হজের অপেক্ষার দিনগুলো যেভাবে কাটছে হজযাত্রীদের
আগামী ৩১ আগস্ট শরু হবে হজ। তার আগেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ২০ লাখ মুসলিম হজ সম্পাদনে পবিত্র নগরী মক্কায় সমবেত হবেন। আবার যারা ইতোমধ্যে পবিত্র নগরী মক্কায় পৌছে গেছেন, তারা হজ সম্পাদনের জন্য ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন।
আগামী ৩০ আগস্ট সকাল থেকেই হজ পালনকারীরা তাবুর নগরী মিনায় উপস্থিত হবেন। সেখানে তারা জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা এবং ৩১ তারিখ ফজর নামাজ আদায় করবেন।
অতঃপর হজের উদ্দেশ্যে গোসল করে জোহরের নামাজের আগেই জাবালে রহমতের পাদদেশে আরাফাতের বিশাল ময়দানে এসে উপস্থিত হবেন। চোখের অশ্রুতে মরুভূমির তপ্ত বালুকে সিক্ত করে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করবেন।
অধিকাংশ হাজি পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থান করছেন। এ পবিত্র নগরীতে অবস্থানকালীন সময়টি কাজে লাগোনো প্রত্যেক হজ পালনেচ্ছুদের জন্য জরুরি। কেননা তাদের জন্য মসজিদে হারামের এ দিনগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তাইতো হজের অপেক্ষমান হজ পালনেচ্ছুগণ মসজিদে হারামের আঙ্গিনায় প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন।
কেউ প্রচণ্ড গরমে রোদে পুড়ে তাওয়াফ করছেন, কেউবা মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায় করছেন। কেউবা মুলতাযেমে বুক বুক লাগিয়ে গোনাহ মাফে ব্যস্ত রয়েছেন। কেউবা বাইতুল্লাহর গভীর প্রেমে কালো গিলাফের দিকে তাকিয়ে আছেন। এ যেন বান্দার সঙ্গে আল্লাহর অনন্ত প্রেমের এক অপূর্ব নিদর্শন।
লক্ষ্য একটাই ‘আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা’। জীবনে গোনাহ থেকে মুক্তি লাভ করে নিষ্পাপ হয়ে যাওয়া। আল্লাহ তাআলা দিদার লাভ করা। এ কারণেই হজের অপেক্ষার সময়গুলোতে নিজেদেরকে মসজিদে হারামের আঙ্গিনায় ইবাদত বন্দেগিতে নিয়োজিত রেখেছেন আল্লাহর মেহমনারা।
পবিত্র কাবা শরিফকে বেস্টনকারী মসজিদে হারামে আল্লাহর নৈকট্য লাভে একনিষ্ঠভাবে ইবাদতে মগ্ন থাকাই হজ পালনকারীদের জন্য মোক্ষম সময় যাচ্ছে এখন।
যেখানে অবস্থান ও দৃষ্টি বিনিময়েও আল্লাহ তাআলা দান করেন অসংখ্য সাওয়াব। যেখানে অনবরত রহমত নাজিল হতে থাকে।
এমনিতে মসজিদে হারামের ১ রাকাআত নামাজ আদায় করলে ১ লাখ রাকাআত নামাজ আদায়ের সাওয়াব পাওয়ার যায়।
আবার পবিত্র কাবা শরিফের কালো গিলাফের দিকে ভালবাসার দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলেও আল্লাহ তাআলা রহমত দান করেন।
তাছাড়া রয়েছে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ। মাকামে ইবরাহিমে নামাজ। জামজম পানি পানসহ মসজিদে হারামের নফল নামাজ আদায়ের অসংখ্য রহমত ও সাওয়াবের হাত ছানি।
বাইতুল্লাহ প্রাঙ্গনে ইবাদতের ফজিলত বর্ণনায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে সুসংবাদ ঘোষণা করেছেন, ‘আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) একটি নামাজ অন্য মসজিদের হাজার নামাজ থেকেও উত্তম। তবে মসজিদে হারাম ছাড়া। কেননা মসজিদে হারামের একটি নামাজ অন্য মসজিদের এক লাখ নামাজের চেয়ে উত্তম। (মুসনাদে আহমদ)
প্রিয়নবি ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন বাইতুল্লাহ ১২০টি রহমত নাজিল করেন। তন্মধ্যে ৬০টি রহমত কাবা শরিফ তাওয়াফকারীদের জন্য; আর ২০টি সেখানে নামাজ আদায় কারীর জন্য ৪০টি রহমত। আর ২০টি রহমত আল্লাহর ওই সব বান্দাদের জন্য যারা পবিত্র কাবা শরিফ দেখতে থাকে।’
সুতরাং পবিত্র নগরী মক্কায় হজের অপেক্ষায় অবস্থানকালীন সময়ে অযথা সময় ব্যয় না করে মসজিদে হারামে অবস্থান করে নামাজ, বাইতুল্লাহর জিয়ারত, তাওয়াফ ও কুরআন তেলাওয়াতসহ ইবাদত-বন্দেগিতে সময় অতিবাহিত করার সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানো হজপালনেচ্ছু প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত।
আল্লাহ তাআলা হজে গমনকারী মুসলিম উম্মাহকে অপেক্ষার সময়গুলো যথাযথ কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। সবাইকে হজে মাবরুর পালনের প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম