তাকওয়া অবলম্বনে করণীয় ও তার প্রতিদান
আল্লাহর তাআলার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত হওয়ার এবং চিরস্থায়ী আবাসস্থল জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার জন্য অপরিহর্য বিষয় হলো ‘তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়’ অর্জন করা। ‘তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়’ ছাড়া কোনো মানুষই সফলতা অর্জন করতে পারবে না।
তাকওয়া অর্জনকারীদের প্রতিদান সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ তাআলা যে সুসংবাদ ঘোষণা করেন; তাহলো-
>>‘এটা ঐ জান্নাত; যার অধিকারী করব আমার বান্দাদের মধ্যে যারা তাকওয়াবান বা পরহেযগার।’ (সুরা মারিয়াম : আয়াত ৬৩)
>> `নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা পরহেযগার এবং যারা সৎকর্ম করে। (সুরা নহল : আয়াত ১২৮)
>> আল্লাহকে ভয়কারী তাকওয়াবানরা থাকবে জান্নাতে ও নির্ঝরিণীতে। যোগ্য আসনে, সর্বাধিপতি সম্রাটের (আল্লাহর) সান্নিধ্যে।’ (সুরা আল-ক্বামার : আয়াত ৫৪-৫৫)
>> ‘তাকওয়াবানদের জন্যে প্রতিশ্রুত জান্নাতের অবস্থা এই যে, তার নিম্নে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। তার ফলসমূহ চিরস্থায়ী এবং ছায়াও। এটা তাদের প্রতিদান, যারা সাবধান হয়েছে এবং কাফেরদের প্রতিফল অগ্নি।’ (সুরা রা'দ : আয়াত ৩৫)
তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়ই মানুষকে সফলতা দানের অন্যতম মাধ্যম। দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় বিপদাপদ থেকেও তাকওয়ার মাধ্যমেই হেফাজত থাকে।
আর আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে দুনিয়ার জীবনে যাবতীয় অন্যায়, অপরাধ, মন্দ কথা-কাজ, চিন্তা-চেতনাসহ সব ধরনের প্রতারণামূলক কাজ থেকে নিজেকে হেফাজত করার নামই হলো তাকওয়া বা পরহেজগারী।
এ তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্যই আল্লাহ তাআলা জান্নাতের খোশখবর জানিয়েছেন। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকওয়া অবলম্বনকারীদের ব্যাপারে বলেছেন- ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে; সে-ই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত।’
তাকওয়া অবলম্বনে করণীয়
আল্লাহর ভয় বা তাকওয়ার সম্পর্কে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর জিজ্ঞাসা এবং উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহুর জবাব মুসলিম উম্মাহর জন্য হতে পারে শ্রেষ্ঠ উপদেশ।
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তাকওয়া কি? তিনি বললেন, হে ওমর!-
‘যে পাহাড়ের দুই ধারে কাঁটাযুক্ত বন আর মাঝখানে সরু রাস্তা। সেখানে কিভাবে চলতে হবে? তিনি (হজরত ওমর) বললেন, শরীরে যেন কাঁটা না বিঁধে; (এমন) সতর্কতার সঙ্গে পথ চলতে হবে।’ হজরত উবাই ইবনে কা’ব বললেন, ‘এটাই তাকওয়া।’
বর্তমান সময়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সতর্কতার সঙ্গে চলা অনেক কঠিন কাজ। যেখানে জুলুম-অত্যাচার, পাপাচার-অনাচার-বেহায়াপনা, সুদ-ঘুষ-জালিয়তি, শিকর-কুফর ও বিদাআ’তের মতো কাজ অহরহ হচ্ছে।
সুতরাং বর্তমান সময়ের এ সব অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজ থেকে বেঁচে থাকতে কুরআন ও হাদিসের যথাযথ আমল করা জরুরি। তবেই মানুষ নিজেকে তাকওয়ার অধিকারী হিসেবে তৈরি করতে পারবে। আর বিনিময়ে লাভ করবে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে পাবে জান্নাত।
পরিশেষে…
মানব জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। তাকওয়া অর্জনে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছোট্ট দুটি হাদিসের ওপর আমল জরুরি। হাদিসে তিনি তাকওয়ার গুরুত্ব কত বেশি; তা তুলে ধরেছেন। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তোমাদের বংশ ও আভিজাত্য সম্পর্কে জানতে চাইবেন না। বরং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি ভয় করে; সেই হবে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানের অধিকারী।’
অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপন করবে। কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসবে। গঠন করবে পরকালের জবাবদিহিমূলক জীবন।
অন্য হাদিসে এসেছে-
‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের মুখাকৃতি ও সম্পদের দিকে দৃষ্টি দেন না বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কাজ কর্ম দেখেন।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নফসের খাহেশাত থেকে মুক্ত রাখুন। দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায় ও অনাচারসহ নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ থেকে হেফাজত করুন।
দুনিয়ার প্রতিটি কর্মের জন্য পরকালের জবাবদিহিতর মানসিকতা তৈরির মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন এবং পরকালের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর