনে থাকবে। উম্মতে মুহাম্মাদি দুনিয়াতে এসেছে সবার পরে আর পরকালে উম্মতে মুহাম্মাদি থাকবে সবার আগে। আর সবার আগে এ উম্মতের ফয়সালা হয়ে যাবে।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমআর দিন সম্পর্কে উম্মতের উদ্দেশ্যে নসিহত করেন। যাতে তারা গুরুত্বসহ জুমআর দিনের ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সমস্ত দিনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে জুমআর দিন। এই দিনে আদম (আলাইহিস সালাম)কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে; এ দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। জুমআর দিনেই কেয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। (তিরমিজি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেন, ‘সমস্ত দিনগুলোর মধ্যে জুমআর দিনই হচ্ছে সর্বোত্তম দিন। এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনেই তাঁকে দুনিয়ায় নামিয়ে দেয়া হয়েছে, এ দিনেই তাঁর তাওবা কবুল করা হয়েছে, এ দিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন এবং এ দিনেই কেয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।
প্রিয়নবি আরা বলেন, ‘জুমআর দিন সূর্য উদয় হওয়ার পর (দুনিয়ায়) মানুষ এবং জিন ব্যতিত প্রত্যেক প্রাণীই কেয়ামতের ভয়ে আতংকিত থাকে।
জুমআর দিনে এমন একটি বরকতময় সময় আছে, যাতে মুসলিম বান্দা নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে যা প্রার্থনা করবে, আল্লাহ্ তাকে তা দান করবেন বলেছেন প্রিয়নবি।
জুমআর দিনের বরকতময় বিশেষ সময়ের কথা সম্পর্কে কা’ব বিন মালিক এ হাদিসের রাবি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটি কি প্রত্যেক বছরে হয়ে থাকে? হজরত আবু হুরায়রা বললেন, বরং প্রত্যেক জুমআতেই তা রয়েছে। অতঃপর কা’ব তাওরাত (কিতাব) খুলে পাঠ করলেন এবং বললেন, আল্লাহর রাসুল সত্য বলেছেন।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, অতঃপর আমি হজরত আব্দুল্লাহ বিন সালামের সাথে সাক্ষাৎ করে কা’বের সঙ্গে আমার বৈঠকের কথা জানালাম। তিনি বললেন, আমি সেই সময়টি সম্পর্কেও অবগত আছি।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তাকে বললাম, আমাকে সেই সময়টি সম্পর্কে সংবাদ দিন। তিনি বললেন, এটি হচ্ছে জুমআর দিনের শেষ মুহূর্ত।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এটি কি করে সম্ভব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো বলেছেন, ‘মুসলিম বান্দা তখন নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ্ তাকে তা দান করবেন।
আর জুমআর দিনের শেষ মুহূর্ত এমন একটি সময় যাতে নামাজ পড়া বৈধ নয় (আসর নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামায পড়া নিষিদ্ধ)। সুতরাং উহা তো নামাজের সময় নয়।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম তখন বললেন-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেন নি, যে ব্যক্তি কোনো মজলিসে বসে নামাজের অপেক্ষায় থাকে, সে ব্যক্তি নামাজ পড়া (নামাজের ওয়াক্ত হওয়া) পর্যন্ত নামাজেই মশগুল থাকে?
মুসনাদে আহমদে রয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু’র হাদিসটি এই শব্দে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো- কি কারণে জুমআর দিনকে এই নামে নাম করণ করা হয়েছে?
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
‘জুমআর দিনে তোমাদের পিতা আদমকে তৈরির জন্য সংগৃহিত মাটিকে মানবাকৃতি প্রদান করা হয়েছে; এ দিনেই সিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে; এ দিনেই হাশর হবে এবং কাফেরদেরকে পাকড়াও করা হবে। এই দিনের শেষাংশে তিনটি মুহূর্ত রয়েছে। তার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে তাতে যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করবে তার দোয়া কবুল করা হবে।
উল্লেখিত হাদিসের আলোচনায় এ কথা সুস্পষ্ট যে, জুমআর দিন ইবাদতের জন্য অনন্য মর্যাদার দিন। যা উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য বিশেষ নেয়ামত ও উপহার।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ গুরুত্বপূর্ণ ‘জুমআর দিন’ ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা লাভ এবং তাঁর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর