ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

লাইলাতুল বরাতের ফজিলত ও কিছু কথা

প্রকাশিত: ০৩:৩৫ পিএম, ০২ জুন ২০১৫

মুসলিম উম্মাহর ঐতিহ্য হচ্ছে সকল প্রকার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানাদি পালনে সবাই একনিষ্ঠ। সব ভেদাভেদ ভুলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সবাই এক কাতারে। কারো মধ্যে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে না। এটা আল্লাহ প্রদত্ত এক ঐক্যের বন্ধন। শ্রেষ্ঠ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ধর্মীয় ইবাদত-বন্দেগী তথা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে লাইলাতুল বরাত (শবে বরাত) অন্যতম।

মুসলিম সমাজে শাবান মাস ও লাইলাতুল বরাত নিয়ে যদিও বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি অবস্থা তথাপিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস অনুযায়ী লাইলাতুল বারাতের গুরুত্ব অত্যাধিক।

এই রজনীতে ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাপারে অসংখ্য দলীল প্রমাণ রয়েছে। আমরা কোনো প্রকার বাড়াবাড়িও করি না এবং অবহেলায় ছাড়াছাড়িও ভালোভাবে দেখি না।

বাস্তব কথা হলো- লাইলাতুল বরাতে অনুষ্ঠান তথা ইবাদত করা যাবে না যেমন ছাড়াছাড়ি; তেমনি লাইলাতুল বারাতের ইবাদত করতেই হবে, না করলে নয় তেমন বাড়াবাড়ি। ইসলাম ভারসাম্যতার দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থা বিধায় আমরা সহিহ্ হাদিস মোতাবেক সঠিকভাবে লাইলাতুল বারাতের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগীতে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলে ব্রতী হব ইনশাআল্লাহ্।

লাইলাতুল বারাতের ফজিলত
১৫ শাবানের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে আল্লাহর প্রিয় হাবীব রাসুল (সা.) এর অসংখ্য হাদীস রয়েছে। তার থেকে কয়েকটি-

হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআ’লা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’

সতর্ক বাণী :
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, এ রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বার উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকী কাজ কর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে। আল্লাহ আমাদেরকে এই শ্রেণির মানুষ থেকে রক্ষা করুন।

যখন কোনো বিশেষ সময়ের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের ঘোষণা হয় তখন তার অর্থই এই হয় যে, এই সময়ে এমন সব নেক আমলের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে যাতে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাতের উপযুক্ত হওয়া যায় এবং মানুষ আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাত হতে বঞ্চিত না হয়।

এই রাতের আমল :
হাদিস শরীফের নির্দেশনা অনুযায়ী এই রাতে কি কি আমল করা যায়, এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে :

হযরত ইবনুল হারিস (র.) থেকে বর্ণিত- হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একবার রাসুল (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধরণা হল তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসুলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) ভাল জানেন। রাসুল (সা.) তখন ইরশাদ করেন-

এটা হলো অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (শুয়াবুল ইমান, বাইহাকী)

এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে-

১.   দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে।
২.    কোরআন তেলাওয়াত করা
৩.   দরুদ শরীফ পড়া
৪.   ইসতেগফার পড়া
৫.   দোয়া করা
৬.   রাতের কিছু সময় ঘুমানো (এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ফলে ক্লান্তিতে ফজরের নামাজ জামায়াতের সাথে পড়া থেকে বঞ্চিত হতে হয়)
৭.    পরদিন রোযা রাখা

সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে-
হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, “পনের শাবানের রাতে (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সুর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। আছে কি কোনো রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা ডাকতে থাকেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)

তাছাড়া প্রতি আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ তথা ইয়ামে বীজের রোযা রাখার বিষয়টি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আর শাবান মাসের এ দিনটি আইয়ামে বীজের দিনের মধ্যে অন্তভূক্ত। রাসুল (সা.) আইয়ামে বীজের রোযা রাখতেন।

সতর্ক বাণী :
তবে মনে রাখতে হবে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওযীফার বই-পুস্তকে নামাজের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকায়াত হতে হবে, প্রতি রাকায়াতে এই সুরা এত বার পড়তে হবে; এগুলো সঠিক নয়, হাদিস শরীফে এসব নেই।

সুতরাং আমরা সবাই উপরোক্ত আমলগুলো পালন করে লাইলাতুল বরাতের ফজিলত, বরকত ও মাগফেরাত লাভ করতে সচেষ্ট হবো। সকল প্রকার রুসুম রেওয়াজ তথা, হালুয়া-রুটি, খিচুরি-শিরনী, পথ-ঘাট, মসজিদ, বাড়িঘর সাজানো ও আতশবাজি থেকে বিরত থাকব। তবে লাইলাতুল বরাতের উপলক্ষ মনে না করে মিসকিনদের মাঝে হালুয়া রুটি বিতরণ করা যাবে।

তাছাড়া এই দোআাতো রমজানের পূর্ব পর্যন্ত পড়তে রাসুল (সা.) এর বিশেষ নির্দেশ আছে-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারাকলানা-ফি- রাজাবা ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা- রামাদান।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য রজব ও শা’বান মাসে বরকত দাও এবং আমাদেরকে রমযান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।

অথ্যাৎ আমাদের নেক হায়াত দান করো, যাতে আমরা রমযান মাস পেয়ে রমযানের বরকত লাভ করতে পারি।

আল্লাহ আমাদের উক্ত আমলগুলো ঠিক ঠিকভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

তথ্যসূত্র : সুনানে ইবজে মাজাহ, বাইহাকী ফি শুয়াবুল ইমান।

সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজীম ওয়া বিহামদিহি আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।

জাগোনিউজ২৪ডটকমের সঙ্গে থাকুন। গুরুত্বপূর্ণ দোয়া শিখে আমল করুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করুন।

# আজ পবিত্র শবেবরাত

আরএস/আরআইপি